ঢাকা: কিউবির লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। একই সঙ্গে এই প্রতারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মতামত প্রদানের পাশাপাশি বাংলানিউজের পাঠক ও কিউবির গ্রাহকরা সংবাদটিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটে দুই সহস্রাধিক বার শেয়ার করেছেন। আর সংবাদটি পড়েছেন ৫০ হাজারের বেশি পাঠক।
কিউবির দীর্ঘদিনের গ্রাহক মাহমুদ তার মতামতে বলেছেন, কিউবি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ভাল সেবার জন্য প্রতিদিন কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে কোন লাভ হয় না। এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সবার ত্যাগ করা উচিত। আমরা সাত বন্ধু ব্যবহার করতাম। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে এখন ছেড়ে দিয়েছি। কিউবিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এদেরকে গণধোলাই দেওয়া দরকার। হাজার হাজার টাকা নস্ট করেছে এরা।
আরেক গ্রাহক তানভীর আহমেদ এই মতামতের উত্তরে বলেছেন, কিউবিকে দোষ দেয়ার চেয়ে আমাদের নিজেদেরকে দোষ দেয়া ভাল নয় কি? আমরাই ভুল করে কিউবির মত প্রতারক এক কোম্পানির পাল্লায় পড়েছি।
কিউবি’র ডিজিটাল প্রতারণার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজিব হাসান বলেছেন, এসব প্রতারণার শেষ কোথায়? এখন সরকার কোথায়? এই যে, গ্রাহকগুলো প্রতারণার শিকার হচ্ছে, তারাই বা এর সমাধান খুজবে কার কাছে? মেরে হাত-পা ভেঙ্গে দিলে তখন সরকারের টনক নড়ে। আইন নিজের হাতে নিলেন কেন? তখন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? তাদের প্রতারণার কারণে আনেক সাধারণ গ্রাহক যে প্রতারিত হচ্ছে এখন আর মহাভারত অশুদ্ধ হয় না? তবে দেশকে ইন্টারনেট ব্যবহারে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিতে এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারণা বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই। এগুলো সাধারণ গ্রহকদের কাজ না, এসবের বিরুদ্ধে সরকারকেই তাদের পদক্ষেপ নিতে হবে অতিদ্রুত।
এরকমই ৫ শতাধিক মতামত পড়েছে কিউবি সম্পর্কিত ওই সংবাদটিকে। তবে মতামত প্রদানের শর্তাবলী ভঙ্গ করায় অনেক মতামতই প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মতামত কোন সংশোধনী ছাড়াই নিচে প্রকাশ করা হল।
জিএম মনোয়ার
কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বিরক্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোন সমস্যা নাই। কিউবি নিত্যই স্মার্ট হচ্ছে। বাংলানিউজ এর এমন একটি নিউজ শেয়ার করে আমি ফেসবুকে ব্লক হইছি । আর একটা কথা বাংলানিউজে কিউবি নিয়া অনেক রিপোর্ট দেখলেও বাংলালায়ন নিয়া কোনও রিপোটর্ নাই কেন?
তানভীর আহমেদ
কিউবির বিরুদ্ধে কোন নিউজ ফেসবুকে আসলে কিউবি সে ইউজারকে ব্লক করে দেয়। উত্তর দেওয়ার সৎ সাহস তাদের নেই। বাংলালায়ন নিয়েও বাংলানিউজের রিপোর্ট চাই। বাংলালায়নের ব্যবহারকারী অনেকেই সমস্যার সম্মূখীন হয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছি।
তানভীর সাজেদীন
বেশ কয়েক মাস আগে আমিও ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে ওদের একটা মডেম কিনেছিলাম তখন ওরা আমাকে বলে যে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু পেরিয়ে গেছে ৪ মাস, কিউবি থেকে কোন ম্যাসেজ আসা তো দূরের কথা ওদের হেল্পলাইন এ ফোন দিলে বলে সমস্যা নেই আমরা খুব দ্রুত ব্যাবস্থা নিচ্ছি। ওই পর্যন্তই শেষ। ধান্দাবাজির একটা সীমা থাকে কিন্তু ওদের ধান্দাবাজি যে চলছেই, দুর্ভাগা মোরা প্রতারিত গ্রাহকরা। ১০০০ টাকা জলে গেছে,কিন্তু জল থেকে টাকা কিভাবে জাল মেরে তুলে আনতে হয় তা বিশেষ করে আমার ভালো জানা আছে। নৈতিকভাবে এমন করা উচিত না হলেও (কিউবি এর ক্ষেত্রে) যতদিন বেঁচে থাকব, আমার সরল বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য অনৈতিক আচরণ করা উপায় নেই। প্রতারিত গ্রাহকদের কথা শোনার যে কেউ নেই…
আকাশ
এই ভন্ডামি আমাদের বাঙ্গালীদের সাথেই সম্ভব। কারন একটাই সেটা হল আমরা নিজেরাই ভন্ড…
শিশির
“কিউবি হইতাছে ছাল নাই, চামড়া নাই, কুত্তার নাম বাঘা”। খাওয়ার ক্ষমতা ১০০ গ্রাম, কিন্তু এক কেজি খাইয়া বইসা রইছে। পেট ফাটনের উপক্রম কিন্তু আরো খাইতে চায়। পেট ভরে তো চোখ ভরে না। আমি প্রথম কিউবি’র আনলিমিটেড লাইন নিয়েছিলাম। মাসে ভ্যাটসহ ১৪৩৮ টাকা। ৫১২ কেবিপিএস। ওমা চালিয়ে দেখি ভোর ফজরের আযানের সময় স্পিড পাওয়া যায়, বাকি সারাদিন চাকা ঘোরে তো ঘোরে না। এরপর আবার কিছুদিন চলার পরে মোবাইলে মেসেজ আসল ‘ফেয়ার ইউজেস পলিসি’তে পৌছতে আপনার আর ১০ জিবি বাকি আছে। ওমা ! এটা আবার কী? তার ৫-৭ দিন পরই আর কোন পেজ ওপেন হতে চায় না। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে বলে আপনার ডাউনলোড ৩০জিবি পার হয়ে গেছে, আপনি ফেয়ার ইউজেস পলিসিতে চলছেন। প্রশ্ন করলাম- আনলিমিটেড কানেকশনে ৩০জিবি আবার কী? উত্তর দিল- সরি স্যার, আনলিমিটেডেরও লিমিট আছে। এটা কোম্পানির পলিসি। মাস গেলে ছয়তলার ছাদ থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে মডেমটাকে নিচে ফেলে দিলাম। এখন ব্রডব্যান্ড চালাচ্ছি। একটু স্লো হলেও কিউবি’র মত বাটপার না।
রানা
আমি মগবাজার থেকে কিউবি কিনেছিলাম। মাত্র ২ মাস ভাল চলছিল। তারপর হঠাৎ একদিন সন্ধ্যা বেলা থেকে লাইন আপ-ডাউন করতে থাকলো। দুই দিন পর পরই কিউবির ভোগান্তির কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলাম। অনেকক্ষণ ওয়েটিং-এ রেখে আমার মোবাইলের বিলের তেস মেরেছে। কিন্তু ফল… কিছুই হয়নি। নিকটস্থ বুথে গেলে কোন সমাধান হয়নি। প্রায় ১ মাস পর কিউবি থেকে ফোন দিল আপনার এলাকায় সার্ভিস উন্নতি করা হয়েছে। কিন্তু ততদিনে আমি কিউবির পরিবর্তে বাংলালায়ন ইউজ করছি। এখন পর্যন্ত ভালো কাজ করছে। সুতরাং কিউবি থেকে দূরে থাকুন।
নিরুদ্দেষ পথিক
আমি কিউবি ব্যবহার করছি এ বছরের জানুয়ারী থেকে, আর এ পর্যন্ত আমার সংগ্রহে কিউবির মডেম সংখ্যা ৭টি। কারণ কিউবি প্রত্যেক মাসেই তাদের মডেম কিনলে সংযোগ ফ্রি অফারটা দিয়ে থাকে। আর এতে ১০০০ টাকায় মডেম কিনলে আনলিমিটেড অফার তো প্রায় ফ্রিই। আমি তাই মডেমটি কিনি এবং ফেয়ার ইউসেজ পলিসির কারণে আমার সংযোগ বন্ধের আগ পর্যন্ত সেই মডেম দিয়ে আমি ধুমছে ডাউনলোড করি। যখনই আমার সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখনই আমি নতুন একটা সংযোগ কিনি। এভাবে আমার ইন্টারনেট খরচ প্রায় ৫০০ টাকা বেচে চায়। হায় রে কিউবি, তোরা মনে করস তোরাই বড় বাটপার, কিন্তু বারবার ভুলে যাস যে বাপের উপরেও বাপ থাকে।
বাপ্পী
শুধু, কিউবি’র কথা বলে কি লাভ? বাংলালায়ন-এরও একই অবস্থা। এরা সব জোট বেধে গ্রাহকদের ঠকাতে নেমেছে।
সম্পাদকীয় নোট
পাঠকদের এইসব মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে বাংলানিউজ।
তবে এখানে উল্লেখ্য কিউবির গ্রাহক সেবার চিত্র তুলে ধরে খবর প্রকাশের পর অনেক পাঠকই আরও দু-একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর সেবার মান নিয়ে রিপোর্টের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই কিউবির মত অন্যান্য ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খবর প্রকাশ করবে বাংলানিউজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১১