ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন পুরনো কোনো ঘটনা নয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন।
দোষ, এ দম্পতি মুসলিম। যে কারণে তাদের সেখানে থাকতে দেয়নি হিন্দু প্রতিবেশীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
খবরে বলা হয়, মোরাদাবাদের অভিজাত এলাকায় একটি নতুন বাড়ি কিনেছিলেন ভুক্তভোগী মুসলিম চিকিৎসক দম্পতি। গত মঙ্গলবার রাতে এ খবর প্রকাশ্যে আসায় প্রতিবাদ শুরু করেন হিন্দু প্রতিবেশিরা। তারা মুসলিম ওই দম্পত্তিকে তাদের কেনা বাড়িতে উঠতেই দেয়নি।
প্রতিবেশিদের দাবি, এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। এখানে অন্য সম্প্রদায়ের কাউকেই থাকতে দেওয়া উচিত নয়।
হিন্দুদের এ ‘প্রতিবাদের’ একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে ঘটনাটি নিয়ে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, মেঘা অরোরা নামে এক নারী বলছেন, তাদের কোনো কিছু না জানিয়েই বাড়ির মালিক ড. অশোক বাজাজ একটি মুসলিম পরিবারের কাছে সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মন্দিরের সামনে মুসলিম পরিবারকে থাকতে দেওয়া যাবে না। এটি আমাদের নারীদের জন্য একটি নিরাপত্তার প্রশ্ন।
মেঘা আরও বলেন, আমরা চাই বিক্রির চুক্তি প্রত্যাহার করা হোক। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, বাড়ির নতুন মালিকদের নামে নিবন্ধন বাতিল করুন। আমরা অন্য ধর্মের লোকদের এখানে আসতে দিতে পারি না। আমরা তাদের প্রবেশ করতে দেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা চলে যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
বিবিসি জানিয়েছে, এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা ড. বাজার ও ওই মুসলিম দম্পতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে।
বিবিসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন ড. অশোক বাজাজ। তিনি জানান, উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসলিম দম্পতিটি তাদের নতুন কেনা বাড়িতে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তারা বাড়িটি একজন হিন্দুর কাছে বিক্রি করে দেবেন।
এ সময় ক্ষোভও প্রকাশ করেন বাজাজি। তিনি বলেন, আমাদের শহরের পরিবেশ আর আগের মতো নেই। এমনটা ঘটবে, আমি কখনোই ভাবিনি।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক তানভীর আইজাজ বলেন, ধর্মীয় মেরুকরণ এখন গ্রাম থেকে শহরেও শিকড় গেড়ে বসছে। এটি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী এবং একটি মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪
এমজে