তুরস্কে চলছে দেশটির আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচন। রোববারের এই ভোটের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হবে ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ।
নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলু। এই প্রার্থী নির্বাচিত হলে এরদোয়ান যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ২০১৬ সালে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে নেন।
এই নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ পেতে হবে। নতুবা দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়া হবে।
তুরস্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটাররা লাইন দেন। তুরস্কের ভোটাররা এমন এক সময়ে এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন যখন তাদের কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
দেশটিতে মূল্যস্ফীতি এখন লাগামছাড়া। সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ। কিন্তু অনেক মানুষের ধারণা এটি আসলে অনেক বেশি হবে।
অন্যদিকে তুরস্কের ১১ টি প্রদেশ সম্প্রতি দুই দফা ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অর্থনীতির প্রথাগত নিয়ম ভেঙে যেভাবে সুদের হার কমিয়েছেন, তার ফলে তুরস্কে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ওই একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছিল।
নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দেবেন যে ৫০ লাখ ভোটার, তারাই এবারের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে, যদিও জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশে থাকা প্রায় ১৭ লাখ প্রবাসী তুর্কি ভোটার এরইমধ্যে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। সেখানে ভোটদানের হার ছিল ৫৩ শতাংশ।
বিরোধী দলগুলো প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ব্যালট বাক্সের ভোট গণনা তদারকি করতে তাদের স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে, যাতে সেখানে কোন জালিয়াতি হতে না পারে।
চার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর একজন মুহাররেম ইনচে ভোটের তিন দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
রোববারের ভোটে তুরস্কের মানুষ ৬০০ এমপি নির্বাচনের জন্যও ভোট দিচ্ছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছেন, তারপরও নতুন আইন প্রণয়নে পার্লামেন্ট এখনো মুখ্য ভূমিকা রাখে।
তুরস্কের নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়ম অনুযায়ী কোন দলকে পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে অন্তত ৭ শতাংশ ভোট পেতে হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলো আসন পাওয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচনী জোট বাঁধে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একে পার্টি পিপলস অ্যালায়েন্স জোটের অংশ। এই জোটে আরও আছে কট্টর জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এবং অন্য দুটি দল।
অন্যদিকে কিলিচদারোগলুর মধ্য বামপন্থী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি জোট বেঁধেছে ন্যাশনালিস্ট গুড পার্টি এবং অন্য চারটি ছোট দলের সঙ্গে।
কুর্দীপন্থী দল এইচডিপি হচ্ছে তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল, তারা আরেকটি জোটের অংশ। তারা প্রচারণা চালায় গ্রিন লেফট জোটের ব্যানারে।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
আরএইচ