ঢাকা: ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সেখানে এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। চলছে স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট নানা ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কাতারকে দোষারোপ করে বলেছে, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে গিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ রীতিমত শ্রমিকদের নিপীড়ন করছে। বিশেষ করে খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তো শ্রমিকদের বাসের জায়গা একেবারেই নোংরা ও নিম্নমানের। তাদের পাসপোর্টও জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনেকের তো পাওনা মজুরিও পরিশোধ করা হচ্ছে না। অথচ এই শ্রমিকরা উঁচুদরের নিয়োগ ফি পরিশোধ করেছেন।
এ জন্য ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাকেও দোষারোপ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। মানবাধিকার খর্বিত করে যে আসর বসানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে কাতার, তা থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে ফিফা।
অ্যামনেস্টির অভিযোগের পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় কাতার সরকার জানিয়েছে, যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন এবং এ ব্যাপারে তদন্ত হবে।
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত তাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিশেষ করে বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়। এ জন্য কাতারের শ্রম আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছর কাতার তার ‘কাফালা’ স্পন্সরশিপ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। এ ব্যবস্থার আওতায় মালিকের অনুমতি ছাড়া বিদেশি শ্রমিকরা দেশটিতে চাকরি পরিবর্তন বা ছাড়তে পারতেন না।
তবে অ্যামনেস্টি বলছে, কাতার তার কথা খুব স্বল্প পরিসরেই রেখেছে। কাফালা ব্যবস্থায় যে সংস্কার হয়েছে, তা বিদেশি শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকাই রাখেনি। কিছু শ্রমিক তো দেশটিতে দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল সলিল শেঠি বলেছেন, সব কর্মীই তাদের অধিকার চায়। এ অধিকারের মধ্যে সময়মত মজুরি পরিশোধ, প্রয়োজন হলে কাতার ত্যাগ করার সুযোগ এবং মর্যাদা ও সম্মান উল্লেখযোগ্য।
তিনি জানান, কাতারে অবস্থানরত ২৩১ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে অ্যামনেস্টি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী শ্রমিক। তাদের মধ্যে ১৩২ জন স্টেডিয়াম নির্মাণ ও বাকি ৯৯ জন স্পোর্টস কমপ্লেক্সটির চারপাশের সৌন্দর্যবর্ধনে সবুজায়নের কাজ করছেন।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, এই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাতারে কাজ পেতে তারা নিজেদের দেশে ৪ হাজার ৩শ’ ডলার (৭৮.৩৮ টাকায় ডলার হিসাবে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২০ টাকা) করে ফি পরিশোধ করেছেন।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে, তার একটির বিরুদ্ধে কাজ ঠিক না হলে মজুরি আটকে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশে সোপর্দ করা বা কাতার ত্যাগ করতে না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মানবাধিকার সংস্থাটির অভিযোগ, শ্রমিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
আরএইচ