ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিশাল পরিবহন ধর্মঘটে স্তব্ধ গোটা জার্মানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
বিশাল পরিবহন ধর্মঘটে স্তব্ধ গোটা জার্মানি

শ্রমিক সংগঠনের ডাকে বিশাল ধর্মঘটে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানি। সোমবার থেকে দেশটিতে চলছে না ট্রাম-বাস, ট্রেন কিংবা বিমান।

মূল্যস্ফীতির মুখে বেতন ও মজুরি বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিষেবা ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন ভ্যার্ডি এবং রেল ও পরিবহণ ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠন ইভিজি।

সোমবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে। এছাড়াও এমন খবর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স ও এপি।

ডয়েচে ভেলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রোববার (২৬ মার্চ) মাঝরাত থেকে সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত জার্মানিতে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ করে দিতে এ বিশাল ‘সতর্কতামূলক’ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

ধর্মঘটের ডাক দেওয়া সংগঠন ভ্যার্ডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং ইভিজির প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার। সরকার ও পৌর স্তরের শ্রমিক-কর্মীদের জন্য মোটা অংকের বেতন বৃদ্ধির দাবি করছে তারা। ভ্যার্ডি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও ইভিজি ১২ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি চেয়েছে। এ অবস্থায়, সোমবারই মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি আবার শুরু হওয়ার কথা।

ভ্যার্ডি-র মতে, প্রথমে করোনা মহামারি, তারপর ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিক-কর্মীদের দুরবস্থা অন্তত কিছুটা হলেও লাঘব করতে এ দাবি ন্যায্য। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে গোটা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঞ্চল ও ক্ষেত্রে ধর্মঘটের মাধ্যমে কর্মদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে শ্রমিক সংগঠন। ভ্যার্ডি-র প্রধান ফ্রাংক ভ্যার্নেকে বলেন, এটা হাজার হাজার কর্মীর বেঁচে থাকার প্রশ্ন।

অন্যদিকে, সরকার ও পৌর স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলি শ্রমিক সংগঠনের এ দাবিকে অবাস্তব বলে বর্ণনা করছে। তাদের মতে, সরকারি কোষাগারে এমন অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই। বিশেষ করে পরিবহণ ক্ষেত্রে বেতন বেশি বাড়ালে ভাড়া ও বাড়তি কর চাপিয়ে সেই অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। জার্মানির রেল সংস্থা ‘ডয়চে বান’ এ ধর্মঘটকে ‘সম্পূর্ণ মাত্রাহীন, ভিত্তিহীন ও অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

দেশটিতে ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জ্বালানির দাম হুহু করে বেড়ে গেছে৷ ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর মূল্য থেকে শুরু করে বাসাভাড়া এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেছে৷ জ্বালানি সংকট দেখা না দিলেও মূল্যস্ফীতির রাশ টান টানতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ইউরো এলাকার তুলনায় জার্মানির মূল্যস্ফীতির হার বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত বছরের তুলনায় নয় দশমিক তিন শতাংশ বেশি ছিল।

সোমবারের ধর্মঘটের ফলে নিত্যযাত্রীসহ সাধারণ মানুষ ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে বাসায় থেকে ‘হোম অফিস’ করার সুবিধা যাদের নেই, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। জার্মানির হাইওয়ে পরিচালন সংস্থার কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় অনেক হাইওয়েতে অবরোধের আশঙ্কা রয়েছে।

ভ্যার্ডি-র প্রধান ভ্যার্নিকে মানুষের দুর্দশার কথা মেনে নিয়েও বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কর্মীদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে এছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন। পণ্যের পরিবহনে বিঘ্ন এড়াতে জার্মানির পরিবহনমন্ত্রী ফল্কার ভিসিং রোববার ট্রাক চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।