ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

মালগাড়ির ওপরে করমণ্ডলের ইঞ্জিন কীভাবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৩
মালগাড়ির ওপরে করমণ্ডলের ইঞ্জিন কীভাবে? ছবি: সংগৃহীত

সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে ভারতের ওড়িশার বালেশ্বেরে তিন ট্রেনের ভয়ংকর দুর্ঘটনার চিত্র।  মালগাড়ির বগির ওপর করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন।

দেখলে মনে হবে, কেউ যেন ধরে বসিয়ে দিয়েছে! পাশেই বেশ কয়েকটি বগি লাইনের দু’দিকে কাত হয়ে  আছে। কয়েকটি বগি উল্টে পড়ে আছে।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে  ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গা বাজার এলাকায় তিন ট্রেনের ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি ঘটে।  

ট্রেনগুলোর একটি শালিমার থেকে চেন্নাইগামী সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস, অপরটি বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং অন্যটি মালবাহী ছিল।

ওড়িশার বাহানগা বাজার এলাকার যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তা দেখলে মনে হবে মালগাড়ির তিন-চারটি বগিকে একেবারে পিষে দিয়ে শেষমেশ একটি বগির মাথায় উঠে থমকে গেছে করমণ্ডলের ইঞ্জিন। মালগাড়িকে পেছন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধাক্কা মেরেছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।  

শনিবার (৩ জুন) সকালেই রেলমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের ঘোষণা করেছেন। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবেন রেলের সেফটি কমিশনার (দক্ষিণ-পূর্ব রেল)। যদিও রেলেরও দাবি, বাহানগা বাজারে কোনো মুখোমুখি বা পেছন থেকে সংঘর্ষের ঘটনা হয়নি। সংঘর্ষ হয়েছে পাশাপাশি।

কিন্তু যেভাবে মালগাড়ির ওপরে করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে গেছে তা দেখলে মনে হবে, পেছন দিক থেকে সজোরে ধাক্কার ফলে এমনটি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, কত গতিতে ধাক্কা লাগলে করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপর উঠে যেতে পারে? রেল যদিও তাদের বিবৃতিতে মালগাড়ির প্রসঙ্গ আনেনি। করমণ্ডল এবং বেঙ্গালুরু সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের বেলাইন হওয়া এবং পাশাপাশি ধাক্কাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। দুর্ঘটনায় সময় কত গতিতে ছুটছিল ট্রেনটি সে বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। তবে করমণ্ডল যে ভালো গতিতেই ছুটছিল, সজোরে ধাক্কার ফলে এমনটি হয়েছে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর পরই করমণ্ডলের সামনের দিকের কয়েকটি বগি একেবারে দুমড়েমুচড়ে যায়। মোট ১৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে যে দৃশ্য বারবারই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, কীভাবে মালগাড়ির ওপরে চেপে বসল ইঞ্জিন? রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অভিজ্ঞদের মতে, যেকোনো ইঞ্জিনের সামনে, বা বগির মধ্যে ও পেছনে ‘বাফার’ থাকে।

ছবিতে মালগাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে, সেটি ভর্তি ছিল। তাদের মতে, ধরে নেওয়া যাক ওই মালগাড়ির পেছনে করমণ্ডল ধাক্কা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মালগাড়ি খালি থাকলে তার বগির পেছন দিকে ঢুকে যেত ইঞ্জিন। কিন্তু ওয়াগনগুলো ভর্তি ছিল বলেই ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের সামনে থাকা বাফার সেটিকে ঠেলে উপরের দিকে তুলে দিয়েছে। যে কারণে ওয়াগনের উপর গিয়ে আটকে গিয়েছে ইঞ্জিন। যদিও এ সবই প্রকাশ্যে আসা ছবি দেখে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল আছে কি না, তা বোঝা যাবে তদন্ত শেষে। রেলও একই কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠিক কী হয়েছে, তা বলা সম্ভব নয়।

ওড়িশার বালেশ্বেরে তিন ট্রেনের ভয়ংকর দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬১ জন নিহত হয়েছেন। ২০ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনা এটি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যে বগিগুলো এখনও ঘটনাস্থলে পড়ে আছে সেগুলোর নিচে আহত-নিহত অনেকেই থাকতে পারেন। স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেনাবাহিনীরও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে যেসব সেনা ঘাঁটি রয়েছে সেখান থেকে জওয়ানদের সহায়তা কাজে যেতে বলা হয়েছে। তারা সেখানে উদ্ধার অভিযান, আহতদের চিকিৎসা দেবে। ইস্টার্ন কমান্ড থেকে সেনা মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দল, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিও মোতায়েন করা হয়েছে।

সূত্র: আনন্দ বাজার

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।