ঢাকা: ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ইস্যুটি এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত। আসছে ২৩ জুন এ ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে দিনদিনই এশিয়ায় উত্তেজনা বাড়ছে। ৩৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ এই সাগরটির দক্ষিণে চীনের মূল ভূখণ্ড, পূর্বে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া, পশ্চিমে ফিলিপিন্স এবং উত্তরে থাইল্যান্ড। এছাড়া সাগরের উত্তরাঞ্চলে তাইওয়ান দ্বীপ অবস্থিত। কিন্তু তীরবর্তী এসব দেশের অধিকার ক্ষুন্ন করে সাগরটির প্রায় ৯০ শতাংশই নিজের বলে দাবি করে বসেছে চীন। এখানে কৃত্রিম দ্বীপও নির্মাণ শুরু করেছে দেশটি। এ নিয়ে অধিকারবঞ্চিত বাকি দেশগুলোসহ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে চীনের। আশঙ্কা করা হয়, এই সাগরকে কেন্দ্র করে যদি কোনো সামরিক সংঘাত শুরু হয়, তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেরই সূত্রপাত ঘটাবে।
তবে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে বিশ্ব আরো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এ ঝুঁকি ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া কিংবা দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে সৃষ্ট কোনো সংঘাতের চেয়েও মারাত্মক হবে। মন্তব্যটি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক সংবাদপত্র দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা ইস্যুতে বিচার-বিশ্লেষণ ও তথ্য সংগ্রহ করে পূর্বাভাস ও পরামর্শ দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে দিন যত যাচ্ছে, রিপাবলিকান দলে প্রার্থিতার দৌড়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সম্ভাবনার দ্বার ততই খুলে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনি ৬৬১ জন ডেলিগেটের সমর্থন পেয়েছেন। আর ৫৭৬টি ভোট পেলেই নভেম্বরের দ্বৈরথে তিনিই হবেন ডেমোক্রেট দলে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইআইইউ বলছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্ব অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়বে। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে স্থবির হয়ে যাবে বিশ্ব। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যাবে। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে যেমনটা ঝুঁকিতে ফেলেছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো, তেমনই ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন বিচার-বিশ্লেষণ করে বৈশ্বিক ঝুঁকির একটি তালিকা তৈরি করেছে ইআইইউ। এ তালিকায় বর্তমান ঝুঁকিগুলোর সঙ্গে আসন্ন ঝুঁকিগুলোকেও আমলে নেওয়া হয়েছে। এ নিরিখে ২৫টি বৈশ্বিক বিপদ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় ১২তম অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প। একই অবস্থানে রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা।
নানা মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রথম সমালোচিত হন তিনি। এরপর গত নভেম্বরে ক্যালিফর্নিয়ায় মুসলিম দম্পতির নির্বিচারে গুলির ঘটনায় মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য করে আবারো সমালোচনায় পড়েন ট্রাম্প। বিশ্ব নেতারাও এবার জড়িয়ে পড়েন এতে। এসবের সঙ্গে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী প্রবেশ করছে মন্তব্য করে দেশটির সঙ্গে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দাবি তুলে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। এবার স্বয়ং পোপ তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রার্থিতার দৌড়ে একের পর এক উৎরে গেলেও সমালোচনা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ট্রাম্পের।
ট্রাম্পকে এতবড় ঝুঁকি হিসেবে উপস্থাপনের ব্যাখ্যায় ইআইইউ বলেছে, তার মন্তব্যগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিপন্থি। যদিও তিনি এখন পর্যন্ত তার নীতিগুলোর বেশিরভাগই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেননি, তবে মন্তব্য ও প্রস্তাবগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। বিশেষ করে, মেক্সিকো ও চীন সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশ দু’টির বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল হয়ে পড়তে পারে। নাফটা চুক্তি হুমকিতে পড়তে পারে। এছাড়া সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিতে পারে।
সংস্থাটি আরো বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্পের আগ্রাসি মন্তব্য এই অঞ্চলে অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রচারণার সময় তিনি জঙ্গিদের পরিবারসমেত হত্যা ও আইএস উৎখাতে সিরিয়ায় হামলার ব্যাপারে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা জঙ্গিবাদকে উসকে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে মুসলিমদের নিষিদ্ধের প্রস্তাবটি তিনি পাস করলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো সহজ হয়ে যাবে।
তবে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্ভাব্য ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের হাতেই তার বিজয়রথ থেমে যাবে। ডেমোক্রেট দলে প্রার্থিতার দৌড়ে থাকা হিলারি এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬১ জন ডেলিগেট ভোট পেয়েছেন, যার মধ্যে ৪৬৭টি সুপার ডেলিগেট ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স ৮০০ ডেলিগেট ভোট পেয়েছেন এ পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৬টি সুপার ডেলিগেট ভোট। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেতে হলে হিলারি বা স্যান্ডার্সকে ২ হাজার ৩৮৩টি ডেলিগেট ভোট পেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
আরএইচ