ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

২০১১: ডিজিটাল পথে বাংলাদেশ

আইসিটি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১
২০১১: ডিজিটাল পথে বাংলাদেশ

২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে আধুনিক ল্যাপটপ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১০৬টি বই এখন ইন্টারনেটেই পাওয়া যাচ্ছে।

সরকারি কাজে যুক্ত হয়েছে স্বচ্ছতা। এসেছে ই-টেন্ডারিং। আর সরকারি সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার দেশের সব জেলায় চালু করেছে ই-সেবাকেন্দ্র। ২০১১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন আরিফুল ইসলাম আরমান

আকাশে উড়ছে দোয়েল
দেশের তৈরি প্রথম ল্যাপটপ দোয়েল। টঙ্গীর টেলিফোন শিল্প সংস্থার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৫০টি ল্যাপটপ তৈরি এবং বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন এ বিপণন কেন্দ্র থেকে শতাধিক ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দুটি মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে বেসিক০৭০৩। অন্যটি অ্যাডভান্স ১৬১২।

বেসিক০৭০৩ মডেলের দাম ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। অ্যাডভান্স১৬১২ মডেলের দাম ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ল্যাপটপ দুটির ব্যাটারি সেবা পাওয়া যাবে ৬ মাস। আর অন্য সব যন্ত্রাংশে বেসিক মডেলের জন্য ৬ মাস এবং অ্যাডভান্সের জন্য ১ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে।

টেলিফোন শিল্প সংস্থার এ বিপণন এবং সেবাকেন্দ্র ছাড়া এ মুহূর্তে আর কোথাও দোয়েল পাওয়া যাচ্ছে না। আর কবে নাগাদ এটি দেশব্যাপী বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

ই-সেবাকেন্দ্র
গত বছর দেশের সব জেলার জন্য তথ্য বাতায়ন উদ্বোধনের পর এ বছর চালু হয়েছে ই-সেবাকেন্দ্র। ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের সব জেলায় ই-সেবাকেন্দ্র একযোগে যাত্রা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ই-সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

২০০৯ সালে যশোর জেলায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ই-সেবাকেন্দ্র। এরপর দু ধাপে এ প্রকল্পের আওতায় আসে আরও ৩১টি জেলা। ই-সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার দু শতাধিক বিষয়ে সেবা দেওয়া হবে। এর মধ্যে আছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জমির দলিল দস্তাবেজ, বন্দুকের লাইসেন্স, স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডসহ সব কার্যক্রম।

এর আওতায় রেকর্ডরুমের নকল প্রাপ্তিসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন সেবার জন্য লোকজন জেলা বা উপজেলার একটি কাউন্টারে আবেদন করতে পারছেন এবং সেখান থেকে তাদের সেবা নিচ্ছেন।

পাঠ্যবই এখন ‘ই-বুক’
বই হারিয়ে গেছে? নষ্ট হয়ে গেছে? নতুন বই দেখা প্রয়োজন? এ রকম নানা প্রশ্নের সমাধানে দেশের প্রচলিত পাঠ্যবইগুলোকে এ বছর ই-বুকে প্রকাশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে (নবম শ্রেণী) প্রবেশের পূর্বেই সব শিক্ষার্থীকে কমপিউটার বিষয়ে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা ও জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০৬টি পাঠ্যবইয়ের ই-বুক তৈরির আওতায় এসেছে। একই সঙ্গে বইগুলো অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ই-শিক্ষার্থীরা (www.ebook.gov.bd) এ সাইটে ইবুক পাঠ করতে পারবেন।

দৃষ্টিনন্দন ওয়েবসাইটটি শিক্ষার্থীদের সহজে পাঠযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ এ সাইটে বই পড়তে এবং ডাউনলোড করতে পারবেন। ডেক্সটপ কমপিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুকসহ, ফ্ল্যাশ প্লেয়ার যুক্ত মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট পিসি এবং ই-বুক রিডারেও এসব বই পড়া যাবে।

এ ওয়েবসাইটের শুরুতেই দেখা যাবে নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি বই। এর ঠিক ওপরেই আছে এ সাইটের বিভিন্ন ক্যাটাগরি। আর নিচের অংশে আছে শ্রেণী অনুযায়ী বইয়ের তালিকা। তালিকা অনুযায়ী ক্লিক করলেই দেখা যাবে ভার্চুয়াল বইয়ের তাকজুড়ে ই-বুকে সারি।

এখানে প্রতিটি বইয়ের ওপরের অংশে আছে ‘ওপেন’ এবং ‘ডাউনলোড’ অপশন। ওপেন ক্লিক করলে বইটি সরাসরি সাইটেই পড়া যাবে। আর ডাউনলোড করতে চাইলে ‘ডাউনলোড’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন সূত্রে জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের এ সাইটটি শিক্ষার্থী, গবেষক, অভিভাবক, শিক্ষকসহ যে কেউ বিনামূল্যে যে কোনো সময় ব্যবহার করতে পারবেন।

এ মুহূর্তে দেশের ৪০ ভাগ বিদ্যালয় কমপিউটার ল্যাব, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কমপিউটার ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়াও দেশজুড়ে ২০ হাজার ৫০০টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শ্রেণীকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে ই-বুক ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রচলিত পাঠ্যবইয়ের আদলে সাইটটিতে প্রাথমিক স্তরের ৩৩টি এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭৩টি ই-বুক আছে। এর আগে গত বছরের শুরুর দিকে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলো পিডিএফ আকারে যুক্ত করা হয়।

ই-বুকের এ উদ্যেগের ফলে সাধারণ বইয়ের মতো এর পাতা উল্টানো যাবে বা নিদের্শনা দিয়ে নির্দিষ্ট পাতা খোলা যাবে। এতে বই ব্যবহার অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।

ই-বুকগুলো অনলাইনে প্রকাশের মাধ্যমে প্রবাসী শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় পড়তে আগ্রহী হবে। সময়মতো পাঠ্যপুস্তকের সরবরাহ না থাকলে লেখাপড়া ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা ই-বুক অনেকাংশেই দূর করবে। যারা ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন তারা ইচ্ছা করলে ই-বুকের পাতা প্রয়োজনমতো ছোট-বড় করে পড়তে পারবেন।

আর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আগামীতে যুক্ত করা হবে ‘টেক্সট টু স্পিচ’ যাতে তারা পাঠ্য বিষয়টি শুনতে পারেন। ই-বুক তৈরির সঙ্গে পাঠ্যবইগুলো পর্যায়েক্রমে অডিও, ভিডিও, মাল্টিমিডিয়া অ্যানিমেশন আকারে সাইটে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দুর্নীতি রোধে ই-টেন্ডারিং
ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডারবাজি রোধে শুরু হয়েছে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি। উন্নয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করছে সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) পদ্ধতির মাধ্যমে ই-টেন্ডারিং বাস্তবায়িত হচ্ছে। ই-জিপি সরকারের ক্রয়কারী সংস্থা (পিএ) এবং ক্রয়কারী (পিই) ক্রয়কার্য সম্পাদনের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। গত ২ জুন এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনার সঙ্গে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঠিকাদাররা এ পদ্ধতিতে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় ৪টি ক্রয় অফিসে ই-টেন্ডারিং চালু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যালের (সিপিটিইউ) তত্ত্বাবধানে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট-২ এর আওতায় শুরু হওয়ার ই-টেন্ডারিং কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।

এরই মধ্যে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) পদ্ধতি তৈরি ও পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। ই-জিপি (www.eprocure.gov.bd) এ সাইটের মাধ্যমে ই-টেন্ডারিংয়ে অংশ নেওয়া যাবে।

সাইটটিতে নিবন্ধিত হয়ে যে কোনো ঠিকাদার বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরকারি প্রকল্পের টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন। টেন্ডারিংয়ের পর স্বয়ংক্রিভাবেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা তাদের আবেদন অনলাইনের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন।

এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অংশগ্রহণকারীর আবেদনপত্র বাছাই করা হবে। যোগ্য ঠিকাদার মূল্যায়নও করা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। এটি একমাত্র ওয়েবসাইট যার মাধ্যমে ক্রয়কারী সংস্থা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নিরাপদ ওয়েব ড্যাসবোর্ডের মাধ্যমে ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবেন।

এ ছাড়া সাইটটির মাধ্যমে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়ের কাজও করতে পারবেন। এর মধ্যে আছে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি, দরপত্র আহ্বান, প্রস্তাবের জন্য অনুরোধ, কোটেশন আহ্বান, দরপত্র তৈরি ও জমা, উন্মুক্তকরণ এবং মূল্যায়ন করা আরও অনেক সুবিধাদি।

এরই মধ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম চালুর জন্য ৩০৮টি ক্রয়কারীর দফতরে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৬৬টি কমপিউটার সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়া ই-জিপি পদ্ধতির নির্দেশিকা হিসেবে ‘ই-জিপি গাইডলাইনস’ প্রকাশ করা হয়েছে। ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে তুলে ধরতে ৬৪ জেলায় সরকারি ক্রয়বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

ই-জিপি পোর্টাল উদ্বোধনের পর থেকেই ঠিকাদারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের পর ঠিকাদাররা অনলাইনে বিড করারও অবাধ সুযোগ পাচ্ছেন। সঙ্গে নিশ্চিত হচ্ছে স্বচ্ছতাও।

বাংলাদেশ সময় ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।