ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

একটি বিয়ে বাঁচিয়ে দিল গ্রামের সব বাসিন্দাকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
একটি বিয়ে বাঁচিয়ে দিল গ্রামের সব বাসিন্দাকে

মরক্কোয় ঘটে যাওয়া ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি ইঘিত এনতাগোমোত নামক একটি গ্রামে।  ভূমিকম্পে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘর ধসে পড়লেও বাসিন্দাদের কারও মৃত্যু ঘটেনি।

 

কেবল আহমেদ আইত আলী ওবেলা নামে এক ৮ বছর বয়সী শিশু আহত হয়। একটি পাথর তার মাথায় পড়েছিল। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সে শঙ্কামুক্ত।

অথচ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের খুব কাছেই ইঘিত এনতাগোমোত গ্রামের অবস্থান।  

গ্রামবাসীর বেঁচে যাওয়াটা অলৌকিক কিছু নয়। কারণ, ভূমিকম্পের সময় গ্রামের কেউই ঘরের ভেতরে অবস্থান করছিলেন না।

প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে যখন তাদের পাথর এবং মাটির ইটের ঘরগুলি ধসে পড়ছিল, তখন তারা বাইরে উঠানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত উপভোগ করছিলেন।

সে হিসেবে বলা যায়, একটি বিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে গোটা গ্রামের বাসিন্দাদের।

তারা তাদের চোখের সামনেই দেখছিল তাদের বাড়িগুলো একের পর এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। সেই মুহূর্তকে তারা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণও করেছেন।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংগীতশিল্পীরা দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বাঁশি ও ছাগলের চামড়ার তৈরি ড্রাম বাজাচ্ছেন। এ সময় হঠাৎ করেই ভূকম্পন, শুরু হয় হৈ-হুল্লোড় ও মানুষের আর্তনাদ। বিয়েবাড়ির আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নেয় আতঙ্কে।

শনিবার কেট্টো গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই বিয়ের। কিন্তু প্রথা অনুসারে কনের পরিবার বিয়ের আগের রাতে একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করে।

বিয়েটা হচ্ছিল ইঘিত এনতাগোমোত গ্রামের বাসিন্দা হাবিবা আজদির (২২) সঙ্গে আপেল চাষি মোহাম্মদ বৌদাদের (৩০)।

ভূমিকম্পের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও মঙ্গলবার এ নবদম্পতিকে দেখা গেল বিয়ের পোশাকেই। স্ত্রী হাবিবার পাশে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ। তিনি বলছিলেন, কম্পনটির সময় খুব ভয় পেয়েছিলেন।

মোহাম্মদ বলেন, আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপন করছিলাম। এরইমধ্যে ভূমিকম্প হয়। আমি তার (হাবিবা) গ্রাম নাকি আমার গ্রাম নিয়ে দুশ্চিন্তা করব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। বিয়ে উদযাপনের জন্য ১৫০ টি মুরগি এবং ৩০ কেজি ফল কিনেছিলাম। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে এর বেশিরভাগই এখন পচে গেছে। (বিশ্রামের জন্য) আমরা এখন শুধু একটি তাঁবু খুঁজছি।

ইঘিত এনতাগোমোতের বাসিন্দারা যখন বেঁচে গিয়ে যখন নতুন করে জীবন শুরু করছে তখন জানা গেলে, তাদের কয়েক কিলোমিটার নিচে পাহাড়ি রাস্তায় মারাক্কাশের দিকে তিকেখতে নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। একটি বাড়িও অবশিষ্ট নেই এবং গ্রামের ৪০০ বাসিন্দার মধ্যে ৬৮ জন মারা গেছেন।

মরক্কোয় শুক্রবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।  

দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা এমএপি জানিয়েছে, তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বহু মানুষ ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।

অ্যাটলাস পর্বতমালার মতো মরক্কোর আরও অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষকে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।