ঢাকা: মায়ানমারের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে সংসদের নিম্নকক্ষে অং সান সুচি’র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ইউ এইচতিন কিয়াওয়ের নাম প্রস্তাব করেছে গত বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশটির জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয় পাওয়া ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। আর উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘু চীন সম্প্রদায়ের হ্যানরি ভ্যান এইচতি ইউয়ের নাম প্রস্তাব করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দেশটির সংসদের উভয়কক্ষে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এই দুই সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক শাসনের সময় দেশটির সংবিধানে যে সংশোধন আনা হয়েছে, তাতে সুচি’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হতে না পারলে, তার চেয়েও বড় কিছু হয়ে তিনি দেশ পরিচালনা করবেন। বিশ্বস্ত এইচতিন কিয়াও ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হ্যানরির নাম প্রস্তাব করে তিনি তার কথার বাস্তবায়নের পথেই হাঁটলেন। এতে করে সরকারের শীর্ষে না থেকেও তিনি দেশ পরিচালনা করতে পারবেন।
মায়ানমারের ২০০৮ সালের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, বিদেশি কাউকে বিয়ে করলে বা সন্তানরা বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে সেই ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
সুচির দুই সন্তান ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে তিনি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় পড়ে গেছেন।
তবে নিম্নকক্ষে নাম প্রস্তাবেই সিংহাসনে বসার পথটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে না এইচতিন কিয়াওয়ের জন্য। কিংবা উচ্চকক্ষে হ্যানরির নাম প্রস্তাবেও দেশটির শীর্ষপদটি তার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে না। এখন সেনা ব্লক থেকেও একটি নাম উঠে আসবে। মনোনয়ন পাওয়া তিন প্রার্থীর মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা হবে মায়ানমারের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে। হেরে যাওয়া বাকি দু’জন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাবেন। এর অর্থ, দেশটির সেনাবাহিনীও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, মায়ানমারের সংসদের উভয়কক্ষের এক চতুর্থাংশ সেনাবাহিনীর দখলে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ৬৯ বছর বয়সী এইচতিন কিয়াও সুচি’র সঙ্গে একই স্কুলে পড়তেন। বর্তমানে তিনি এনএলডি নেত্রীর দাতব্য সংস্থার দেখভাল করছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহস্পতিবার এইচতিন কিয়াও ও হ্যানরি ভ্যান এইচতি ইউয়ের নাম প্রস্তাবের মাধ্যমে মায়ানমারের নতুন সরকার গঠনের পথে সৃষ্ট অচলাবস্থার নিরসন হলো। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সুচি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না বলে দেশটিতে এতদিন এ ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, সাবেক ক্ষমতাসীন দল ইউএসডিপি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এর বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. সাই মক খামের নাম প্রস্তাব করেছে। যদিও প্রস্তাবের সময় তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিশাল জয় পাওয়ায় সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে সুচি’র এনএলডি-ই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন ও নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে। অর্থাৎ কিয়াও ও ইউয়ের মধ্যে থেকেই একজনকে মায়ানমারের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যাবে। এক্ষেত্রে অবশ্য সুচি’র অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কিয়াওয়ের সম্ভাবনা বেশি। আর এমনটাই যদি হয়, তাহলে এবার মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার দেশটির জনগণকে একজন সংখ্যালঘু ভাইস প্রেসিডেন্ট উপহার দিতে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬/আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা
আরএইচ