এশিয়ার শেয়ার মার্কেটে কিছু প্রযুক্তি কম্পানির শেয়ারের দাম অব্যাহতভাবে কমে যেতে শুরু করেছে যা পশ্চিমা বিশ্বে এক ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছে। কিন্তু কী এমন ঘটলো যা নিয়ে মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোলাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত কথা বলছেন?
ঘটনার শুরু গত সপ্তাহে চালু হওয়া একটি চাইনিজ এআই চ্যাটবট বাজারে আসাকে কেন্দ্র করে।
চীনা কোম্পানি ডিপসিক দ্বারা তৈরি এই চ্যাটবট অ্যাপলের স্টোরেও সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপ। এই অ্যাপটির আকস্মিক জনপ্রিয়তা এবং ডিপসিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় তাদের খরচ কম হওয়ায় শেয়ার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক অ্যান্ড্রেসেন ডিপসিক-কে এআই খাতে অন্যতম সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অগ্রগতি হিসেবে প্রশংসা করেছেন। ডিপসিকের দাবি তাদের সর্বশেষ এআই মডেলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পের শীর্ষস্থানীয় মডেলগুলোর সমতুল্য, যেমন চ্যাটজিপিটি; কিন্তু খরচে অনেক কম।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে চীনের হাংজৌ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ডিপসিক আর এআই সহকারী অ্যাপটি ১০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। অ্যাপটির গবেষকরা বলছেন এটি তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের তুলনায় অনেক কম।
ডিপসিক-ভি৩ প্রশ্নের উত্তর দিতে, যৌক্তিক সমস্যা সমাধান করতে এবং নিজস্ব কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখতে সক্ষম, যা বাজারে ইতিমধ্যেই থাকা যেকোনো প্রতিযোগীর মতোই কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে। ডিপসিকের খরচ মার্কিন প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় আমেরিকার এআই আধিপত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কম খরচের ডিপসিক বাজারে আসলে গত ২৭ জানুয়ারি এশিয়ার অর্থ-বাজারকে অস্থির করে দেয়। যার ফলে শক্তিশালী চিপ তৈরি জন্য পরিচিত মার্কিন কোম্পানি এনভিডিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এনভিডিয়া সোমবার প্রায় ৬শ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারিয়েছে, যা মার্কিন ইতিহাসে যেকোনো কোম্পানির জন্য একদিনে সবচেয়ে বড় পতন। কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য এক দিনের মধ্যে ১৭ শতাংশ পড়ে যায়।
বাজার মূলধনের ভিত্তিতে এনভিডিয়া বিশ্বে সবচেয়ে দামি কোম্পানি ছিল কিন্তু সোমবারের (২৭ জানুয়ারি) পতনের পর কোম্পানিটির বাজার দর ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন থেকে কমে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়নে নেমে আসে। বাজার মূলধনের ভিত্তিতে বর্তমানে কোম্পানিটি অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের পরে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
ডিপসিক এনভিডিয়ার তুলনায় কম উন্নত সেমিকন্ডাক্টর চিপ ব্যবহার করে। তাদের এই সাফল্য ‘উন্নত এআই বানাতে আরও উন্নত চিপ প্রয়োজন’ এই ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে, যা এই খাতের ভবিষ্যতের জন্য বিশাল অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, চীনা স্টার্টআপ কোম্পানি ডিপসিকের এই উত্থান আমেরিকার প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫
এমএম