ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

আইসিটি: ঘটনার ঘনঘটার বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১
আইসিটি: ঘটনার ঘনঘটার বছর

[আইসিটি। তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত নামান্তর।

তবে নামে যতটা সংক্ষিপ্ত, কাজের ব্যাপকতায় আছে ভিন্নরূপ। পুরো বিশ্বের চেহরাই বদলে দিয়েছে আইসিটি। ঘর থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক অঙ্গনের সব কিছুতেই আছে আইসিটির সরব উপস্থিতি।

২০১১ সালে বিশ্বপ্রযুক্তির এ খাতটি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। পেয়েছে নিত্যনতুন চেহারা আর অবয়ব। হারিয়েছেও অনেক প্রযুক্তি-গুণীকে। তবে প্রযুক্তির জয়যাত্রা থামেনি এতটুকুও। বরং পেয়েছে আরও বেশি গতি, হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য আর সুস্পষ্ট। এ নিয়ে ২০১১ সালের সালতামামি প্রতিবদেন তৈরি করেছেন সাব্বিন হাসান

বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিক্ষেত্রের নানামুখি ওলটপালট নিয়ে সাজানো হয়েছে বাংলানিউজের আইসিটি সালতামামি-২০১১। বাংলাদেশে ‘দোয়েল’ ল্যাপটপ আর আন্তর্জাতিকে ‘আইফোন৪এস’ হচ্ছে প্রযুক্তি অঙ্গনের সবচে আলোচিত পণ্য। প্রাপ্তির খতিয়ানে আইসিটি খাতে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এটা সত্য। তবে প্রত্যাশার ধূম্রজাল অপেক্ষার মধুর ভোগান্তিতে ভুগিয়েছে পুরো বছরজুড়েই।

আর আন্তর্জাতিক আইসিটি পরিসরে সবচে আলোচিত হয়েছে ‘অ্যানড্রইড’ আর ‘গুগল+’। ডিজিটাল সংস্কৃতিও পেয়েছে অভিনব মাত্রা। তবে সব কিছুকেই ছাড়িয়ে-ছাপিয়ে গেছে বিশ্বপ্রযুক্তির মহানায়ক মহাগুরু স্টিভ জবসের আকালপ্রয়াণ। ২০১১ সালের আইসিটির বর্ষপুঞ্জিতে তাই স্টিভই সেরা।

১. আইসিটি সম্ভাবনায় বাংলাদেশ
২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তির উদ্যোগ নেয়। এ উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চার দিনব্যাপী ‘মিট বাংলাদেশ: এশিয়ার পরবর্তী সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

এ আয়োজনের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও অন্য সব খাতের সাফল্য ও সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী, গবেষক ও সরকারের সামনে উপস্থাপন করা। এ সেমিনারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এ সময়ের চিত্রকলা ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি তুলে ধরা হয়।

জিপিআইটির সিইও পিটার ডিনডিয়াল, জিই ইন্টারন্যাশনালের ক্যান্ট্রি ম্যানেজার নওশাদ আলী, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা শরিফুল ইসলাম, উপদেষ্টা চিত্রশিল্পী নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার এ সম্মেলনে অংশ নেন।

এ সম্মেলন নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, শক্তি ও অবকাঠামো, উৎপাদন. আইসিটি ও ব্যবসা-সেবার নানা ইতিবাচক দিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও সাফল্য তুলে ধর‍া হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যম বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসির জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী চিত্রকলা প্রদর্শনী হয়। ইউএস চেম্বার অব কমার্সেও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও স্টেট ডিপার্টমেন্টে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

২. বিশ্বপ্রযুক্তির মহানায়ক স্টিভের বিদায়
এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে স্টিভ জবসের চলে যাওয়া। অ্যাপল গুরু স্টিভ আর নেই। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে (১৯৫৫-২০১১) জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১১ সালের ৫ আগস্ট মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
আইপ্যাড এবং আইফোন উদ্ভাবনার মাধ্যমে স্টিভ জবস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে অগ্ন্যাশয়ের জটিল ক্যান্সারে ভুগছিলেন স্টিভ জবস।

কমপিউটার-বিশ্বের মহাগুরু এবং অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস বড্ড অকালেই চলে গেছেন। এখনও অ্যাপল ভক্তরা স্টিভের এ প্রস্থান মেনে নিতে পারেননি। তাই টুইটার, ফেসুবক এবং গুগল প্লাসে মুহূর্মুহূ উপচে পড়ছে লাখ লাখ শোকবার্তা। সেসবে কেবলই স্টিভের গুণগান।

স্টিভ জবসের এ প্রস্থান একেবারেই অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত। বাজার বিশেষজ্ঞ কলিন গিলিস জানান, এ মুহূর্তে আইসিটি দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিতে স্টিভ জবসের মতো নির্বাহীর বিকল্প পাওয়া খুব কঠিন। তবে তিনি আমরণ অ্যাপল উদ্ভাবনার প্রাণ সঞ্চারক হিসেবে নেপথ্যে থেকেই প্রেরণা দিয়ে যাবেন—এমনটাই অ্যাপল ভক্তদের বিশ্বাস।

এ মুহূর্তে অ্যাপলে সিইও পদের দায়িত্বে আছেন টিম কুক। শেষ দিনগুলোতে স্টিভের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তার নামটিই এসেছে সবার আগে। অ্যাপলের আকাশচুম্বি সাফল্যের পেছনে টিম কুকের অবদানও নেহাত কম নয়।

পণ্য উদ্বোধনকালে প্রতিটি উদ্ভাবনা নিয়ে স্টিভ যে মনকাড়া বক্তব্য দিতেন অ্যাপলের পণ্য বিক্রিতে তা জাদুকরি প্রভাব বিস্তার করেছে বলে বিপণন সংশ্লিষ্টরা জানান। এ কারণে শুরু থেকেই অ্যাপল অন্য সব প্রযুক্তিনির্মাতার তুলনায় এগিয়ে ছিল কয়েক ধাপ।

অ্যাপল-ভক্তরা এটা জানেন স্টিভ তাদের জন্য সময়ের সেরা পণ্যটিই বাজারে ছাড়েন। তাই নতুন কোনো অ্যাপল-পণ্য প্রকাশের কথা থাকলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।

অ্যাপল মানেই সময়ের সব চাহিদা পূরণের সামর্থ্য। কেননা এসব ডিজিটাল পণ্যের মান নির্ণয়ে কাজ করেছেন প্রযুক্তিগুরু স্টিভ জবস। শত শত কোটি মানুষের এ বিশ্বের জীবনমান এবং ব্যবসার উন্নয়নে স্টিভ দিয়েছেন অসংখ্য উদ্ভাবনা আর বিপণন-তত্ত্ব। এর মধ্যে আইফোন৪ আর আইপ্যাড সব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে।

এ সময়ের বিশ্বপ্রযুক্তিতে স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট পিসির একচ্ছত্র রাজত্ব। এই স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পিসির প্রবক্তাও ছিলেন স্টিভ জবস।

২০১১ সালে এ দুটি পণ্য পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশের দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। বিল গেটসের কমপিউটার আবিষ্কারের সময় যেমন প্রযুক্তিবিস্কোরণ ঘটেছিল, ঠিক তেমন চিত্রই ফুটে ওঠে অ্যাপলের স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট পিসির আর্বিভাবে।

নকিয়ার প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ইলোপের ভাষ্যমতে, কমপিউটার শিল্প অঙ্গনে স্টিভের তুলনা তিনি নিজেই। ভবিষ্যৎ চাহিদাকে সময়ের অনেক আগেই কল্পনা করতে পারদর্শী ছিলেন স্টিভ। ছিলেন একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টা। আর নিরলস পরিশ্রম ও কর্মদক্ষতার শক্তি দিয়ে তিনি তা বাস্তবায়নও করতে পারতেন।

কিন্তু এখনও অ্যাপলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্ভাবনী ভাবনা থেকে তিনি চলে যাননি। এ কথা অ্যাপল ভক্তরাও বিশ্বাস করেন। যতদিন অ্যাপল থাকবে ততদিন স্টিভ নিজেকে স্বমহিমায় নিত্যনতুন উদ্ভাবনার মাধ্যমে ভক্তদের সামনে হাজির হবেন। এমন প্রত্যাশাই বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল-ভক্তের।

বিশ্বের ব্যবসা এবং অভ্যাস পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে স্টিভকে এ কালের ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ উপাধিও দেওয়া হয়। বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল-ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে স্টিভ এখন স্মৃতির মণিকোঠায়। কারণ স্টিভ শুধু অ্যাপলের সম্পদ ছিলেন না। তিনি বিশ্ব ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন।

৩. আইফোন৫: অদেখাই রইল
‘লেটস টক আইফোন’ স্লোগানে পুরো ক্যালিফোর্নিয়া শহরই উন্মাদনায় মুখর। বিশ্বের বহু দেশ থেকে প্রযুক্তিবিদরা এসেছেন। এসেছেন সাংবাদিকেরা ‘আইফোন৫’ উন্মোচন অনুষ্ঠান কভার করতে।

অ্যাপলের জনক স্টিভ জবসের স্থলাভিষিক্ত নতুন নির্বাহী টিম কুকের কাঁধে এবার আইফোন৫ এর বিপণনের গুরুভার। অ্যাপলের ইতিহাসে স্টিভ ছাড়া এবারই প্রথম আইফোনের নতুন সংস্করণ ভোক্তাদের হাতে পৌঁছবে।
অপেক্ষার ঘণ্টা ফুরাচ্ছে। আত্মপ্রকাশ নিয়ে পুরো বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনেই ছিল টানটান উত্তেজনা। কিন্তু এসবই গেল বিফলে। ২০১১ সালে অধরাই রইল আইফোন৫!

আইফোন৫ কেমন হবে এ বিষয়ে খুব বেশি সুস্পষ্ট ধারণা নেই কারও। অনেকটা গোপনে চলছে এ মডেলের পুরো উৎপাদন কার্যক্রম। কারিগরি মান নিয়ন্ত্রণেও পুরোপুরি সতর্ক অ্যাপল।

৯টু৫ সংবাদমাধ্যম সূত্র জানিয়েছিল, আগের তুলনায় আইফোনের স্টোরেজ দ্বিগুণ হতে পারে। একই সঙ্গে তিনটি স্টোরেজ মডেল প্রকাশ করা হতে পারে। এর মধ্যে ১৬জিবি, ৩২জিবি এবং সর্বাধিক আলোচিত ৬৪জিবি মডেল অন্তর্ভুক্ত আছে। আইফোন৫ বাজারে আসার আগেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংকে দারুণ কোণঠাসা করে ফেলে অ্যাপল।

তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এখনকার বাজার পরিস্থিতি আইফোন৪ এর মতো একচেটিয়া নয়। এখন আইফোনের অনেক বিকল্পমাধ্যম আছে।

এ মুহূর্তে বিশ্বপ্রযুক্তির বাজারে বহুসংখ্যক বাহারি আর বহুমাত্রিক স্মার্টফোন বিদ্যমান। ফলে আইফোন৫ সংস্করণকে আইফোন৪ এর তুলনায় অনেক বেশি বাজার প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।

এ মুহূর্তে আইফোন৫ এর সঙ্গে বাজার প্রতিযোগিতায় লড়াই করতে সচেষ্ট আছে এইচটিসি ইভো। ত্রিমাত্রিক আবহের এ স্মার্টফোন আইফোনের সঙ্গে টক্কর দেবে বলে বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।

আইফোন নিয়ে স্মার্টফোন ভক্তদের আগ্রহ অন্তহীন। প্রশ্ন এখন আইফোন৫ কখন তার মোড়ক উন্মোচনে আত্মপ্রকাশ করবে। এ যাবৎ অ্যাপলের উদ্ভাবন ইতিহাসে আইফোন৫ সবচে বেশি জল্পনা-কল্পনার ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে।

এ মডেলটি সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সঙ্গে এখন পর্যবেক্ষণ কক্ষে আত্মউন্মোচনের প্রহর গুণছে। তবে দিনক্ষণও অনিশ্চিত। তাই চলছে যুক্তি আর কৌশলের লড়াই।

২০১০ সালে জুন মাসে আইফোনের চতুর্থ সংস্করণ বিশ্ববাজারে উন্মোচন করা হয়। সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ মডেল বিক্রির সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ।

৪. আইসিটি তালিকায় বাংলাদেশ পিছিয়ে
বাংলাদেশ ২০১১ সালের বিশ্বপ্রযুক্তিতে আবারও খানিকটা পিছিয়েছে। বিজনেস সফটওয়্যার অ্যালায়েন্স (বিএসএ) ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) আইটি ইন্ডাস্ট্রি কমপেটিটিভনেস ইনডেক্স২০১১ সংকলনে এ তথ্য দেওয়া হয়।

২০০৭ সালের পর চতুর্থবার ইন্ডেক্সটি হালনাগাদ করা হলো। এ ইনডেক্সটি তৈরিতে নির্বাচিত ৬৬টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের বিভিন্ন নিয়ামক মাধ্যম বিবেচনায় নেওয়া হয়। এসব মানদণ্ডের মধ্যে আছে ব্যবসা পরিবেশ, আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ, গবেষণা ও উন্নয়ন, আইন, পরিবেশ এবং জনসমর্থন।

২০১১ সালের আইসিটি উন্নয়ন তালিকার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য। এ বছর এ তালিকায় বাংলাদেশ একধাপ নেমে ৬৩তম অবস্থানে পেয়েছে।

বিএসএ এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারণী পরিচালক রজার সমারভিল জানান, এ মুহূর্তে আইসিটি খাতে ব্যবসার পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব না হওয়ায় বাংলাদেশ এ তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দ্রুতই দিকনিদের্শনামূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এবারের ইনডেক্স তালিকার সূত্র মতে, যেসব দেশ বছরের পর বছর তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বিনিয়োগ করেছে মূলত তারাই এখন বিনিয়োগের সুফল ভোগ করছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো এগিয়ে আসার ফলে বিশ্ব প্রতিযোগিতা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণেই উন্নত দেশগুলোকে তাদের স্থান ধরে রাখতে কঠিন এবং কৌশলী লড়াই করতে হচ্ছে।

বিএসএ সভাপতি এবং সিইও রবার্ট হলিম্যান জানান, এ বছরের আইটি ইন্ডাস্ট্রি কমপেটিটিভনেস ইনডেক্সে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সাফল্য আনে এ তত্ত্বটা সুস্পষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সামনে সুযোগ আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার। এ বিনিয়োগ সফল হবে তা বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান অবস্থায় সহজেই অনুমেয়।

৫. উইকিলিকসকে তথ্য দিচ্ছে ফেসবুক!
২০১১ সালে পুরোটা সময়জুড়েই আলোড়ন তুলেছে উইকিলিকস আর ফেসবুক। তবে বছরের শেষভাগে এসে এদের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বিষয়টি বিশ্ব আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

এখন বিশ্বজুড়েই বইছে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য বিপণনের বৈরী হাওয়া। এ পালে জোয়ার বইয়ে দিয়েছে উইকিলিকস। তবে এ সবকিছুর নেপথ্যে আছে সামাজিকগুরু ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তিবিদ নিক কিউব্রিলোভিচ জানান, এ মুহূর্তে ফেসবুকের মাধ্যমেই বিশ্বের গোপন এবং স্পর্শকাতর সব ব্যক্তিতথ্য আর প্রাতিষ্ঠানিক নথি পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এ তথ্যগুলো কেউ কেউ বিক্রি করছেন চড়াদামে। কেউবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এসব তথ্য ফাঁস করছেন। তথ্য নিরাপত্তা আর সামাজিক যোগযোগের সুকৌশলেই খুঁজে নেওয়া হচ্ছে এসব তথ্য।

বিশ্বব্যাপী এ ধরনের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিতথ্য সাধারণের কাছে প্রমাণপত্র দিয়ে উন্মোচনে উইকিলিকস এখন আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে।

এসব কৌশলকে কারিগরিভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিবিদ নিক। নিকের ভাষ্যমতে, ফেসবুক থেকে লগআউট করার পরও প্রতিটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর অন্য যতগুলো সাইটে প্রবেশ করে, পাসওয়ার্ড দেয় এমনকি তথ্য লিপিবদ্ধ করে তা সবই জমা পড়ে ফেসবুকের (ডাটা সার্ভারে) তথ্য ভান্ডারে।

এ তথ্য সংগ্রহের কাজে ফেসবুক বিভিন্ন ধরনের কুকিজ ব্যবহার করে থাকে। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই লগআউট হওয়ার আগে কুকিজগুলো একেবারে মুছে (ডিলিট) দেন না। ভুলের শুরুটা এখানেই। এরপর শুরু হয় কুকিজ দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চের বহুমুখি খেলা। এ প্রক্রিয়া শেষে দফায় দফায় তথ্য জমা পড়তে থাকে ফেসবুক (তথ্যকেন্দ্রে) ডাটা সেন্টারে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ার গ্রেগ জানান, তথ্য বিক্রির এ অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গ্রেগ উল্লেখ করেন, এ মুহূর্তে ফেসবুক তার ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারকারীদের তথ্যকে সুরক্ষিত করতেই কুকিজকেন্দ্রিক নিরাপত্তা দিয়েছে। এর ফলে অবৈধ কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ফেসবুক সহজেই শণাক্ত করে ধরাশায়ী করতে পারে।

আর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যেই এসব কুকিজ যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তা ফেসবুক সার্ভার থেকে একেবারেই মুছে ফেলা হয়। এ ছাড়া এ বিপুল পরিমাণ তথ্য নিয়ে ফেসবুক কোনো অনৈতিক চর্চাই করে না বলেও গ্রেগ অভিযোগ খণ্ডন করেন।
কিন্তু প্রযুক্তিকৌশল গবেষক নিক জানিয়েছেন, এ সবই অযৌক্তিক সাফাই। এসব কুকিজ ডিলিট না করলে পরে এগুলোই শক্তিশালী স্পাই এবং ফিশিং কুকিজের রূপ নেয়। বিভিন্ন ই-মেইল স্প্যাম ছড়িয়ে আরও নানা ধরনের কিওয়ার্ড এবং গোপান নথিপত্র হাতিয়ে নেয় ভোক্তার একেবারেই অগোচরে, অজান্তে।

এরই মধ্যে বিশ্বের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এতে নড়েচড়ে বসেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গোপন তথ্য বিক্রেতারা ফেসবুকের কাঁধে ভর দিয়ে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য পাচার এবং বিপণন করছে- এমন অভিযোগ নতুন নয়।

তবে এ গোপন মিশনে ফেসবুক আর উইকিলিকসের সম্পর্ক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ তা সত্যিই নতুন করে ভাবিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। এমনকি সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছেও এটা হোঁচট খাওয়ার মতো সংবাদ বলেও বিশেষজ্ঞেরা অভিমত দিয়েছেন।

৬. এগিয়ে স্মার্টফোন, পিছিয়ে ট্যাবলেট
ব্ল্যাকবেরি নির্মাতা রিসার্চ ইন মোশন (রিম) ট্যাবলেট পিসি ‘প্লেবুক’ উৎপাদনে এ বছর অনেকটাই পিছিয়েছে। তবে গুজব ছিল ট্যাবলেট পিসির উৎপাদন বন্ধ করে স্মার্টফোন তৈরিতেই রিম এখন আগ্রহী।

এ মুহূর্তে দ্রুত বিপণন-তত্ত্বে ট্যাবলেট পিসির তুলনায় স্মার্টফোন অনেক এগিয়ে। এ ছাড়া স্মার্টফোনের বাজার এবং চাহিদা দুটোই বাড়ছে সমতালে।

তাই চাহিদা-তত্ত্বের বিবেচনায় ট্যাবলেট পিসির বাজার এ মুহূর্তেই রিমের জন্য জরুরি নয় বলে রিম মনে করছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন চাহিদায় অ্যানড্রইড ফোন ৪৩, আইফোন ২৮ এবং ব্ল্যাকবেরি ১৮ ভাগ জনপ্রিয়তা পুঁজি করেছে। এ হিসাবে স্মার্টফোনের বাজারে রিমের সম্ভাবনা বিদ্যমান।

অন্যদিকে ট্যাবলেট পিসি নিয়ে চলছে টানটান প্রতিযোগিতা। এখানে একেবারে নতুন অতিথি হয়ে বাজারে টিকে থাকা অত সহজ নয়। তাই নিজের হারানো সুনাম আর জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে স্মার্টফোনই রিমের মূল চালিকাশক্তি বলে বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করছেন।

৭. প্রিন্ট নয়, নির্বাচনে ওয়েবই বিশ্বস্ত
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়টি এ বছর বিশেষ গুরুত্ব পায়। এ পদ্ধতি নিয়ে সিঙ্গাপুর সবচে বেশি আলোচিত হয়। এ নিয়ে সমালোচনাও হয় অনেক। তবে অনেকেই এ পদ্ধতির নির্বাচনে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের (আইপিএস) গবেষণা প্রতিবেদনে এমন সব তথ্যেরই খোঁজ মিলেছে। সিঙ্গাপুরের ২১ বছরের বেশি বয়সী এমন ২ হাজার ভোটারকে এ জরিপের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

ব্লগ এবং ফেসবুকে থেকেও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ সচেতন ভোটার ইন্টারনেটভিত্তিক নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক জনমত প্রকাশে সামাজিক মিডিয়া একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম।

কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগে এশিয়ায় ইন্টারনেট এখনও অতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই রাজনৈতিক মেরুকরণে সামাজিক মিডিয়া এখন প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে পিছিয়ে। নির্বাচনে প্রিন্ট মিডিয়া অনেক বেশি পক্ষপাতদুষ্ট বলে জনমত পাওয়া গেছে।

কিন্তু অনলাইনে মিডিয়া নির্বাচনের সময় অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য এমন তথ্যেই আইপিএস পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে। এ ছাড়া সামাজিক মিডিয়ার প্রভাবে ব্যাপক রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ প্রজন্ম এখন আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন।

ফলে এশিয়া ছাড়াও পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সরকারগুলো এখন সামাজিক মিডিয়ার কারণে অনেক বেশি রাজনৈতিক সমালোচনার তোপে পড়ে। এতে ইন্টারনেটনির্ভর রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি চর্চাও শুরু হয়েছে।

তবে জাতীয় নির্বাচনে এখনই ইন্টারনেট মাধ্যমকে সমর্থন করছেন না বেশিরভাগ সচেতন ভোটার। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় অনলাইন মিডিয়া অনেক বেশি সোচ্চার এবং বিশ্বাসযোগ্য বলে আইপিএস গবেষণা সূত্র মন্তব্য করেছে।

৮. ২০১১ সার্চসেরা: স্টিভ জবস
এ বছরের শীর্ষ আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন স্টিভ। বিশ্বের কয়েকটি বিখ্যাত জরিপ সূত্র এমন তথ্যই দিয়েছে। ২০১১ সালের অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে বিশ্বের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তি হচ্ছেন স্টিভ জবস।

ইন্টারনেটের সার্চ ঘূর্ণিতেও অ্যারাব স্প্রিঙ্গ, রয়েল ওয়েডিং, ইরাক, ওসামা বিন লাদেন এবং সবশেষ লিবিয়ায় গাদ্দাফির মৃত্যু ঘটনার চেয়েও স্টিভ আছেন অনেক এগিয়ে। এ হিসাব বলেছে ২০১১ সালের সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তি অ্যাপলস্রষ্টা স্টিভ জবস।

অনলাইন বিশ্বের ৭৫ হাজারের বেশি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কমপিউটার অ্যালগরিদম সমীক্ষা চালিয়ে স্টিভই শীর্ষে আছেন তা এখন প্রায় নিশ্চিত। এ তথ্যভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করেছে গ্লোবাল সার্ভে অব দ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ।

এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ল্যাঙ্গুয়েজ মনিটর সূত্রও তাদের গবেষণায় স্টিভকেই ২০১১ সালের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তির হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

উইলিয়াম আর কেটের রাজকীয় বিয়ে আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের চেয়ে সমাজবিপ্লবের প্রযুক্তি কারিগরি স্টিভ এ বছরের শীর্ষ আলোচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন।

ঘটনাবহুল ২০১১ সাল শেষ প্রায়। তাই এ বছরের আলোচিত ব্যক্তি নিয়ে হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আর তাতে স্টিভ জবস আছেন একেবারেই অপ্রতিরোধ্য আসনে। বছরজুড়ে এতগুলো ঘটনাকে একেবারেই পেছনে ফেলে গত ৪ অক্টোবর প্রয়াত স্টিভ জবসই এ বছরের শীর্ষ আলোচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন।

সমাজ পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে জীবদ্দশায় ‘স্টিভ’ সব সময়ই মাতিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বের প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া সংস্কৃতি। মৃত্যুর পরও স্টিভ আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনিই সেরা, ভুবনজয়ী এবং মিডিয়া সেরা।

৯. এশিয়ায় আইফোন ‘৪এস’
এ বছরের শেষভাগে বিশ্বব্যাপী অ্যাপল ভক্তদের হাতে বহুল আলোচিত ‘৪এস’ মডেল পৌঁছাতে শুরু করে। দেশে দেশে এ পণ্য নিয়ে উন্মাদনা এখনও অন্তহীন। আগামী ১১ নভেম্বর বিশ্বের অনেক দেশে একই সঙ্গে আইফোন ৪এস বিক্রি শুরু হয়।

এ মুহূর্তে এশিয়াজুড়ে আইফোন ৪এস নিয়ে উন্মাদনা আর আগ্রহের কোনো কমতি নেই। তবে এশিয়ার মধ্যে শুধু সিঙ্গাপুরকেই গুরুত্ব দেয় অ্যাপল।

এ বছরের ২৪ নভেম্বর থেকে ভারতে আইফোন ৪এস বিক্রি শুরু হয়। এশিয়াভুক্ত সিঙ্গাপুরের টেলিকমপ্রতিষ্ঠান সিঙ্গটেল এবং এম১ আইফোন ৪এস এর জন্য ভোক্তাদের বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করছে।

আইফোন ৪এস ছাড়াও ভারতে আইফোন৪ নতুনভাবে বিক্রি করা হয়। ৮জিবির আইফোন৪ মডেলের দাম ৩০ হাজার রুপি। অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ অক্টোবর থেকে আইফোন ৪এস বিপণন শুরু হয়। আর বছরের শেষভাগে এসে বিশ্বের আরও ২২টি দেশে আইফোন ৪এস বিপণন শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে এবার প্রথম আইফোন ৪এস বিক্রি শুরু হয়।

১০. বাংলাদেশে ইন্টেল ভিপি
এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘ই-এশিয়া’ উপলক্ষে ঢাকায় আছেন দেশ ও বিদেশের প্রযুক্তিবিপ্লবের বিখ্যাত রুপকাররা।

এ আসরের শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে ইন্টেলের সহসভাপতি এবং ‘ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রোগ্রাম’ এর প্রধান জন ই. ডেভিস অন্যতম। ১৯৭৭ সালে ইন্টেলে মাননিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ডেভিস।

এরপর ১৯৯০ দশকে তিনি ইন্টেল করপোরেশনের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জন ই. ডেভিস ২০০৫ সালে ‘ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রোগ্রাম’ চালু করেন। বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা করাই ইন্টেলের এ কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য।

২০০৮ সালে জন ডেভিস সংক্ষিপ্ত সফলে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টেলের ‘ক্লাসমেট পিসি’ কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করেন জন ডেভিস।

ই-এশিয়া সম্মেলনের তৃতীয় দিনের একটি বিশেষ অধিবেশনে ‘মিট দ্য টেকনোলজি লিডার’ ডেভিস তার বেড়ে উঠার গল্প, ইন্টেলের জীবন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের স্বপ্নের কথা শোনান।

১১. আদালতে অ্যাসাঞ্জ
তথ্যবিস্ফোরণে বিশ্বকাঁপানো ‘উইকিলিকস’ প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এ বছর হাজির হয়েছেন আইনি ময়দানে। যৌন হয়রানির অভিযোগে তিনি এখনও কাঠগড়ায় বিচারাধীন। এ মামলায় এক অর্থে ফেঁসেই গেছেন অ্যাসাঞ্জ।

২০১১ সালে অনেকটা সময়জুড়েই উইকিলিকস তথ্যবিশ্বের চেহারা পুরো বদলে দিয়েছে। ঘাম ঝরিয়েছেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই রাষ্ট্রপ্রধান আর মন্ত্রীদের। একে একে থলের বিড়ালের মতো বেড়িয়ে আসছিল কঠিন সব রাষ্ট্রীয় গোপন সত্য আর দুর্নীতির প্রমাণপত্র।

এ গোয়েন্দা তথ্যমাধ্যম ‘উইকিলিকস’ প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন আন্তর্জাতিক আইনি বিপাকে। আর তা সহজেই সামাল দিতে পারছেন না এটাও প্রায় নিশ্চিত। অবশেষে প্রবাসী আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন অ্যাসাঞ্জ।

অস্ট্রেলীয় সরকারও উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান নিচ্ছে না। ফলে ক্রমেই আইনি লড়াইয়ের জালে জড়িয়ে পড়ছে অ্যাসাঞ্জ। এরই মধ্যে উইকিলিকসের কার্যক্রম গুটিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েও পার পাচ্ছেন না অ্যাসাঞ্জ।

তবে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন অ্যাসাঞ্জ। আর মামলার রায়ও যাচ্ছে তাঁর বিপক্ষে। সব মিলিয়ে অ্যাসাঞ্জকে শেষ পর্যন্ত জেলহাজতের দুর্ভাগ্যই মেনে নিতে হবে। গুণতে হবে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও।

১২. ঢাকায় ‘ই-এশিয়া’
এবারের ই-এশিয়া হয় বাংলাদেশে। এ বছরের ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ‘ই-এশিয়া২০১১’।

তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশ ও বিদেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা ও পণ্য প্রদর্শন করে।

১৩. ‘দোয়েল’ দেশি ল্যাপটপ: বিবিসি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ বছর বাংলাদেশ দেশি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ‘দোয়েল’ উন্মোচন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়েলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এদের মধ্যে বিবিসি অন্যতম।

বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ৪টি মডেলের দোয়েল ল্যাপটপ প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে ন্যূনতম মডেলের প্রাইমারি নোটবুকের দাম ১০ হাজার টাকা (১৩০ডলার/৮৩ পাউন্ড) নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ব্যাপক জনপ্রিয় অ্যানড্রইড অপারেটিং সিস্টেমে চলবে। আর মূল পর্দা ১০.১ ইঞ্চি।

অন্য দুটি নোটবুক সিরিজে আছে ১৩ হাজার টাকার বেসিক এবং ২০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড মডেল। আর পূর্ণাঙ্গ ল্যাপটপ আছে একটি। এর দাম ২৬ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

দোয়েলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি অংশকেই ই-গর্ভন্যান্সের আওতাভুক্ত করার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি আধুনিকায়নে অচিরেই পুরো দেশের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দোয়েল প্রসঙ্গে টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ ইসমাইল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে এটি একটি বড় ধরনের উদ্যোগ। গ্রামাঞ্চলে স্বল্পমূল্যে ল্যাপটপ দেওয়া হলে ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য গ্রামের মানুষের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে।

শুরুতে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর অফিসে এ ল্যাপটপ সববরাহ করা হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে সাধারণ মানুষ এবং ১ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে এ ল্যাপটপ ধাপে ধাপে বিপণন করা হবে।

এ মুহূর্তে দোয়েল যন্ত্রাংশের মাত্র ১০ ভাগ বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। আর বাকি ৯০ ভাগ যন্ত্রাংশ আমদানি করে আনা হচ্ছে। দোয়েল তৈরিতে মালয়েশিয়ার এম টু করপোরেশন এবং টিএফটি ডিসপ্লে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দোয়েল উৎপাদনে ৬০ ভাগ যন্ত্রাংশ বাংলাদেশেই প্রস্তুত হবে বলে টেশিস ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে জানান।

বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। যদিও বাংলাদেশ এখনও ইন্টারনেট গতির প্রশ্নে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এ ছাড়াও দোয়েলের দ্রুত প্রাপ্তি নিয়েও আছে নানামুখি কৌতূহল।

১৪. সবার গুগল+
এ বছরেই এসেছে গুগল+। অপেক্ষার ইতি। পরীক্ষামূলক নয়। একেবারে সবার জন্যই খুলেছে গুগল+ এর ‘সিমসিম দরজা’। নতুন এ সামাজিক সাইট নিয়ে গুগল বেশ আশাবাদী।

বিশ্বব্যাপী গুগল+ এর এ বন্ধু আহ্বানও ছড়িয়েছে দ্রুতই। পরীক্ষামূলক পর্যায়ের প্রথম মাসেই রেকর্ড গড়েছে গুগল+। নতুন এ সামাজিক সাইটের সবচে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে একসঙ্গে একাধিক গুগল-বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি ভিডিও চ্যাট-সুবিধা।

গুগল+ এর অনানুষ্ঠানিক যাত্রার মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যে ১ কোটি ভক্তকে তালিকাভুক্ত করেছে গুগল। যদিও সংখ্যাতত্ত্বের এ ঘোষণা গুগল পরে জানিয়েছে। তবে ওয়েবভিত্তিক জরিপ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কমস্কোর সূত্র জানিয়েছে, গুগল+ যাত্রার প্রথম মাস শেষ হবার আগেই ২ কোটি ৫০ লাখ সদস্যকে নিবন্ধিত করেছে।

এ মুহূর্তে গুগল+ এর শক্ত দু প্রতিপক্ষের একজন ফেসবুক। অন্যজন টুইটার। অনলাইনের সামাজিক বিশ্বে ফেসবুকের ৭৫ কোটি এবং টুইটারের ২০ কোটি ভক্ত এখন গুগল+ দিকে এগিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সামাজিক গবেষক ও বিশ্লেষকেরা।

প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে গুগলের সামাজিক ব্যবসার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ভিক গুনদোট্টা জানান, এখনও বার্তা বিনিময়ে ই-মেইলের কলাকৌশল আছে ভোক্তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। প্রযুক্তিপ্রেমীরা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন প্রত্যাশী।

তাই প্রযুক্তিভক্তদের সময়ের চাহিদার সঙ্গে সহজলভ্য প্রযুক্তিসেবা নিশ্চিত করতে পারলে সাফল্য আসবেই। আর গুগল সেবায় বিশ্বাসী। প্রতিযোগিতায় নয়।

১৫. বিজ্ঞাপনে ডিজিটাল মিডিয়া
এসেছে ডিজিটাল মিডিয়ার সময়। প্রিন্ট মিডিয়াকে আলগোছে পেছনে ঠেলে এখন চলছে ডিজিটাল মিডিয়ার রাজত্ব। এ অর্থে বিশ্বজুড়ে নতুন এক প্রজন্মের আর্বিভাব। নাম ডিজিটাল প্রজন্ম।

এ নতুন প্রজন্মের জন্য বয়স কোনো নিয়ামক নয়। সামাজিক মিডিয়ার অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতির উত্তাপে ব্যবসায়িক অঙ্গনেও ডিজিটাল মিডিয়ার কদর বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে গ্রাহক, ব্যবসা আর বিজ্ঞাপন।

২০১১ সালের সবচেয়ে অগ্রগামী ব্যবসার শীর্ষে আছে ডিজিটাল মিডিয়া। এ ব্যবসার পরিসীমাও বাড়ছে প্রতিমুহূর্তে। অপ্রতিরোধ্য এ মাধ্যম ব্যবসায় জন্ম দিচ্ছে নিত্যনতুন সম্ভাবনা।

এখন ভোক্তারা মাল্টিপল ডিজিটাল পণ্য ব্যবহার করেন। ফলে অনলাইন বিপণন কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। একটি পণ্য মুহূর্তেই বিশ্বব্যাপী তার চাহিদার জাল বিস্তার করছে সামাজিক নেটওয়ার্কের ঘাড়ে চেপে। এমনকি টুইটারও এ প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

এ মুহূর্তে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩৮ ভাগ গ্রাহকের বয়স ৪৫ থেকে ৫৪ বছর। অন্যদিকে ৪২ ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীর বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।

তরুণদের সামাজিক বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে সহায়তা করেছে সামাজিক নেটওয়ার্ক। এখন প্রতি মুহূর্তের যে কোনো ঘটনা তাৎক্ষণিক সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় তা গণবিস্ফোরণেরও জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক কতগুলো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অন্তত এ কথাই বলে।

মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই সঠিক বার্তা দিয়ে বিজ্ঞাপণী তথ্যকে আরও স্বাধীন এবং সক্রিয় করতে হবে। দ্বৈত ব্র্যান্ড কৌশল এক্ষেত্রে অনেক সফলতার নজির স্থাপন করেছে।

ইকো-সিস্টেমের প্রভাবে মিডিয়ায় ডিজিটাল প্রজন্মের অংশগ্রহণ এখন অপ্রত্যাশিত। এ প্রজন্মই তথ্যকে বাণিজ্যিক রূপান্তর চক্রে ফেলে রাষ্ট্রের জন্য রাজস্ব খাত তৈরি করছে।

এ অর্থে মোবাইল অপারেটরা এ সময়ের ব্যবসা প্রসারে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। পণ্যতথ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় সংস্কৃতিতে এখন ডিজিটাল মিডিয়া সবচেয়ে সক্রিয়। তাই ব্যবসার প্রচারগুলোও হয়ে উঠছে ডিজিটালমুখি।

রাজস্ব বাড়াতে ‘বিজনেস টু বিজনেস’ কৌশলের তুলনায় ‘বিজনেস টু কনজিউমার’ কৌশল এখন কার্যকর। এ পদ্ধতির ফলে শিক্ষিত গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ে। আর তা ব্যবসায় গতি নিয়ে আসে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।