কোনো একটি ভালো রেস্তোরাঁয় খেলেন, সেখান থেকে বের হয়ে দেখলেন আপনার মোবাইলে গুগলের নোটিফিকেশন। যেটি বলছে, এ রেস্তোরাঁর খাবার কেমন ছিল? এটি একটি উদাহরণ মাত্র।
আমরা এখন আধুনিক যুগে বাস করছি। যে সময়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। চাইলেই মানুষ নিজের মোবাইলের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে সংযুক্ত হতে পারছে। মোবাইল দিয়ে ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া থেকে শুরু করে সবই এখন করা যাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে এসবই এখন অত্যন্ত সহজ বাস্তবতা।
বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে। এটা দেশের জন্য অনেক ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্বে এর ধরন, শৈলী, উৎকর্ষ এবং সঠিক ব্যবহারবিধি জেনে নেওয়াটা জরুরি। মোট কথা প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্বে একে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ না জানা মানুষগুলো প্রযুক্তির কারণে নিজে বিপদে পড়ছে এবং অন্যকে বিপদে ফেলছে। আবার অনেকের বিপথে যাওয়ারও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বিষয়টি এ কারণে বললাম যে, একটি ছেলে বা মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার কাজ পড়ালেখা করা। নতুন নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদন চর্চা করা। পাশাপাশি প্রযুক্তির সঙ্গেও পরিচিত হওয়া। কিন্তু এ প্রযুক্তির কতটুকু তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করছে? খুব অবাক করা বিষয় হলো, একটি সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে/মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে! তার কি ফেসবুক ব্যবহার করার বয়স এটি? যে বয়সে এ শিশুটি নিজের চারপাশ সম্পর্কে জানার কথা, সে কিনা ফেসবুক কিংবা কম্পিউটার গেম নিয়ে পড়ে আছে। তাহলে তার ভবিষ্যত কী?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন অনেক কিছুর বিকল্প হতে শুরু করেছে। যার কারণে মানুষ টেলিভিশন কম দেখছে, পত্রিকা কম পড়ছে! মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা অনেকাংশেই কব্জা হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক কিছু পরিবর্তন করেছে, এটা সত্য। অপরপক্ষে টিকটক, লাইকি, ভিমো এবং এমন আরও কিছু অ্যাপ মানুষের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দিচ্ছে। এসব মাধ্যমে ভালো কিছু যে একদমই হয় না, তা নয়।
তবে তা সংখ্যায় অনেক কম। এসব মাধ্যমে মানুষ কী করছে মাঝে মাঝে নিজেরাও জানে না। এখানেও সেই শিশু, অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ যাদের হাতে তারা ঝুঁকিতে। শিশুরা বুঝে, না বুঝে এসব মাধ্যম ব্যবহার করছে এবং নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎটি ঝুঁকিতে ফেলছে।
এছাড়া যারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারাও কি নিরাপদ? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে সবাই তার নিজের সব তথ্য ঝুঁকির মধ্যে রাখে। যে কারণে একজন মানুষের সমস্ত তথ্য চুরির মতো ঘটনা ঘটে। যার কারণে একজন মানুষের খাবার, চলাফেরা, জীবনধারণ ও পারিপার্শিকতা সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে একটি অ্যাপ! আপনি কেমন খাবার পছন্দ করেন, কোথায় কোথায় ঘুরতে পছন্দ করেন কিংবা কোথায় কোথায় যান, এসব তথ্য জানার মাধ্যমে আপনার ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে এসব অ্যাপ।
বিশ্বায়নের এ যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক, এটা কখনোই চাওয়া হতে পারে না। এরপরও সৃষ্টিশীলতা ও টেকসই সমাজ নির্মাণের জন্য আমাদের সবাইকে আরেকটু সচেতন হতে
হবে। নিজের সন্তানের বেড়ে ওঠার সময়টা খেয়াল করতে হবে। একান্ত জরুরি না হলে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, যা বেহাত হলে সমস্যা বা ঝুঁকিতে পড়তে হবে, তা কোনো মাধ্যমে শেয়ার না করা। একটি বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সেটি জানার চেষ্টা করা এবং সেটির সঠিক ব্যবহার করা। সব মিলিয়ে একটি বিষয়ই মূল, তা হলো, বিশ্বায়নের আশীর্বাদ প্রযুক্তি যেন অভিশাপ না হয়!
লেখক: মো. সাফায়েত আলম, নির্বাহী পরিচালক, ‘নগদ’, ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২০
আরআইএস