ঢাকা: গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ায় এবার গঠিত হলো তৃতীয় সরকার। ত্রিপোলি ও তোবরুকভিত্তিক দু’টি সরকারের বাইরে জাতিসংঘের সমর্থনে ‘ন্যাশনাল অ্যাকর্ড’ নামে এই সরকার গঠিত হয়েছে।
ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের সমর্থক বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের হুমকির মধ্যেই বুধবার (৩০ মার্চ) তৃতীয় এ সরকারের কর্মকর্তারা জলপথে রাজধানীর অদূরে ওই নৌঘাঁটিতে পৌঁছান।
তবে তাদের নৌঘাঁটিতে আসার খবরের পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তৃতীয় সরকারের কর্মকর্তাদের আগমনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কিছু সড়ক অবরোধ করারও খবর ছড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তৃতীয় সরকার গঠনে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, নাকি নতুন করে সহিংসতা বাড়বে, সে বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
জাতিসংঘে গঠিত ‘ন্যাশনাল অ্যাকর্ড’ ত্রিপোলি অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার আগেই সশস্ত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, লিবিয়ায় নতুন কারও নাক গলানো ঠিক হবে না।
আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে গৃহযুদ্ধ থামাতে গত বছর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত একটি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে এই ‘ন্যাশনাল অ্যাকর্ড’ গঠিত হয়েছে। পাঁচ বছর আগে লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে গৃহযুদ্ধের আগুনে জ্বলছে লিবিয়া।
সহিংসতা-সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, পাল্টাপাল্টি সরকারও গঠন করে ফেলে সশস্ত্র গ্রুপগুলো। যার একটি পরিচালিত হচ্ছে ত্রিপোলি থেকে, আরেকটি তোবরুক থেকে। এ দু’টি সরকার গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভয়ংকর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।
লিবিয়ার এ সংকটকে নজিরবিহীন মন্তব্য করে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষক মোহাম্মদ এলজার বলেন, এখন আমাদের তিনটি সরকার। দেশের কপালে কী আছে, তা নির্ভর করছে সংঘাতপূর্ণ দু’টি সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কিনা তার ওপর।
লিবিয়ায় যে দু’টি সরকার আগে থেকে আছে এরমধ্যে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন গ্রুপ সমর্থিত। এই সরকারকে সমর্থন করে থাকে কাতার, সুদান ও তুরস্কসহ কিছু দেশ। আর তোবরুকভিত্তিক সরকার সমর্থন পেয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব, মিশর, আরব আমিরাত ও স্থানীয় সেনাবাহিনীর।
তবে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গঠিত হওয়ায় তোবরুক ছেড়ে এখন নৌঘাঁটিভিত্তিক সরকারকেই সমর্থন করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। এই সরকারের হাত ধরে লিবিয়ায় শান্তি ফিরবে বলেও এক বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি
সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নৌঘাঁটিতে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী পদবির সারাজ বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি ঘোষণা করতে চাই, লিবিয়ায় নতুন যুগের সূচনা হলো। আমি অন্য বিরোধীদের আত্মসমর্পণ অথবা যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
নৌঘাঁটিতে পৌঁছানোর আগে নতুন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে তারা সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও কিছু সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতাও করেছে। এছাড়া, তাদের যোগাযোগ হয়েছে সরকারের সব বিভাগেও।
শেষ পর্যন্ত এই সরকার ত্রিপোলি-তোবরুককেন্দ্রিক সরকার দু’টির পতন ঘটিয়ে লিবিয়ায় শান্তি ফেরাতে পারবে কিনা, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছু সময়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এইচএ/