ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইনে ভুয়া অ্যাকাউন্টের শিকার নারী ১৪.২৯, পুরুষ ১২.৭৮

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
অনলাইনে ভুয়া অ্যাকাউন্টের শিকার নারী ১৪.২৯, পুরুষ ১২.৭৮ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করছেন বক্তারা-ছবি-ডি এইচ বাদল

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ পুরুষ। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিং বা তথ্য চুরির শিকার নারীর চেয়ে পুরুষের অনুপাত দ্বিগুণেরও বেশি। এক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও নারী আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ তথ্য জানিয়েছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
 
রোববার (২০ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ।


 
পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট সোশ্যাল বোকারস ডটকমের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের বিশাল অংশ তরুণ, যাদের বয়স ১৮-২৪ বছর, ৭৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী।
 
গত দুই বছর ধরে বালিঘড়ি মডেল কাঠামোর ভিত্তিতে ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পর্যালোচনা এবং তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে ১৩৩ জনকে নয়টি প্রশ্ন করা হয়।
 
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী।  
 
ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা দেখা গেছে, জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ পুরুষ।
 
অপরাধের ধরনগুলোর মধ্যে অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা।  
 
অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী-পুরুষের এই অনুপাত অনেকটাই বিপ্রতীপ। এই অপরাধে আক্রান্ত নারীর হার ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ হলেও পুরুষের বেলায় তা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অনলাইনে হুমকিমূলক বার্তা প্রাপ্তির হার নারী ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পুরুষ ভুক্তভোগী ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
 
গবেষণায় দেখানো হয়, হয়রানির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের ৩০ শতাংশই জানে না কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। বাকিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না ভেবে অভিযোগ করে না।  
 
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নালিশ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর ২৩ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ে চেপে যান। অন্যদিকে সামাজিক ভাবমর্যাদা রক্ষায় পুরো বিষয়টি গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকে ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী।
 
ফলাফলে বলা হয়, অভিযোগ করেও আশানুরূপ ফল পাননি ৫৪ শতাংশ ভুক্তভোগী। অবশ্য ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী ফল পেলেও ৩৯ শতাংশই এ বিষয়ে নীরবতা পালন করেছেন। আর ৩৭ দশমিক ৬১ শতাংশ ভুক্তভোগী প্রতিকারের জন্য প্রণীত তথ্য-প্রযুক্তি আইন সম্পর্কেই জানেন না।
 
গবেষণায় দেখানো হয়, সাইবার অপরাধের শিকার ৪৪ শতাংশই মনে করেন অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া গেলে এই নীরব ঘাতকের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে। বাকিদের মধ্যে ২৯ শতাংশ আইনের প্রয়োগ বাড়ানো এবং ২৭ শতাংশ সচেতনতা গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
 
সাইবার অপরাধ থেকে মুক্ত হতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে ফাউন্ডেশন।
 
ফাউন্ডেশন মনে করে, সচেতনতার মাধ্যমে কমপক্ষে অর্ধেক সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সাইবার সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।  

ফাউন্ডেশন সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরির উপর জোর দেয়।
 
আলোচনা অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক একেএম নজরুল হায়দার বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে যত প্রবেশ করবো, ততই ঝুঁকি বাড়বে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।   
  
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক আবুল মনসুর মোহাম্মদ সরাফ উদ্দিন বলেন, স্কুলের ছাত্রীদের অপরাধ বিষয়ক সচেতনতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার।
 
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (আইএসপিএবি) যুগ্ম-সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিবন্ধিত আইএসপিগুলো সাইবার অপরাধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অনিবন্ধিতগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে।
 
ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ হাসান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
এমআইএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।