ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা বলা হয় ওয়াশিংটন পোস্টকে। ১৯৯৩ সালেও দৈনিকটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ।
প্রযুক্তিগত এ পরিবর্তন সামাল দিতে না পারায় একটা সময় অস্তিত্ব টেকাতেও হিমশিম খেতে হয় ওয়াশিংটন পোস্টকে। শেষ অবধি ‘ইন্টারনেট’ বিষয়ে চোখ খোলে কর্তৃপক্ষের। ১৯৯৬ সালে চালু করা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের ওয়েবসাইট। ফিরতে থাকে তারা আপন গতিতে। পত্রিকায় যে মনোযোগ তার সমান মনোযোগ কর্তৃপক্ষ দেয় অনলাইন ভার্সনেও।
তবে, ইদানীং সমান গতিও ওয়াশিংটন পোস্টকে থাকতে দিচ্ছে না ‘ইন্টারনেট প্রজন্মে’র পাঠকের সঙ্গে। পত্রিকার পাঠক কমে সেটা ধীরে ধীরে অনলাইনে এমনভাবে আসতে শুরু করেছে যে, গতবছর ওয়াশিংটন পোস্টের ডিজিটাল ভার্সনের পাঠক বাড়ে রেকর্ড ৭৮ শতাংশ। যারমধ্যে ৪০ শতাংশেরই বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
এই পরিসংখ্যানে টনক নড়ে যায় গ্রাহাম পরিবার থেকে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিকানা নেওয়া জেফ বেজোসের, যিনি অনলাইনে বই বিক্রি করার সাম্রাজ্য বলে পরিচিত আমাজন ডটকমের সত্ত্বাধিকারী।
ব্যস, আর কথা নয়। ইন্টারনেট উদ্যোক্তা বেজোস সিদ্ধান্ত নিলেন ডিজিটাল পাঠকের চাহিদা মেটাতে আরও ডিজিটাল করে গড়ে তুলতে হবে তার পত্রিকাকে।
রাজধানী ওয়াশিংটনে সেই পরিকল্পনা মতোই ‘ভবিষ্যমুখী অত্যাধুনিক’ কার্যালয় স্থাপন করে সম্প্রতি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন বেজোস ও তার সহকর্মীরা। এই কার্যালয়কে একবিংশ শতাব্দীরই নয়, দ্বাবিংশ শতাব্দীর মতোই করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি করছেন বেজোস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলা হয়, কেবল সকাল বেলায় চোখ বোলানোর পত্রিকা নয়, ওয়াশিংটন পোস্ট হবে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা পাঠকের চাহিদা মেটানোর সংবাদমাধ্যম। এই কার্যালয়ে এক হয়ে কাজ করবেন ‘প্রযুক্তিবিদ ও সাংবাদিকেরা’। ‘প্রযুক্তিবিদ ও সাংবাদিকদের’ সমন্বয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট হয়ে উঠবে ‘দ্বাবিংশ শতাব্দীর’ সংবাদমাধ্যম।
অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকাশক ফ্রেড রায়ান বলেন, নতুন প্রধান কার্যালয় ২০১৬ সালের জন্য নকশা করা হয়নি, বরং যতো সম্ভব আরও দূর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, দ্বাবিংশ শতাব্দীর আদর্শ সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হিসেবে এটিকে স্থাপন করা হয়েছে।
নতুন এই নিউজরুমে থাকছে ভিডিও স্টুডিও, অডিও স্টুডিও ও অসংখ্য ডিজিটাল পর্দা বা স্ক্রিন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদক ও সম্পাদকদের মধ্যে থাকছেন ভিডিওগ্রাফার, ফটোগ্রাফার, ডিজাইনার ও সোশ্যাল মিডিয়া এডিটর।
৭ দিন ২৪ ঘণ্টার এ সংবাদকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক থাকবেন ২০ জন কর্মী। আর তাদের চারপাশে থাকবে ২০টি মনিটর, যাতে ওয়াশিংটন পোস্টের ভিডিওগ্রাফারদের পাঠানো ভিডিও এবং শীর্ষ নিউজ চ্যানেল ইত্যাদি প্রদর্শিত হতে থাকবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দৈনিক ডজনখানেক সরাসরি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের জন্য কার্যালয়ের দু’টি ফ্লোরে চারটি লাইভশট বা কক্ষ থাকছে। থাকছে দু’টি রেডিও স্টুডিও, যেখানে প্রতিবেদকরা সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন, প্রয়োজনে সাউন্ড রেকর্ডিং বুথও ব্যবহার করতে পারবেন তারা। আর কার্যালয়ের লাইভ সেন্টারে করা যাবে উচ্চ-পর্যায়ের অনুষ্ঠান, নৈশভোজ, প্যানেল আলোচনা ও এমন অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি।
অনুষ্ঠানে প্রকাশক রায়ান আরও বলেন, পাঁচ দশক আগে একটি সেরা দৈনিকের কার্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ওয়াশিংটনে। সেখানে ইতিহাস রচিত হয়েছিল। এখন আমরা গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি কোম্পানিতে পরিণত একটি নতুন কার্যালয় পরিচালনা করছি।
ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদক মার্টি বারন বলেন, আমরা একটি বিষয়ই নিশ্চিত করতে পারি, সেটা পরিবর্তন। আর এ পরিবর্তনটা হবে খুব দ্রুত। সৃজনশীলতা নিউজরুমের প্রধান ও কেন্দ্রবিন্দু হবে।
তিনি জানান, এরইমধ্যে ডজনখানেক প্রকৌশলী নিউজরুমে এসেছেন, কেবল আমাদের সাইটকে ‘খুব দ্রুতগতির’ বানানোর জন্যই নয়, সাইটের আধেয় যেন পাঠকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, সে কাজও করছেন তারা।
বারন বলেন, আজকালের পাঠকরা কেবল সংবাদ পড়েন না, এসব সংবাদে নিজেদেরই খুঁজে বেড়ান। সে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও আমাদের কাজের ক্ষেত্র।
সংবাদমাধ্যমটির সত্ত্বাধিকারী জেফ বেজস বলেন, আমি সবসময়ই ‘ভবিষ্যমুখী’ থাকতে পছন্দ করি- কারণ ভবিষ্যৎ সবসময়ই ‘আসছে’।
তার মতে, ওয়াশিংটন পোস্টের পুরনো কার্যালয়ে অনেক স্মৃতিকাতরতার বিষয় আছে, কিন্তু সামনে এগিয়ে যাওয়াটা আরও সুন্দর...!
বাস্তবতার কারণে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেলেও ওয়াশিংটন পোস্ট তার ‘হৃদয়’ বা সংবাদের জায়গা হারিয়ে ফেলবে না বলেও অনুষ্ঠানে জানিয়ে দেন বেজস।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এইচএ/