নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। অনিয়ম দূর করতে গত বছরের ডিসেম্বরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর চিঠি দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকমকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বড় প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের আইন লঙ্ঘনকে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি বুড়ো আঙুল প্রদর্শন বলে মনে করছে সরকার।
সূত্র জানায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স না নিয়েই বছরের পর বছর কার্যক্রম চালাচ্ছিল গ্রামীণ টেলিকম। নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স নিতে বলা হয়। কিন্তু মাসের পর মাস গেলেও তা করেনি গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। এরপর চূড়ান্ত চিঠি পাঠায় অধিদফতর। এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে লাইসেন্স নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু লঙ্ঘন করা বাকি ১২ ধারা সম্পর্কে কোনো জবাব নেই গ্রামীণ টেলিকমের।
২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর আরও ১২টি বিধির লঙ্ঘন দেখতে পায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।
লঙ্ঘিত ১২ বিধি হলো:
১. প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়োগবিধি থাকলেও তা মহাপরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
২. আইনের বিধান মোতাবেক শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি।
৩. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।
৪. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের জন্য সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি।
৫. প্রতিষ্ঠানের বিধি মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৬. নির্ধারিত ফরম-৩৪ ছক অনুযায়ী শ্রমিক/কর্মচারীদের দৈনিক হাজিরা ও অধিকাল কাজের রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৭. নির্ধারিত ফরম-৩৭ ছক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে কর্মচারীদের কাজের সময়সূচির নোটিশ পরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
৮. শ্রমিক/কর্মচারীদের আইনের বিধান অনুযায়ী ছুটি নগদায়নের সুবিধা দেওয়া হয়নি।
৯. বিধি অনুযায়ী কর্মচারীদের মজুরিসহ প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন বাৎসরিক ছুটি দেওয়া হয় না।
১০. বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ফরম-৯ ছক অনুযায়ী ছুটির রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।
১১. অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং নিট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ দুটি তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন-২০০৬ অনুযায়ী গঠিত তহবিলে নির্দিষ্ট হারে (৮:১০:১০) জমা করা হয় না।
১২. কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন দেওয়া হলেও অফিস আদেশের মাধ্যমে শুধুমাত্র সার্ভিস বিভাগে যারা কর্মরত আছেন তাদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনের পরিবর্তে একদিন করা হয়েছে।
এরপর বিধিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসানসহ পরিচালক এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, নুরজাহান বেগম, শাহজাহান, পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম ও সিনিয়র ম্যানেজার ফারজানা রফিকে নোটিশ দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পুরানা পল্টন কার্যালয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক (সাধারণ) আবুল হাজ্জাত সোহাগ।
নোটিশে বলা হয়, “আপনাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে ১৩টি বিধির লঙ্ঘন দেখা যায়। লঙ্ঘনসমূহ নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করে দফতরকে অবহিত করার জন্য বলা হলো। ব্যর্থতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ”
নোটিশপ্রাপ্তির এতদিন পরেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি গ্রামীণ টেলিকম। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
তবে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (সাধারণ) আবুল হাজ্জাত সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, কিছুটা অগ্রগতি আছে। গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স নিয়েছে। অন্যান্য ধারাও মানবে বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি তারা তাদের কথা কত দ্রুত বাস্তবায়ন করে। শ্রম আইনের ধারাগুলো না মানলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ফোনের ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ