ক্রিপ্টোকারেন্সির কথা কে না জানেন। অল্প বিনিয়োগে বিপুল উপার্জনের লক্ষ্যে অনেক মানুষ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছে।
শুরুর দিকে ক্রিপ্টোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল মানুষের মনে। তাই বিনিয়োগও কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তা পায়। লাভের পরিমাণ লাফিয়ে বাড়তে শুরু করলে অনেকেই বিনিয়োগ করেন ক্রিপ্টোতে।
‘ব্লকচেনে’র ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে ‘হ্যাক-প্রুফ’ করা গেছে বলে দাবি বিভিন্ন সংস্থার। তাতে সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বেড়ে যায় ক্রিপ্টোর। কিন্তু এর মধ্যেই যে বিপুল প্রতারণার ছক কষা চলছিল, তা কে জানত?
ক্রিপ্টোর স্বল্প ইতিহাসে এমন এক কেলেঙ্কারি রয়েছে, যার কথা শুনলে বিনিয়োগকারীদের গলা শুকিয়ে যায়। এই কেলেঙ্কারির কথা বললেই যার নাম চলে আসে তিনি ‘ক্রিপ্টোকুইন’ নামে পরিচিত রুজা ইগনাতোভা। তার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে বহু মানুষ।
ক্রিপ্টোর বিপুল জনপ্রিয়তার সুবিধা নিয়ে রুজা গড়ে তোলেন নিজের সাম্রাজ্য। তার সৌন্দর্যের জালে আটকে যেত শিকার। আর একবার শিকার ফেঁসে গেলে কথার জাদুতে মুগ্ধ করে সর্বস্ব লুট। এভাবেই হাজারো কোটি টাকা লুটেছিলেন রুজা।
রুজার সৌন্দর্য আর কথার জাদুতে মজে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বহু মানুষ। এই বিনিয়োগ হাতিয়ে রুজা হয়েছিলেন ৩০ হাজার কোটি টাকার মালিক।
২০১৪ নাগাদ রুজা ‘ওয়ানকয়েন’ নামে এক ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আনেন। তাতে রাতারাতি বড়লোক করে দেওয়ার টোপ দেওয়া হতে থাকে। সেই টোপে পড়েন অনেকেই। প্রাথমিকভাবে মুনাফা হলে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। প্রায় ২ বছর ধরে চলে ওয়ানকয়েন। রুজার আশ্বাস ছিল, এক দিন ওয়ানকয়েনের মূল্য বিটকয়েনকেও ছাড়িয়ে যাবে।
মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য রুজা বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে নানা সেমিনার করতেন। সেই সেমিনারে শোনাতেন মনগড়া নানা কাহিনী। নামিদামি পত্রিকায় প্রকাশ হতো রুজার ওয়ানকয়েনের বিজ্ঞাপন। এতে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
ওয়ানকয়েনের সবচেয়ে ছোট বিনিয়োগ মূল্য ছিল ১৪০ ইউরো। সর্বোচ্চ এক লাখ ১৮ হাজার ইউরো। রুজার সংস্থা বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করা অর্থ ডলার বা ইউরোতে বদলানো সম্ভব।
রুজার ওয়ানকয়েন এগোতে থাকলেও কয়েকজনের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। তারা রুজার কাছে জবাব চায়। সব জবাবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সালে উধাও হয়ে যান রুজা। পরে জানা যায়, ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ক্রিপ্টোকুইন।
বহু মানুষ পথে বসে। সারা বিশ্বের পুলিশ এবং বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা এখনও রুজাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় একেবারে শুরুর দিকেই নাম রয়েছে রুজার।
১৯৮০ সালের ৩০ মে বুলগেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন রুজা। ছেলেবেলায় জার্মানি চলে আসেন তিনি। পড়াশোনায় দুর্দান্ত রুজা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। চাকরি করতেন ম্যাকিনসেতে। পরে তিনি নিজের ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে মাঠে নামেন।
রুজার বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, তার জন্য তাকে অন্তত ২০ বছর জেলে থাকতে হবে। কিন্তু তিনি পালিয়েছেন পাঁচ বছর হয়ে গেছে। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ছুঁতেও পারেনি। এর মধ্যে শোনা গিয়েছিল রুজা এখন দুবাইয়ে থাকছেন।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো রুজার কেলেঙ্কারিকে কুখ্যাততম আখ্যা দিয়েছে। অনেকে মনে করেন। বিশ্বের প্রভাবশালীদের সঙ্গে হাত রয়েছে তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
আরএইচ