ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্ত্রই ব্যবহার করছে রাশিয়া!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্ত্রই ব্যবহার করছে রাশিয়া!

‘হোয়াইট সোয়ান’ নামে পরিচিত ‘টিইউ-১৬০’ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী ও দ্রুতগতির সুপারসনিক বোমারু উড়োজাহাজ। সোভিয়েত নকশার এই যান এক নাগাড়ে অর্ধেক পৃথিবী চক্কর দিতে পারে।

মাটি থেকে ২০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে এটি ৪৫ টনের বোমা বা ডজনখানেক কেএইচ-৫৫ নিউক্লিয়ার মিসাইল নিয়ে চলতে পারে।

মস্কোর হাতে এমন ১৬টি হোয়াইট সোয়ান আছে। দেশটি পশ্চিমাদের সঙ্গে নতুন করে সৃষ্টি হওয়া বিরোধে এসব বোমারু যান ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশসীমা ভাঙতে উত্তর মেরুর ওপর দিয়ে এসব উড়োজাহাজ উড়িয়েছে, নেমেছে ভেনেজুয়েলায়, সিরিয়ায় ছুড়েছে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

গত বছরের মার্চ থেকে এই হোয়াইট সোয়ান ইউক্রেনে নরক নামিয়েছে। রাশিয়ায় ভলগা নদীর তীরবর্তী সারাতভ শহরের উড়োজাহাজ ঘাঁটি থেকে উড়ে ইউক্রেনের আকাশসীমা ভেদ না করেই এসব যান অ-পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো রাশিয়ার হোয়াইট সোয়ানগুলো একসময় কিয়েভেরই ছিল।  

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। সে সময় উত্তরাধিকার সূত্রে কিয়েভ বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার পায়। এর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রসহ ১৯টি হোয়াইট সোয়ান ছিল। উত্তর ইউক্রেনের প্রিলুকি ঘাঁটিতে এসব হোয়াইট সোয়ান রাখা ছিল। রাশিয়ার কাছে ছিল মাত্র দুটি বোমারু উড়োজাহাজ।  

পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কিয়েভসহ অন্যান্য সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মস্কোকে ফেরত দেয়। সোভিয়েত ভেঙে নতুন ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়, যেগুলো কঠিন অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেসব দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকায় ওয়াশিংটন অনেকটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

১৯৯১ সালে কিয়েভ বলেছিল, ১০ বছরের মধ্যেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী সব বোমারু উড়োজাহাজ ছেড়ে দেবে। ১১টি হোয়াইট সোয়ান, ২৭টি ছোট টিইউ-৯৫এস, ৫০০ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১৩০ এসএস-১৯ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং এদের নিয়ন্ত্রণ ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করার জন্য অর্থায়ন করে ওয়াশিংটন।

১৯৯০ দশকের শেষ ও একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শুরুর দিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য কিয়েভের কয়েক মিলিয়ন ডলারের ঋণ বাবদ অস্ত্রের বড় একটি চালান নিয়ে নেয় রাশিয়া। এই চালানে ছিল প্রায় ৫৭৫টি কেএইচ-৫৫ সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যা হোয়াইট সোয়ানে ব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে ছিল ৩৮৬টি কেএইচ-২২ ক্ষেপণাস্ত্র।    

২০২২ সালে রাশিয়া সেইসব কেএইচ-৫৫ ব্যবহার করে সেই দেশের বিরুদ্ধে, যে দেশ তাদের এসব পাঠিয়েছে। মস্কো তাদের নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্রযুক্ত ব্যালাস্ট সরিয়ে ইউক্রেনের মূল অবকাঠামোগুলোতে হামলার সময় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এক ধরনের ফাঁদে ফেলে।  

আজকের দিনে ইউক্রেনের স্বেচ্ছায় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর অনেকটা অযৌক্তিক মনে হয়। তবে ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে ভূ-রাজনীতি ছিল অনেকটাই আলাদা। কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারিয়া পোপোভা আল জাজিরাকে বলেন, এটি ছিল সে সময় রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে সহযোগিতা ও শুভেচ্ছার বিষয়।  

১৯৯৪ সালে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয় যা ইউক্রেনের নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করে। এর তিন বছর পর কিয়েভ মস্কোর সঙ্গে একটি বন্ধুত্বের চুক্তি সই করে এবং ন্যাটোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের চুক্তি করে।

অস্ত্রের ধ্বংস ও হস্তান্তর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে চরম ঘাটতি তৈরি করে এবং নজিরবিহীন এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির দিকে নিয়ে যায়। সেই অস্ত্র হস্তান্তর প্রায় এক বছর আগে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে হিতে বিপরীত হয়।  

গেল ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, অক্টোবরে রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইউক্রেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামলার ধ্বংসযজ্ঞে বিশেষ একটি বিষয় দেখতে পান। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় সেই কেএইচ-৫৫ সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশ। নিউক্লিয়ার অস্ত্র বহনে এই মডেল ডিজাইন করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনের অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল। আর তা ৯০ এর দশকে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।