ঢাকা: স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে কোডিনসমৃদ্ধ ফেনসিডিল, কোরেক্স জাতীয় ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। যার প্রভাব পড়েছে কোরেক্স-ফেনসিডিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দু’টির শেয়ারেও।
উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে নেশার দ্রব্য হিসেবে এসব কাশির সিরাপ বেশ জনপ্রিয়। অবৈধভাবে সীমান্ত পাচার করে বাংলাদেশেও দেদারছে প্রবেশ করছে এসব ফেনসিডিল-কোরেক্স।
সোমবার (১৪ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওষুধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি ‘কোরেক্স’ ও ইউএস-জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাবটের প্রস্তুত করা ফেনসিডিলের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে।
খবরে বলা হয়, কোডিনসমৃদ্ধ ওসুধ প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এগুলো নেশার সামগ্রী হিসেবে পূর্ব ভারতে বিভিন্ন ডিলারের কাছে চালানও পাঠানো হতো। সেখান থেকে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশেও পাচার করা হতো।
এসব ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও পাচার বন্ধে ভারতের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। অবশেষে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে ফেনসিডিল ও কোডিন জাতীয় সিরাপ বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো ধরনের ওষুধি গুণাগুণ না পাওয়ায় ভারতে ৩৪৪ ধরনের ওষুধের উপাদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্লোফেনিরিমন ম্যালিট ও কোডিনও আছে।
নিষিদ্ধ এসব উপাদান দেশটির রাজ্যের বাজারে বিক্রি করা হয়। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এদিকে বিবৃতিতে ফাইজার ইন্ডিয়া ইউনিট জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাজারে কাশির সিরাপ কোরেক্সসহ কোডিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি তা বাজার থেকে প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়।
‘সরকার ৩০০-এর বেশি ওষুধ নিষিদ্ধ করেছে, এসব আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে চলতে হবে,’ এভাবে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অপর ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাবট ল্যাবরেটরিজের ইন্ডিয়া ইউনিট।
ফাইজার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত গত ৯ মাসে প্রায় ১৭৬ কোটি রুপির কোরেক্স বিক্রি হয়। এ সিদ্ধান্ত কোরেক্সের রাজস্ব ও মুনাফাতেও বেশ প্রভাব পড়েছে।
সরকারের ঘোষণা কার্যকরের প্রথমদিন অর্থাৎ সোমবার পুঁজি বাজারে ফাইজারের ৮ শতাংশ শেয়ার কমেছে। আর অ্যাবটের কমেছে ৩ শতাংশ।
অ্যাবট জানায়, ফেনসিডিল ভারতে কাশির সিরাপ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতো। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞায় তা বেশ কমেছে।
গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কোরেক্স সিরাপ ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর ওষুধ হিসেবে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেছে ফাইজার ইন্ডিয়া।
বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, কাশির জন্য এসব ওষুধ খুবই কার্যকরী। কিন্তু এসব ওষুধের অপব্যবহার খুবই উদ্বেগের বিষয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় কোরেক্স জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার বন্ধ ও ভারত থেকে এসবের পাচার প্রতিরোধে দ্য ইন্টারন্যাশনাল ন্যারোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড একটি বিল আনে।
কোডিন জাতীয় কাশির সিরাপ বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তেলেঙ্গানার মাদক নিয়ন্ত্রক অকুন সাভারওয়াল।
তিনি বলেন, আমি বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই রাজ্যে গত বছরে ৫৭ কোটি রুপির অবৈধ ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। আমরা আনন্দিত যে, এই পদক্ষেপে ওষুধের অপব্যবহার রোধ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
এমএ/