ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ক্লাস নিতে গিয়ে শৈশবে ফিরলেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
ক্লাস নিতে গিয়ে শৈশবে ফিরলেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি

ঢাকা: ‘অসম্ভব দুষ্টু ছিলাম শৈশবে। খুব জ্বালিয়েছি মাকে।

একেক দিন মারও খেয়েছি। আমার মনে হয় না, তোমাদের মধ্যে কেউ অতোটা দুষ্টুমি কর...। তবে গ্রামের ছেলে হয়েও অন্ধকারকে খুব ভয় পেতাম। সারাদিন যাই করি না কেন, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পড়িমরি করে ছুটতাম বাড়ির দিকে...। ’

সাড়ে চার দশক আগে যে শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) একদিনের জন্য সে শিক্ষকতায় ফিরে শৈশবের গল্পে গল্পে এভাবেই সময়ের যোগসূত্র তৈরি করলেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

নয়াদিল্লির সরকারি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ সর্বোদয় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গল্পে গল্পে হারানো শৈশব খুঁজে ফিরছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাশালী রাষ্ট্রপতি; ‘আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল ছিল পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে স্কুলে যেতে হতো। বর্ষাকালে রাস্তা যখন পানিতে ডুবে যেতো, তখন একটা গামছা কোমরে বাঁধতাম, অন্য একটা গামছায় স্কুলের পোশাক, বইখাতা বেঁধে মাথায় নিয়ে স্কুলে যেতাম। এতো দূরে যেতে ভাল লাগতো না। মা সান্ত্বনা দিতেন। কেরোসিনের আলোয় পড়তে হত। সেখান থেকে রাইসিনা হিলসে (রাষ্ট্রপতি ভবন) পৌঁছে যাওয়া একমাত্র ভারতের মতো গণতন্ত্রেই সম্ভব। ’

রাষ্ট্রপতির আদ্যন্ত উপভোগের এ ক্লাস মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। প্রণব বলেন, ‘আজ কিন্তু আমি রাষ্ট্রপতি বা রাজনীতিক নই, শুধু তোমাদের মুখার্জি স্যার। ’

প্রণবের পড়ানোর বিষয়টাও অবশ্য ছিল তার নিজের ক্ষেত্র। ‘ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস’। সংবিধান, গণতন্ত্র এবং নেহেরু থেকে মনমোহন পর্যন্ত ভারত সরকারের চ্যালেঞ্জ। এমন একটা সময়ের প্রেক্ষাপট, যার অনেকটাজুড়ে অন্যতম মুখ্য চরিত্র ছিলেন প্রণব নিজেই। পাঠদানের প্রতি পদেই তাই লাগলো ব্যক্তিগত ছোঁয়া। সেজন্যই বারবার ফিরছিলেন ছেলেবেলায়।

প্রণব মুখার্জি তার শিক্ষার্থীদের সাবলীল-প্রাঞ্জল ভাষায় বুঝিয়ে দেন, স্বাধীনতার মূল্য থেকে সরকারের দায়িত্ব। শাসননীতির বিবর্তন থেকে সুশীল সমাজের ভূমিকা। গণতন্ত্রের সার্থকতা ইত্যাদি।

নিজের প্রথম শিক্ষক মায়ের স্মৃতিচারণ করে প্রণব বলেন, ‘দিনভর ঘোরাঘুরির পর ঘরে ফিরলে মা জানতে চাইতেন, সারাদিন কী করেছি। আমাকে পরপর মনে করে বলতে হতো। কিছু বাদ পড়ে গেলে মা শুধরে দিতেন। ছোট্ট গ্রাম, তাই সব গতিবিধিই মা জানতেন। এভাবে রোজ মনে করে বলতে বলতে মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে গেল। ’

প্রণব যখন সংসদে কথা বলতেন, তখনও তার মধ্যে স্নেহশীল কলেজ শিক্ষকের ছায়া দেখেছেন সহকর্মীরা। বর্ষিয়ান রাজনীতিকদের সামনেও নিগূঢ় কথা সহজ করে বুঝিয়ে দিতে জুড়ি ছিল না প্রণবের। শিক্ষক প্রণবের ক্লাসেও তার ব্যতিক্রম হলো না। হয়তো এ দিনের অভিজ্ঞতাই অনেক বিদ্যালয়শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলবে। ঠিক যেমনিভাবে বহুদিন আগে কোনো এক শিক্ষক এখনকার রাষ্ট্রপতির মধ্যে অনুসন্ধিত্‍সা জাগাতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।