ঢাকা: সম্প্রতি প্রকাশ হলো মার্কিনীদের ত্রাস ওসামা বিন লাদেনের ‘উইল’। প্রকাশ করলো মার্কিনীরাই।
মূলত আরবিতে নিজ হাতে লেখা ওই চিঠিতে লাদেন সুদানে থাকা তার সম্পদের বন্টন সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আত্মীয় স্বজনদের প্রতি।
কি ছিলো সেই উইলে। সম্পদের ভাগ বাটোয়ারাও কিভাবে করলেন ওসামা বিন লাদেন?
২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের গোপন আস্তানায় কমান্ডো অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল কমান্ডোরা।
এ সময় অ্যাবোটাবাদে লাদেনের আশ্রয়স্থল থেকে হাতে লেখা ওই চিঠিটিসহ ১১৩টি অন্যান্য দলিল জব্দ করে মার্কিন কমান্ডোরা। পরে আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় চিঠিটি।
এতদিন গোপন তথ্য হিসেবে এই চিঠি মার্কিন তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত থাকলেও গত বছরের মে মাসে এই চিঠিটি সহ আরও বেশ কিছু তথ্য উন্মুক্ত করা হয়।
আরবিতে হাতে লেখা ওই চিঠিতে সুদানে থাকা নিজের প্রায় তিন কোটি ডলারের সম্পদ আল কায়েদার তহবিলে প্রদানের জন্য নিজের নিকটাত্মীয়দের প্রতি অনুরোধ করে গেছেন লাদেন। এছাড়া নিজের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ওই সম্পদের একটি ক্ষুদ্রাংশ প্রদান করেন তিনি।
চিঠির অসিয়ত অনুযায়ী, সুদানে থাকা তার ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের মধ্যে এক শতাংশ পাবে শীর্ষ আল কায়েদা নেতা মাহফুজ উদ আল ওয়ালিদ। আবু হাফস আল মৌরিতানি নামেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের কাছে বেশি পরিচিত তিনি।
সম্পদের অর এক শতাংশ লাদেন দিতে বলেন তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী আবু ইবরাহিম আল ইরাকি সাদকে। সুদানে লাদেনের প্রথম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াদি আল আকিক’ গঠনের ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন পেশায় প্রকৌশলী ইবরাহিম আল ইরাকি।
আর বাকি অর্থের সম্পূর্ণটুকুই আল কায়েদার কাজে ব্যবহারের জন্য লাদেন তার আত্মীয় স্বজনের প্রতি অসিয়ত করে যান।
লাদেন ওই চিঠিতে বলেন, ‘আমি আশা করবো আমার ভাই-বোন এবং খালারা আমার ইচ্ছা পালন করবে এবং সব অর্থ যা আমি সুদানে রেখে এসেছি তা আল্লাহর পথে খরচ করবে। ‘
এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণে সৌদি রিয়াল এবং সোনা তার মা, পুত্র, কন্যা, চাচা ও চাচার সন্তান এবং খালাদের মাঝে ভাগ করে দিয়ে যান লাদেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধের পর ১৯৯৬ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ বছর সুদান সরকারের অতিথি হিসেবে সেদেশে বাস করে আসছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এরপর মার্কিন চাপে তাকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুদানি সরকার। সুদান থেকে চলে গেলেও তার বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ সুদানেই থেকে যায় বলে ধারণা করা হয়। এই তিন কোটি ডলার তার সেই ধনসম্পদেরই অংশ।
সম্ভবত ৯০ দশকের শেষভাগে এই চিঠিটি লিখেছিলেন লাদেন।
এছাড়া মৃত্যুর আগে ২০০৮ সালের ১৫ আগস্ট ‘আমার প্রাণপ্রিয় পিতা’ শিরোনামে লেখা অপর এক চিঠিতে লাদেন তার মৃত্যুর পর যেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দেখাশোনা করা হয় সে জন্যও অনুরোধ করেছিলেন তার ‘পিতা’র প্রতি।
কিন্তু এটা পরিষ্কার নয় যে চিঠিতে উদ্ধৃত ওই ‘প্রাণপ্রিয় পিতা‘ আসলে কে। কারণ লাদেনের জন্মদাতা পিতা মোহাম্মদ বিন লাদেন ১৯৬৭ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা সৎ পিতা মোহাম্মদ আল আত্তাসের উদ্দেশ্যে এই চিঠিটি লিখেছিলেন লাদেন।
চিঠির শেষ প্যারায় লাদেন তার পিতার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। লাদেন লেখেন, ‘যদি এমন কিছু করে থাকি যা আপনি পছন্দনীয় ছিলো না, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ‘
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৬
আরআই