ঢাকা: গবেষকদের নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে সম্প্রতি মহামারী আকার ধারণ করা জিকা ভাইরাস। এতোদিন শুধুমাত্র ডেঙ্গুজ্বর ছড়ানো বিশেষ প্রজাতির এডিস এজিপ্টি (Aedes aegypti) মশকির মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা বলা হচ্ছিল।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, টেক্সাসের ডালাসে জিকা আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দৈহিক মিলনের কারণেই তার দেহে এ ভাইরাস প্রবেশ করেছে। রোগী সম্প্রতি দেশের বাইরে ভ্রমণ করেননি, তবে তার সঙ্গী কিছুদিন আগে ভেনেজুয়েলা থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে এটাই প্রথম জিকায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। এর আগে টেক্সাসে সাতজন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। তবে তারা সবাই দেশের বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট হেলথ সার্ভিসেস।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (সিডিসি) উপ-পরিচালক আন্নে শচাত বলেছেন, দেশের বাইরে ভ্রমণ করেননি কিন্তু জিকায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটলো। আমরা বিশ্বাস করি না, রোগী মশার কামড়েই আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করছি, দৈহিক মিলনের মাধ্যমে তার দেহে জিকা ভাইরাস প্রবেশ করেছে।
এক বিবৃতিতে সিডিসি বলেছে, জিকা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা এবং যিনি জিকা আক্রান্ত তার সঙ্গে দৈহিক কোনো মিলনে না যাওয়া। বিশেষ করে শুক্রানুর মাধ্যমে এ ভাইরাস রোগীর দেহ থেকে সুস্থ্য মানুষের দেহে প্রবেশ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউএন ফাউন্ডেশনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র ফেলো আলাকা বসু বলেছেন, ডালাসের ওই বাসিন্দা সত্যিই যদি দৈহিক মিলনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টা চিন্তার। কারণ এইচআইভি (এইডস রোগের ভাইরাস) ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, জিকার ক্ষেত্রেও এখন তা করতে হবে।
সিডিসি’র ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, দৈহিক মিলনে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম না। ২০১৩ সালে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া এলাকায়ও একজন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন, যার দেহে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে জিকা প্রবেশ করেছিল।
উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ সম্প্রতি বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এ ভাইরাসের সংক্রমণের কোনো তথ্য পাননি। আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে এডিস মশার মাধ্যমে এ ভাইরাস সুস্থব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে। ধারণা করা হচ্ছে, গর্ভবতী নারীরা জিকায় আক্রান্ত হলে তাদের সদ্যপ্রসূত সন্তানরা মাইক্রোসেফালি রোগ নিয়ে জন্মায়। অপরিণত বা অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানোকে মাইক্রোসেফালি বলা হয়।
মাইক্রোসেফালির সঙ্গে জিকার প্রাদুর্ভাবের কোনো সংযোগ আদৌ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও অন্ধকারে। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছর এ পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রায় চার হাজার মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৬ জন জন্মের পরপরই মারা গেছে। মারা যাওয়া শিশুদের কয়েকজনের দেহে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বাকি শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে, জিকার প্রাদুর্ভাবেই মাইক্রোসেফালির হার বাড়ছে বলে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নারীদের গর্ভধারণ এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ তালিকায় এল সালভেদর উল্লেখযোগ্য। দেশটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত নারীদের গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় হন্ডুরাসে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়াতে নতুন করে আরও দুই রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি সিডনির ওই দুই বাসিন্দা ক্যারিবীয় অঞ্চল ভ্রমণ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই দেশটিতে নতুন করে ২৭০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে।
এছাড়া, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টোঙ্গায়ও জিকা ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
আরএইচ
** জনস্বাস্থ্যে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি ডব্লিউএইচও’র
** অস্ট্রেলিয়াতেও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
** জিকা ভাইরাস এবার ডেনমার্কে, ব্রিটেনেও শনাক্ত
** এল সালভেদরে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো সন্তান নয়
** অস্ট্রেলিয়াতেও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
** এল সালভেদরে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো সন্তান নয়