সৌদি আরব থেকে মিয়ানমার, ইরাক থেকে ইথিওপিয়া- বিশ্বজুড়ে আরও অনেক দেশ নিজেদের সামরিক বাহিনীতে চীনের তৈরি যুদ্ধ ড্রোন যুক্ত করেছে। এমনকি সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রেও মোতায়েন করছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট একটি বিধ্বংসী বিমান অভিযানের অংশ হিসেবে ইয়েমেনে চীনের তৈরি ড্রোন পাঠিয়েছিল। সেটি আনক্রুড এরিয়াল ভেহিক্যাল বা ইউএভি নামেও পরিচিত। ড্রোনটি গত আট বছরে আট হাজারেরও বেশি ইয়েমেনের বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।
ইরাক বলছে, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটি আইএসআইএলের লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে ২৬০টিরও বেশি বিমান হামলা চালাতে চীনের ড্রোন ব্যবহার করেছে। হামলাগুলোর সাফল্যের হার প্রায় ১০০ শতাংশ।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী চীনের তৈরি ড্রোন দিয়ে সজ্জিত। দুই বছর আগে তারা ক্ষমতা দখলের বিরোধিতাকারী বেসামরিক নাগরিক ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে।
চীনের যুদ্ধ ড্রোনের অন্যান্য ক্রেতা হচ্ছে- মরক্কো, মিশর, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), পাকিস্তান ও সার্বিয়া। এসব ড্রোন দিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে ক্ষেপণাস্ত্রও চালানো হয়ে থাকে।
বিশ্বব্যাপী অস্ত্র স্থানান্তরের হিসাব রাখে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে- চীন গত এক দশকে ১৭টি দেশে প্রায় ২৮২টি যুদ্ধ ড্রোন সরবরাহ করেছে। এই সংখ্যা দেশটিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্রযুক্ত বিমান রপ্তানিকারক করে তুলেছে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও নিরস্ত্র নজরদারি ড্রোন রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে।
২০২২ সালে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের (জিএফপি) র্যাঙ্কিংয়ে ১৪২টি দেশের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সক্ষমতার তালিকায় চীনের অবস্থান ৩ নম্বরে।
গত এক দশকে যুদ্ধ ড্রোনের বিশ্ব বাজারে চীনের আধিপত্য রয়েছে। এই বাজারের আংশিক রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত হয়। কারণ চীন নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘বিশ্বমানের’ করতে চায়।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) সিনিয়র ফেলো জন শাউস বলেছেন, ‘ড্রোনগুলো চীনের তথ্যভিত্তিক যুদ্ধের ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ’
‘এ ধরনের উন্নত ব্যবস্থা চীনকে কোনো সামরিক কর্মী ছাড়াই দূরের মিশন পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয়’- তিনি যোগ করেন।
এদিকে ড্রোন রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো হামলা চালায়নি চীন। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্ব-শাসিত তাইওয়ান সফরের পর দেশটির চারপাশে চীন যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করেছিল।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজস্ব ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেনি তারা। এবং তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যেকোনো সংঘর্ষে চীনের পক্ষে ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চীনের সামরিক বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ ফু কিয়ানশাও সেপ্টেম্বরে কমিউনিস্ট পার্টির মালিকানাধীন গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েডকে বলেছিলেন, তাইওয়ান প্রণালীতে সংঘাতের ক্ষেত্রে চালকবিহীন বিমানটি (ড্রোন) মোতায়েন করা প্রথম অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হবে। তখন পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও বলেছিলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) যেকোনো যুদ্ধের শুরুতে ভূখণ্ডের আকাশ প্রতিরক্ষাকে অভিভূত করতে বিপুল সংখ্যক ড্রোন ব্যবহার করতে পারে।
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এমএইচএস