বাঙালি বন্ধুসুলভ এভং আড্ডা প্রিয়। দুজনে আড্ডা জমানো খুবই কঠিন।
সংবাদ, বিনোদন এমনকি যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে অনলাইন মাধ্যমকে সবাই বেছে নিয়েছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিদের মধ্যে অবসর কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার বা ওয়েনের মতো সামাজিক সাইটগুলোর ব্যবহারও বাড়ছে।
এভাবে একজন অপর জনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা কিংবা দ্রুত বার্তা বিনিময়ে এসেছে চ্যাটরুম। এসব চ্যাটরুমের মাধ্যমে বিনা খরচে কিংবা স্বল্প খরচে সরাসরি দ্রুত ভয়েস, টেক্সট কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলার সুবিধা পাওয়া যায়।
গত ক বছর আগেও দেশে চ্যাটরুমের প্রচলন তেমন ছিলো না। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকের স্বল্প পরিসরে বাংলা চ্যাটরুমের আত্মপ্রকাশ হলেও ওই সময় বাংলাদেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য না হওয়ায় শুরুতে চ্যাটরুম তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বাংলায় ‘দেশি চ্যাট ডটকম’ নামে একটি চ্যাটরুম আত্মপ্রকাশ করে। সংকট আর জটিলতার কারণে ৩-৪ বছর ধরে চলার পর এ রুমটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি ‘আড্ডা এনজয় ডটকম’ নামের বাংলা চ্যাট রুমের আত্মপ্রকাশ হয়।
এবারে রুমটিতে শুরু থেকেই ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ন ফ্রি চ্যাট সুবিধা দেওয়ায় অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ২০০টি চ্যাট রুমের অস্তিত্ব আছে।
গত তিন মাস ধরে ‘বিডি রুম লিস্ট’ বিভিন্ন চ্যাটরুমে নজরদারির মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করছে। বিডি রুম লিস্টের মাসিক জরিপ সূত্র মতে, এ মুহূর্তে দেশি চ্যাট রুমের শীর্ষে আছে ‘আড্ডা এনজয় ডটকম’।
আড্ডা এনজয় ডটকম সূত্র জানিয়েছে, শুরুর দিকে সৌদিআরব থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হলেও বর্তমানে এটি বাংলাদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে এ সাইটের নিবন্ধিত সদস্য ১ লাখ ২৩ হাজার ৩২৭ জন।
এ সাইটে গড়ে প্রতি মুহূর্তে এতে ৫০ থেকে ১০০ জন ইউজার থাকেন। চ্যাটরুমটি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়ায় সব মহলেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি মুহূর্তে তরুণ প্রজন্মের প্রানের স্পন্দনে মেতে আছে আড্ডা এনজয় চ্যাট রুম।
অলাভজনক হলেও শুধু বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিতেই ‘আড্ডা এনজয় ডটকম’ তৈরি। এ চ্যাটরুমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জয় বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখো বাঙালি বসবাস করে। তবে দূরে থাকার কারণে বাংলা ভাষায় মতবিনিময়ের সুযোগটা কমই থাকে।
এদিকে তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ বংশগতভাবে বাঙালি হলেও বিদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করায় বাংলা ভাষার মানুষের সান্নিধ্যে ও চর্চার অভাবে অনেকেই বাংলায় কথা বলতে পারে না। ফলে ওই প্রজন্মের কাছে চির অজানা থেকে যায় বাংলার সব ইতিহাস আর ঐতিহ্য।
একমাত্র বাংলা ভাষার জন্যই প্রাণ দেওয়ার মতো কঠিন আত্মত্যাগ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতির কথাও তারা কোনোদিন জানতে পারে না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে আরও সহজ করে তুলতে এবং সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াই এ চ্যাটরুম কাজ করছে।
সময়ের পরিবর্তনে মানুষ ক্রমেই যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। খেলাধুলা ছাড়াও সংস্কৃতিক চর্চার সীমাবদ্ধতা, সুস্থ বিনোদনের অভাব ও মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের সঠিক ও সহজ মাধ্যমের অভাবে নেশার দিকে হাত বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের যুব সমাজ।
অনেকেই আবার মনের ভাব প্রকাশ করতে না পেরে আত্মহত্যার দিকে পা বাড়াচ্ছে। কিন্তু চ্যাটরুমের মতো সামাজিক সাইট তথা অনলাইন ব্যবহার বাড়িয়ে এসব সামাজিক ব্যাধিও অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
আড্ডা এনজয় ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জয় বাংলানিউজকে বলেন, প্রবাসে তরুণ প্রজন্ম বাংলায় কথা বলতে শিখছে। চ্যাটরুমের মাধ্যমে নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অবাধে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে।
আড্ডা এনজয় ডটকম চ্যাটরুম ব্যবহারকারী মুক্তা জানান, সাধারণত নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু চ্যাটরুমের মতো সামাজিক সাইট ব্যবহারের সমঅধিকারের মাধ্যমে মুক্তমত প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই পুরুষের সঙ্গে নারীরাও চ্যাটরুমের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত মায়াবি নামের এক বাঙালি বলেন, উন্নত দেশে মতবিনিময়ে সামাজিক সাইটগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও এসব মাধ্যম ব্যবহারে বেশ পিছিয়ে।
আড্ডা এনজয় চ্যাট রুমে একই সঙ্গে ভয়েস চ্যাট, লাইভ চ্যাট এবং ম্যাসেঞ্জার অপশন চ্যাট করা যায়। আগ্রহীরা (www.addaenjoy.com) এ সাইটে ইমেইলের মাধ্যমে নিবন্ধন করেই সরাসরি চ্যাট করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময় ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১২