ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মেক্সিকোয় নিখোঁজ

সেই ৪৩ ছাত্র প্রমাণ করিল তারা মরিয়াছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫
সেই ৪৩ ছাত্র প্রমাণ করিল তারা মরিয়াছে! সংগৃহীত

ঢাকা: তাদের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর কতো নাটকই না হলো। নাটকীয়তা দেখালো-সরকার, প্রশাসন, পৃথক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দফতর, এমনকি অপরাধী চক্রগুলোও।

বিভিন্ন সূত্র অনেক আগেই তাদের হত্যা করার কথা বললেও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, তার অধীন প্রশাসনিক বিভাগ, পৃথক পৃথক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ নিয়ে বারবার সন্দেহের ধুয়ো তুলছিল, এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীদের হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলার কথা বলা হলেও আবারও ‘অনিশ্চয়তা’র আজগুবি গল্প ছড়ানো হতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত মেক্সিকোর ওই ৪৩ শিক্ষার্থীর অপহরণের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করলেন, ‘নিখোঁজ কলেজ শিক্ষার্থীদের হত্যাই করা হয়েছে এবং হত্যার পর তাদের পুড়িয়েও ফেলা হয়েছে। ’

আর সেপ্টেম্বরে নিখোঁজ হওয়ার পর এ হত্যাকাণ্ডের খবরটি হতভাগ্য পরিবারগুলো পেল প্রায় চার মাস পর।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোর ইগুয়ালা শহরে বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ওই শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। পরে কৌশলে স্থানীয় কুখ্যাত মাদক চক্র গুয়েরেরোস ইউনিডোসের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনাকে পুরো মেক্সিকোকে স্তম্ভিত করে। আলোড়িত হয় সারা বিশ্বও। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন দেশটির প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েটো। তবে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের সম্মুখীন করার অঙ্গীকার করেন তিনি।

নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা গুয়েরোরো প্রদেশের একটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার দিন পাশ্ববর্তী ইগুয়ালা প্রদেশে একটি বিক্ষোভে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তারা।

এ ঘটনায় মোট ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ইগুয়ালার মেয়র হোসে লুইস আবার্কাও রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিখোঁজের ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। দাবি করা হয়, ওই মেয়রই পুলিশকে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় আটক তিন অভিযুক্ত জানিয়েছিলেন, ইগুয়ালার পুলিশই তাদের হাতে ওই শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়েছে।

ওই তিন ব্যক্তি তখন স্বীকারোক্তিতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, অপহরণের পর আবর্জনার ট্রাকে গাদাগাদি করে ওই শিক্ষার্থীদের ইগুয়ালার নিকটবর্তী কোকুলার একটি মাটি ভরাটের স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছার আগে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ‍মারা যায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।   এরপর বাকিদের গুলি করে হত্যার করে সবগুলো মৃতদেহকে পেট্রোল, টায়ার এবং প্লাস্টিক দিয়ে পোড়ানো হয়। পোড়ানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় নেয় ১৪ ঘণ্টা। এরপর দেহাবশেষগুলোকে চূর্ণ করে ব্যাগে ভর্তি করে নদীতে নিক্ষেপ করা হয়।

নদীতে পাওয়া মানবদেহের ওই অবশিষ্টাংশগুলোকেই পরীক্ষার জন্য অস্ট্রিয়ায় পাঠায় তদন্তকারী দল। অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রাকের একটি গবেষণাগারে পরীক্ষা শেষেই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছালো তদন্ত দল।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর ডিএনএ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া হওয়া গেছে এবং আমরা নিশ্চিত, দক্ষিণাঞ্চলের গুয়েরেরো থেকে অপহৃত সেই শিক্ষার্থীদের সবাইকে খুন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) মেক্সিকো সিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্তকারী দলের প্রধান ও অ্যাটর্নি জেনারেল জেসাস মুরিলো কারাম বলেন, যে তথ্য পেয়েছি তাতে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, ওই শিক্ষার্থীদের অপহরণের পর হত্যা করে পুড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, এই শিক্ষার্থীদের অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বজনরা যে দাবি করেছিল সে দাবিও প্রত্যাখ্যান করেন করম। তিনি বলেন, এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বা জড়িত থাকার প্রমাণের লেশ মাত্র নেই।

তদন্ত শেষ হওয়ার আগেও অ্যাটর্নি জেনারেল শিক্ষার্থীদের হত্যা ও পুড়িয়ে ফেলার কথা বলেছিলেন। তবে, তার ওই বক্তব্য নাকচ করে স্বজনরা বলেছিলেন,  যতক্ষণ কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না ততক্ষণ আমাদের সন্তানরা আমাদের কাছে জীবিত।

বরাবরের মতো তদন্ত শেষেও অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেছেন, কুখ্যাত মাদক চক্র ভুলক্রমে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্রের সদস্য ভেবে ওই শিক্ষার্থীদের অপহরণ করেছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।