ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারতের গণতন্ত্র-মানবাধিকার ইস্যু মোদির সামনে তুলে ধরতে ৭৫ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
ভারতের গণতন্ত্র-মানবাধিকার ইস্যু মোদির সামনে তুলে ধরতে ৭৫ কংগ্রেসম্যানের চিঠি জো বাইডেন ও নরেন্দ মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন তার  যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্তার সঙ্গে মোদির আলোচনার কথা রয়েছে।

পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেবেন।  

ভারতে গণতন্ত্র স্খলন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংকীর্ণতা, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের মতো গুরুতর বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে আনতে বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ সদস্য।

এই অনুরোধ জানানোয় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের সদস্যরা ভারত সম্পর্কে পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নানা সময়ের প্রতিবেদনের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন।

বাইডেনকে দেওয়া চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা বলেছেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা, ভূকৌশলগত সম্পর্কের পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে চলমান সহযোগিতায় তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

পাশাপাশি তারা এটাও বিশ্বাস করেন, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর কথাবার্তা খোলামেলা, ভণিতাহীন ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে লিখেছেন, দুই দেশের স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আপনি উদ্বেগগুলো সরাসরি তুলে ধরুন।

‘কংগ্রেস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’–এর প্যাডে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এই চিঠি লিখেছেন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং নিম্নকক্ষের সদস্য ও ‘কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাস’–এর চেয়ারপারসন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রমীলা জয়পাল।  

চিঠিতে সই করেছেন উচ্চকক্ষ সিনেটের ১৮ সদস্য ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৫৭ সদস্য। সইকারীদের সবাই ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য। তাদের মধ্যে রয়েছেন গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন। মোদির যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর দিনই চিঠিটি লেখা হলো।

সফর শুরুর আগে মোদি টুইটে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্য, চিন্তাবিদসহ অনেকেই আমার এবারের সফর নিয়ে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এমন সমর্থন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা বাড়াবে।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর আমেরিকার ভিসা দেওয়া হয়নি নরেন্দ্র মোদিকে। তবে ২০১৪ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক বদলে যায়। এরপর একাধিকবার আমেরিকায় গিয়েছেন মোদি। এবার যাওয়ার আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে একান্ত সাক্ষাৎকারে অনেক কিছু বললেন তিনি। হিন্দুস্তান টাইমস।

মার্কিন সফরে যাওয়ার আগে সেদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্রের প্রশ্নের মুখোমুখি হন মোদি। মোদি বলেন, স্বাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী আমি। তাই আমার চিন্তাধারা দেশের বর্তমান মনোভাবের সঙ্গে সামঞ্চস্যপূর্ণ। আমি দেশের সংস্কৃতির মধ্যে নিজের কাজ করার শক্তি খুঁজে পাই। আমার দেশ যেমন, আমি বিশ্বের সামনে ভারতকে সেভাবেই তুলে ধরি। আমি নিজে যেমন, সেভাবেই নিজেকেও বিশ্বের সামনে তুলে ধরি।  

এই সাক্ষাৎকারে ভারতের নাগরিক সমাজ, সংখ্যালঘু, সংবাদপত্র, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ‘কালা কানুন’ প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে মোদিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে বা অভিমত জানাতে চাননি।

ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বাইডেনকে স্মরণ করিয়ে দেন, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা, বহুত্ববাদ দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ধারক। বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে এসব মূল্যবোধ বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই সরকারের নীতি। এবং তা শত্রু–মিত্র দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও এমনটাই করা হয়ে থাকে।

মোদির সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য রশিদা তালিব টুইট করে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তিনি মার্কিন কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ বর্জন করবেন।

সফরসূচিতে যা থাকছে

২১ জুন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের দেওয়া নৈশভোজেও যোগ দেবেন তিনি

২২ জুন মোদিকে হোয়াইট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে। বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার সম্মানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের মাধ্যমে দিনটি শেষ হবে।

২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে মোদি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিন মোদি ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব এবং সুযোগ নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় রোনাল্ড রিগান সেন্টারে মোদি ভারতীয় কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।