বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রাদির প্রদর্শনীতে বিশেষ দৃষ্টি কাড়ছে এ রোবট প্রযুক্তি। ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নেভিসহ সরকারের অনেক সংস্থা ও কারখানা মালিকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন চীনের তৈরি এ রোবট নিয়ে।
শুক্রবার (৬ এপ্রিল) একদল দমকলকর্মী এ প্রযুক্তি দেখছিলেন। তারা জানান, অনেক জায়গায় টু হুইলারের ফায়ার মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এটা দেখে মনে হচ্ছে, যেখানে টু হুইলার দিয়েও যাওয়া যায় না সেখানে এই রোবট নিয়ে যাওয়া যাবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, এটা ব্যবহার করে কারখানার আগুন নেভানো সহজ হবে। কিন্তু পুরান ঢাকার মতো জটিল জায়গাগুলোতে এটা কতটা কাজ করবে তা দেখার বিষয়।
নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে ফায়ার সার্ভিস আগ্রহী। এখন এর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। জানান ডিজি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও জানান, সম্প্রতি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রোন আনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪টি ড্রোন যুক্ত হচ্ছে অধিদপ্তরে। আগুনের ভয়াবহতা জানা এবং কোথায় আগুন মোড় নিচ্ছে তা দেখতে এ ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশে ফায়ার রোবট আনতে চাচ্ছেন জেড এম ইন্ট্যারন্যাশনাল-এর সিইও জাকির উদ্দিন আহমদ। চীনের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের তৈরি এ রোবট যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কাজ করতে সক্ষম বলে জানান তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোথাও যখন ব্যাপক আগুন তখন কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। রোবট কাছাকাছি পৌঁছে আগুন নেভাতে সক্ষম হবে। যেখানে মানুষ যেতে পারবে না সেখানে পানি ছিটিয়ে ফোম স্প্রে করবে এ রোবট। ফোমকে ডুয়েল পাইপ দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবে।
‘আগুন নেভাতে গিয়ে যদি মানুষই মারা যায় তাহলেতো আগুন নেভানোর মানে হয় না। এটা হলো সেই প্রযুক্তি যা মানুষ আগুনের কাছে না গিয়েও দ্রুত ও কার্যকরেভাবে নেভাতে পারবে। ’
পাকা বা লোহার যেকোনো সিঁড়ি বেয়ে যেতে সক্ষম এই রোবট। রোবটটির আরেকটি মজার বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, পাহারাদারের কাজটি করতে পারে এ রোবট। একটি বিশাল কারখানা বা বিমানবন্দরের চারপাশে নির্ধারিত পথে ঘুরতে থাকবে। রুট অনুযায়ী সে চলবে। আগুন দেখার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেবে। ছবি তুলে পাঠাবে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সেই আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবে এ রোবট।
এছাড়া পুরান ঢাকাসহ ঢাকার ভেতরের অনেক কারখানা, বহুতল ভবনসহ আবাসিক এলাকার অনেক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের আশংকা থাকে। এমন পরিস্থিতে তাৎক্ষণিক গিয়ে পৌঁছালে অনেক ক্ষেত্রে আগুন নেভাতে দেরি হয়। এমন ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহারের চিন্তা করছে ফায়ার সার্ভিস।
জাকির উদ্দিন আহমদ জানান, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড নেভিসহ অনেক সংস্থা ও কারখানা মালিকদের সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশে এখনও এ রোবটটি আসেনি। চাহিদা অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন করে তৈরি করা রোবট সরবরাহ করতে পারবে চীনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
রোবট নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দু’জন কর্মী রোবটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, রিমোট দিয়ে এক কিলোমিটার পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। দেখতে ছোট এবং পরিচালনা করা সহজ। একটি গাড়ির চাকার চেয়ে এটি দেখতে ছোট আকারের।
প্রদর্শনী স্টলে কিছু ছবি ও ভিডিও দেখনো হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তেলের ডিপোতে আগুন লাগার পর রোবট কাছে পৌঁছে পানি ছিটাচ্ছে। ওয়ারহাউসে আগুন নেভাতে ছুটে যাচ্ছে একটি ফার্নিচার ফ্যাক্টটরিতে ঢুকে আগুন নেভাচ্ছে। কেমিক্যাল প্ল্যান্টে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ করছে। একটি পেইন্ট ফ্যাক্টরিতে ঢুকে আগুন নেভাচ্ছে। এমনকি একটি গাড়ির চাকার চেয়ে দেখতে এটি ক্ষুদ্র।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
এসএ/এএ