ঢাকা: তথ্য ও প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশি তরুণ ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানিয়েছেন আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (এনপিও) কো-ফাউন্ডার এবং জাপানের কানাযাওয়া ইন্সটিটিউট ফর টেকনোলজির ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কানো সুইয়োশি।
জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি হয়ে আসা ড. কানো বলেন, ২০১২ থেকে ১৫ পর্যন্ত ৩ বছর আমি বাংলাদেশে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জাইকা) প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। এবার আমি সরকারের আমন্ত্রণে এ দেশে এসেছি। এখানে বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের উদ্যোগে রোববার আগারগাঁওয়ে একটি আয়োজনে আমি এই সেক্টরে শিক্ষার্থীদের জন্য বক্তব্য দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমার মূল আলোচ্য ছিল-বাংলাদেশে আইসিটিতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া। এই খাতের উন্নয়নে জাপানি সরকার এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) একসঙ্গে কাজ করেছে।
ড. কানো বলেন, জাপানে আইসিটি সেক্টরে তরুণ ইঞ্জিনিয়ার সংকট আছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে রয়েছে চাকরি সংকট। এখানে সদ্য পাশ করা ইঞ্জিনিয়াররা সহজে কাজ পান না।
এর আগে আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম এরকম তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে। প্রকল্পটি হলো বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম (বি-জেট)। সেখানে আমরা মোট ২৬৫ জনকে ট্রেনিং দিয়েছি। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ লোক বর্তমানে জাপানে কাজ করছেন। আমরা এই ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫-১৬ বার আমরা এ ধরনের ট্রেনিং-এর আয়োজন করেছি।
বাংলাদেশে আইসিটি খাতে কী ধরনের উন্নতি দেখছেন সে সময়ের তুলনায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. কানো বলেন, আগের তুলনায় এই খাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন ফোন, ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। এ দেশে একজন হকার, রিকশাওয়ালাও এখন মুঠোফোন ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, আমি যখন ২০১৫ সালে এইদেশে এসেছিলাম, তখন ঢাকায়ও ইন্টারনেট অনেক ধীরগতির ছিল। কিন্তু, এখন অনেক দ্রুত আগের তুলনায়।
জাপান যেতে হলে এ দেশের তরুণদের প্রতি পরামর্শ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. কানো বলেন জাপানে এ দেশের তরুণদের কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আরেকটা পয়েন্ট আছে যেটা বলা দরকার। এদেশের এবং জাপানের সংস্কৃতির অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি বলব না এটা ভালো না খারাপ।
আমি বলব, আইটির পাশাপাশি কমিউনিকেশন, লিডারশিপ স্কিলের মতো সফট স্কিলগুলো যদি তরুণরা আয়ত্ত্ব করতে পারেন, তাহলে জাপানে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জাপানে কাউকে নিয়োগ দিলে তাকে কমপক্ষে ৭ মাস ট্রেইনি হিসবে কাজ করতে হয়। কাজেই, এই ধরনের দুর্বলতা কারো থাকলেও সেটি কাটানো সম্ভব।
শিল্প-কারখানায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে আগ্রহী?
কানো বলেন, আগ্রহী কিনা জানি না সঠিক, এটা যেহেতু সরকারের ব্যাপার। কিন্তু, জাপানে বর্তমানে এমন লোকও আছেন যারা গত ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে কী কী সমস্যা মোকাবিলা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সুইয়োশি বলেন, আমার দৃষ্টিতে প্রধান সমস্যা ২টি। একটি হচ্ছে জাপানি সংস্কৃতি পুরোপুরি বুঝতে না পারা এবং কাজের প্রতি কমিটমেন্ট৷
তিনি বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য ভাষা একটি সমস্যা। বাইরে থেকে যারা যান, তাদের ভাষাগত দক্ষতা যেহেতু খুবই সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে আন্তর্জাতিকভাবে কাজের ক্ষেত্রে এটি একটি সমস্যা। তবে, এখন কিছু-কিছু জাপানি যোগাযোগের জন্য ইংরেজি ভাষা জানা লোক নিয়োগ দিচ্ছেন।
জাপান বাংলাদেশের আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারদের আরো সুযোগ দিতে চায়।
প্রসঙ্গত, তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে বসেই চাকরি নিয়ে যারা জাপানে যেতে চান, তাদের জন্য সুখবর। বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম (বি-জেট) এ সুযোগ করে দিয়েছে। আপনার যদি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকে, তাহলে আপনিও এই প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে ২০১৭ সালে বি-জেট প্রোগ্রাম চালু করে। ‘জাপানিজ আইটি সেক্টরের উপযোগী করে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীন এ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে।
সাধারণত বছরে দুবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বছরের শুরুতে জানুয়ারি ও জুলাই মাসে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বি-জেটের ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
এমকে/এসআইএস