ঢাকা: জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগে বার্মিংহামের বাসিন্দা জ্যাকুলিন ফক্স (৬২) মারা গেছেন গত বছর। তার এ মৃত্যুই যেন বিপদ ডেকে এনেছে বিশ্বব্যাপী পরিচিত মেডিকেল ডিভাইস ও প্রসাধন প্রস্তুত ও বিপণনকারী ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের।
মৃত্যুর প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও সম্প্রতি জ্যাকুলিনই যেন জী্বন্ত হয়ে ওঠেন মিসৌরির সেন্ট লুইস আদালত কক্ষে। রেকর্ডকৃত তার এক অডিও বার্তায় জানা যায়, ৩৫ বছর ধরে তিনি জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্য ব্যবহার করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেডমার্ক বেবি পাউডার থেকে শুরু করে শাওয়ার-টু-শাওয়ার বডি পাউডার নিয়মিত ব্যবহার করতেন। শুধু সর্বাঙ্গেই নয়, তার যৌনাঙ্গেও পাউডার ব্যবহার করতেন তিনি। মৃত্যুর আগে তার ধারণা হয়, পাউডারের রাসায়নিক ক্রিয়ায়ই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।
মৃত্যুর তিন বছর আগে জ্যাকুলিনের জরায়ুর ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি দেশজুড়ে এক হাজার দুইশ’র বেশি নারীর সঙ্গে আলোচনা করেন। জনসন অ্যান্ড জনসনের পেছনে লাগেন। তার অভিযোগ, প্রসাধন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের ট্যালক ও বেবি পাউডারে ব্যবহার করা খনিজ উপাদানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সাবধানতা দেয়নি। এ নিয়ে একটি মামলাও হয়।
গত সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মিসৌরির সেন্ট লুইস আদালত কক্ষে এ মামলার রায় দেন জুরি বোর্ড। ১২ সদস্যের ওই বোর্ডে একজন পুরুষ ও নয় নারী জুরি জ্যাকুলিনের পক্ষে নিজেদের মত দেন। আর বাকি দুই পুরুষ জুরি জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষে রায় দেন।
জুরিদের মতামত সাপেক্ষে পরে চূড়ান্ত রায়ে ৭২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে বলা হয় জনসন অ্যান্ড জনসনকে। এর মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার (৭৮ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ ও ৬২ মিলিয়ন ডলার (৪৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা) শাস্তিমূলক জরিমানা হিসেবে গুণতে হবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটিকে।
জ্যাকুলিনের পরিবারের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো শীর্ষ একজন আইনজীবী জিম অনডার জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের ৩১ মিলিয়ন ডলার (২৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা) যাবে মিসৌরি ক্রাইম ভিক্টিম কম্পেসেশন ফান্ডে। বাকিটা পাবে জ্যাকুলিনের পরিবার।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জনসন অ্যান্ড জনসন এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রাহকের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেয়ে বড় কোনো দায় আমাদের কখনোই ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু আদালতের এ রায়ে আমরা হতাশ। জ্যাকুলিন ফক্সের পরিবার যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তার জন্য আমরা সমব্যাথী। কিন্তু আমাদের এই প্রসাধন ট্যালক-ই দশকের পর দশক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়ে এসেছে।
মিসৌরির আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি আপিল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জরিমানার খাড়া থেকে পুরোপুরি বাঁচতে না পারলেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ কিছুটা কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন স্ট্যানফোর্ডের আইন বিভাগের অধ্যাপক নোরা ফ্রিম্যান এংস্ট্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
আরএইচ