ঢাকা: সবার জন্য উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলো। আগামী এক দশক এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রেজোল্যুশনে জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি।
যে সময়টায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি সরকার কিছু ইন্টারনেট সাইট নিষিদ্ধ করেছে বা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঠিক সে সময়টায়ই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট সেবার পুনর্নিরীক্ষণের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, ২০০৫ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯০ জাতির বিশ্ব তথ্য সমাজ সম্মেলনে (ডব্লিউএসআইএস) প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সেবার নীতিমালা চূড়ান্ত হয়। সেই সঙ্গে চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের আচরণের ওপর ভিত্তি করে প্রতি দশ বছর পরপর নীতিমালাটি পুনর্নিরীক্ষণেরও সিদ্ধান্ত হয়।
এক দশক পর ২০১৫ সালে এসে ইন্টারনেট সেবার ব্যাপারে ওই নীতিমালার পুনর্নিরীক্ষণের সময় জানানো হয়, ২০০৫ সালের সিদ্ধান্ত সফল হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী এক দশকের জন্যও এ সেবা বেসরকারি খাতের তত্ত্বাবধানে সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়।
যে সরকারগুলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট নিজ নিজ দেশে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের মধ্যে চীন ও ফ্রান্স অন্যতম। চীনে উইকিপিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর ১৩ নভেম্বর প্যারিস হামলার পর ফ্রান্সে টর ও ফ্রি ওয়াইফাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টর হলো এমন একটি ফ্রি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজের অবস্থান ও পরিচয় গোপন রেখেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট ব্রাউজ করতে পারে।
এছাড়া, বেশ কিছু সরকার ইন্টারনেট সেবা স্থানীয়করণের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা ইন্টারনেট সোসাইটির (আইএসওসি) কাছে ইন্টারনেটে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক নীতির দাবি জানিয়েছে। আইএসওসি একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যা ইন্টারনেটে কন্টেন্টের মান, এ সংক্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও নীতি নির্ধারণে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশগুলোর এ দাবি মেনে নিলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট চিত্রে অসঙ্গতি দেখা দেবে। এ সেবার স্থানীয়করণে ইন্টারনেটের বৈশ্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং সেবাটির নিরবচ্ছিন্নতা বিঘ্নিত হবে।
তবে আগামী এক দশকে সবার জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তে পৌঁছানো খুব একটা সহজ ছিল না। জাতিসংঘে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে দীর্ঘ সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়। ডব্লিউএসআইএস’র সদস্যরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধি, আইএসওসিসহ বেসরকারি অংশীদারদের মতামত যাচাই করেন। পরে এ ব্যাপারে একটি রেজোল্যুশন প্রকাশ করে জাতিসংঘ। এতে তথ্য সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া চারটি মূল স্তম্ভের কথা বলা হয়। স্তম্ভগুলো হলো, ইন্টারনেটে প্রবেশযোগ্যতা, মানবাধিকার ও মুক্তমত, ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা।
তবে প্রকাশিত রেজোল্যুশনটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। সম্মেলনের ‘ফলাফল’ হিসেবেই একে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত আগামী এক দশকে ইন্টারনেট সেবা কেমন হবে, তা এতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে বহু-অংশীদারিত্ব ও তিউনিস এজেন্ডার ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে রেজোল্যুশনটিতে। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তকেই ‘তিউনিস এজেন্ডা’ বলা হয়, যাতে লাইটওয়েট ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ও ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অংশীদারদের বাৎসরিক বৈঠকের কথাও বলা হয়েছে।
আইএসওসি’র বৈশ্বিক ইন্টারনেট নীতির সিনিয়র ডিরেক্টর কনস্ট্যান্স বোমেলায়ের বলেন, যেহেতু আমাদের জীবনের সর্বস্তরেই ইন্টারনেটের প্রভাব রয়েছে, কাজেই তথ্যসমাজ গঠন ও এর নীতির ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সম্মেলনে ইতিবাচক সাড়া মেলায় আশা করা যায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যেহেতু এখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, কাজেই এ সেবার ব্যাপারে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
আরএইচ