ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য আরও ৭ মিলিয়ন ডলার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২২
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য আরও ৭ মিলিয়ন ডলার

ঢাকা: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাবমেরিন ক্যাবলের ভূমিকা অপরিহার্য। বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ, উন্নত বৈষম্যহীন বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এই ডিজিটাল সংযুক্তির কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার (৮ আগস্ট) তৃতীয় সাবমেরিন ক‌্যাবল সংযোগ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাবমেরিন ক‌্যাবল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাইওয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির এই মহাসড়কে বাংলাদেশ বর্তমানে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৪ এবং সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫ নামক দু’টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় তৃতীয়তো বটেই চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা দ্বিগুণ করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে থাকলাম। বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিমিউই-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইটেনেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এই কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগে আরও ১৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়। সাত মিলিয়ন ডলারের টাকা সোনালী ব্যাংকে পাঠানোর জন্য জমা দেওয়া আছে।  

তিনি বলেন, ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব‌্যান্ডউথের জন‌্য সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী সিমিইউ-৬ কনসোর্টিয়ামকে মোট ৯৪৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হলেও ব্যয় কিন্তু অর্ধেকেরও কম বাড়বে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক‌্যাবলের বাণিজ‌্যিক পরিচালনা শুরু হয়। ২০০৮ সালে ব‌্যান্ড উইথ ক‌্যাপাসিটি ছিল ৪৪ দশমিক ৪৬ জিবিপিএস। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব‌্যান্ড উইথ ক‌্যাপাসিটি ১৮০০ জিবিপিএসে উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে অর্থাৎ গত চার বছরে তা ৩ হাজার ৩৭০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। এর মধ‌্যে ২০০৯ সালে ব‌্যান্ড উইথ ব‌্যবহৃত হয় ১০ জিবিপিএস এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে ৬১৮ জিবিপিএসে উন্নীত হয়। গত চার বছরে সাবমেরিন ক‌্যাবলের ব‌্যান্ড উইথ ব‌্যবহার ২ হাজার ৪২০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে।  

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সাবমেরিন ক‌্যাবল কোম্পানির আয় ২০০৮- ২০০৯ অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৫৯ কোটি থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩৪৪ দশমিক ৮৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।  

মন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য ডিজিটাল অবকাঠামো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিনা মাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৭ লাখ। ২০২০ সালে কোভিড শুরুর প্রাক্কালে দেশে ১ হাজার জিবিপিএস ইন্টারনেট ব‌্যবহৃত হতো। বর্তমানে তা বেড়ে ৩ হাজার ৪৪০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। ব‌্যবহারকারীর সংখ‌্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরও একটি ঐতিহাসিক অর্জন। আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সিমিউই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে।  

মন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৫ সালে সিমিইউ-৬ সংযোগ চালু হওয়ার পর দেশে ২০ হাজার ৪০০ জিবিপিএসেরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ড উইথ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।  

তিনি বলেন, কেবল দেশের চাহিদা নয় এই কোম্পানি এখন বিদেশেও ব্যান্ড উইথ রপ্তানি করছে। ইতোমধ্যে ভারতের আগরতলায় ২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হচ্ছে। ভারতের আসাম রাজ‌্যের রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান তামাবিল সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় ও আসাম রাজ‌্যের জন‌্য সাবমেরিন ক‌্যাবলের মাধ‌্যমে ব‌্যান্ড উইথ সরবরাহের জন‌্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এছাড়া ভুটান বাংলাদেশ থেকে ১০ জিবিপিএস ব‌্যান্ড উইথ আমদানি করার জন‌্য লেটার অব ইনটেন্ট দিয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ড উইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সৌদি আরবে আমরা ৬০০ জিবিপিএস এবং ফ্রান্সে ১৩ জিবিপিএস ব‌্যান্ড উইথ রপ্তানি করছি। এছাড়াও সৌদি টেলিকমও আরও ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২২
এমআইএইচ/আরআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।