সিরিয়ায় বিপাকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী বাহিনী আরও দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে। দেশটিতে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে সিরিজ বিমান হামলা চালিয়েছে বাশার আল-আসাদ সরকারের মিত্র রাশিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) এমনটি জানায়।
গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের হামলা অন্যতম। এসওএইচআর জানায়, ইদলিব ও হামার গ্রামাঞ্চলে হামলা হয়েছে। এসব অঞ্চল যেখানে বিদ্রোহীদের হামলার নেতৃত্ব দেওয়া গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বিরোধী বিদ্রোহীরা আরও অগ্রসর হওয়ায় দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নেয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার। শনিবার প্রেসিডেন্ট আসাদ ‘সব বিদ্রোহী’ ও তাদের মদদদাতাদের মোকাবেলা করে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার করেন ।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা এসওএইচআর বলছে, বুধবার থেকে লড়াই শুরুর পর অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ৪০০ জনের প্রাণ গেছে।
হায়াত তাহরির আল-শাম কারা?
সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এই গোষ্ঠীর সিরিয়ার সংঘর্ষে একটি দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস রয়েছে।
২০১১ সালে আল-কায়দার সরাসরি সহযোগী হিসেবে জাবহাত আল-নুসরা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এইচটিএস গোষ্ঠী। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি।
গোষ্ঠীটিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রাণঘাতী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বিপ্লবী উৎসাহের বিপরীতে জিহাদি মতাদর্শই ছিল গোষ্ঠীটির মূল চালিকাশক্তি। ফ্রি সিরিয়া নামে বিদ্রোহীদের যে জোট হয়েছিল, সেখানে তাদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা দিয়েছিল।
২০১৬ সালে এই গোষ্ঠীর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি প্রকাশ্যেই আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন এবং জাবাত আল-নুসরাকে বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন তৈরি করেন। এর নামই রাখা হয় হায়াত তাহরির আল-শামস এবং পরে এর সঙ্গে আরও কিছু ছোট গোষ্ঠী যোগ দেয়।
প্রেক্ষাপট
২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ দমনে সরকারি বাহিনীর অভিযানের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হন।
জিহাদিসহ যে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আসাদ সরকারের বিরোধিতা করেছিল তারা দেশটির বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। পরে সিরিয়া সরকার রাশিয়া ও অন্য সহযোগীদের সহায়তায় দেশটির অধিকাংশ এলাকা পুনর্দখলে নেয়।
২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের আলেপ্পো থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী। তবে ইদলিব এখনো বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি।
সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কী বলছে শত্রু-মিত্ররা?
চলমান সংকট নিয়ে আসাদ সরকারের অন্যতম প্রধান মিত্র ইরান তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিকে দামেস্কে পাঠাচ্ছে। দামেস্ক থেকে ইরানি মন্ত্রী তুরস্কে যাবেন। বিদ্রোহীদের কিছু অংশের পেছনে রয়েছে তুরস্ক।
শনিবার আরাগচি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে অংশ নেন। সেখানে তারা রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চলমান আক্রমণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, পরিস্থিতি আসাদ সরকারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি এবং রাশিয়া ও ইরানের ওপর নির্ভরতার ফল।
বিদ্রোহীদের অগ্রগতির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার গ্রামীণ এলাকায় হামলা চালিয়েছে। ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো আলেপ্পোতেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
আরএইচ