ঢাকা: গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের রক্ষণশীল বিচারকদের একজন অ্যান্টন স্ক্যালিয়া (৭৯)। এরপর থেকে দেশটির বিচার বিভাগ পূর্ণ শক্তির নয় বলে আলোচনা হচ্ছে।
রিপাবলিকানদের দাবি, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নতুন যে প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র, তিনিই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। তাদের আশা, ৪৫তম প্রেসিডেন্ট তাদেরই কেউ নির্বাচিত হবেন। আর তার হাতে বিচারক নিয়োগ হলে সর্বোচ্চ আদালতে রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট থাকবে। এ দাবি মানতে হলে পূর্ণ শক্তির সুপ্রিম কোর্ট দেখতে মার্কিনীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের বিচারক প্যানেলে এতদিন পাঁচ/চার-এ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন রক্ষণশীলরা। বিচারক অ্যান্টনের মৃত্যুতে এ সংখ্যা এখন চার/চার-এ সমতায়। প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে যাবে। সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে পড়বেন রক্ষণশীলরা।
এদিকে, রিপাবলিকানদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই অ্যান্টন স্ক্যালিয়ার একজন উত্তরসূরির সন্ধানে থাকা ওবামা প্রশাসন তিনজনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করেছে। এরা হলেন, শ্রী শ্রীনিবাসন, মেরিক গারল্যান্ড ও পল ওয়াটফোর্ড। বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে খবরটি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদমাধ্যম।
যদি চূড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়ার বৈতরনী পেরিয়ে যান ৪৯ বছর বয়সী শ্রীনিবাসন, তাহলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান বিচারক। শুধু তাই নয়, দেশটির সর্বোচ্চ আদলতে তিনিই হবেন প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিচারক। ২০১৩ সালে ওবামা তাকে আপিল কোর্টে নিয়োগ দেন। সিনেটে তখন তার এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ৯৭-০ ভোটে পাস হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান, উভয় দলের প্রেসিডেন্টের অধীনে বিচার বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতে জন্ম নেওয়া ও কেনসাসে বেড়ে ওঠা শ্রীনিবাসনের। তিনি রিপাবলিকান মনোনীত প্রথম নারী সহযোগী বিচারক স্যান্ড্রা ডে ও’কনরের অধীনেও কাজ করেছেন।
অ্যান্টন স্ক্যালিয়ার উত্তরসূরি হওয়ার ব্যাপারে মেরিক গারল্যান্ডের (৬৩) সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউ। বিচারিক প্রক্রিয়ায় তিনিও ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন সমহারে। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটন আপিল কোর্টের প্রধান বিচারক। ১৯৯৭ সালে তাকে নিয়োগ দেন বিল ক্লিনটন। সিনেটে তাকে নিয়োগের প্রস্তাবটি তখন পাস হয় ৭৬-২৩ ভোটে।
আর পল ওয়াটফোর্ড (৪৮) যদি শূন্যস্থান পূরণ করেন, তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় কৃষ্ণাঙ্গ বিচারক। তার আগের কৃষ্ণাঙ্গ বিচারক দু’জন হলেন, থারগুড মার্শাল ও ক্লারেন্স থমাস। ১৯৯১ সালে থারগুড মার্শাল অবসরে যান। ১৯৯৩ সালে তার মৃত্যু হয়। আর ১৯৯১ সালে মার্শালের স্থলাভিষিক্ত হন ক্লারেন্স। তিনি এখনো কর্মরত।
হোয়াইট হাউজের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা পল ওয়াটফোর্ড বর্তমানে আপিল বিভাগের অধীনে সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক নবম মার্কিন সার্কিট কোর্টের বিচারক। ২০১২ সালে তার নিয়োগ প্রস্তাবটি সিনেটে পাস হয় ৬১-৩৪ ভোটে। এর আগে তিনি প্রসিকিউটর ও ব্যক্তিগত আইনপেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান নিয়োগ দিয়েছিলেন অ্যান্টন স্ক্যালিয়াকে। এরপর থেকে এতদিন হাইকোর্টের বেঞ্চে রক্ষণশীলরা পাঁচ/চার-এ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। রক্ষণশীল এই বিচারকরাই সম্প্রতি ওবামা প্রশাসনের জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন পরিকল্পনা স্থগিত করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
আরএইচ
** বিচারপতির শূন্য আসন নিয়ে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি
** মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মৃত্যু