ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দুঃস্বপ্নের ভূখণ্ড গাজা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
দুঃস্বপ্নের ভূখণ্ড গাজা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলের ছোট্ট ভূখণ্ড গাজা উপত্যকা। ১৪০ দশমিক ৯ বর্গমাইলের এ ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর, পূর্ব ও উত্তরে ইসরায়েল।

সাড়ে ১৮ লাখ অধিবাসীর এ ভূখণ্ড ও পশ্চিম তীরকে একত্রে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দাবি করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। আর এ নিয়েই ইসরায়েলের সঙ্গে এ কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব।

 

যে ভূখণ্ড নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বিবাদ, যে বিবাদের কারণে হরহামেশাই ঝরে পড়ছে নিরপরাধ প্রাণ, সেই গাজা উপত্যকার অধিবাসীদের নিয়ে খুব সম্ভবত কোনো পক্ষেরই মাথাব্যথা নেই।

 

আব্দুল হাকিম জোগবর ও তার স্ত্রী ফালেস্তিন গাজারই বাসিন্দা। এখানেই তাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংসার শুরু। সম্প্রতি এই দম্পতি অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছেন। ইন্টারনেটেও তারা ক্যাম্পেইন করছেন। উদ্দেশ্য, গাজা উপত্যকার বিবাহযোগ্য নর-নারীদের বিয়ে দেওয়া।

বিষয়টা জেনে হয়তো ভ্রু কুঁচকে উঠতে পারে পাঠকের। কিন্তু গাজার বাস্তবতা এমনই। যে উপত্যকার ৬০ শতাংশ যুবক বেকার, যেখানকার ৮০ শতাংশ মানুষ বেঁচে আছেন মানবিক সহায়তায়, সেখানে বিয়ে করাটা সত্যিকার অর্থেই বিলাসিতা।

অসামর্থের কারণে ব্যাংক ঋণও পায় না গাজাবাসী। আর এ সুযোগে রীতিমত ব্যবসাই ফেঁদে বসেছেন অনেকে। ৩০ বছরের কম বয়সী নতুন দম্পতিদের ক্ষেত্রে আবাসন ঋণ দিতে শুরু করেছে তারা। কখনো কখনো ঋণদাতারাই বিয়ের আয়োজন করছে। আর এ জন্য প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপনও প্রচারিত হচ্ছে।

আব্দুল হাকিম জোগবর দম্পতি জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার কেউ ঋণ না নিয়ে বিয়ে করতে পারে না। একদিকে ঋণের বোঝা, তারওপর পরিবারের দায়িত্ব- সব মিলিয়ে দিনের পর দিন আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে গাজাবাসী। কখনো কখনো তো সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

সুষ্ঠুভাবে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে বরপক্ষকে ন্যূনতম ১৫ হাজার ডলার (৭৮.৪৩ টাকায় ডলার হিসাবে ১১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা) খরচ করতে হয় গাজায়। যা জোগাড় করার সামর্থ সিংহভাগ মানুষের নেই। কাজেই তাদের ঋণদাতাদের দ্বারস্থ হতে হয় বলে জানান আব্দুল হাকিম জোগবর।

জোগবর আরো জানান, তিনি একজন স্থপতি। চাকরি না পেয়ে আইটি ডিজাইনিং ও ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারপরও গাজার মাটিতে তিনি কাজ পাননি।

২০০৬ সালে আরোপিত ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় ভবন নির্মাণ হয় না বললেই চলে। দুয়েকটা যদিও হয়, সেগুলোয় সিমেন্টের কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি আধুনিক ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মাল-মশলাও আমদানি করা যায় না বলে জানালেন তিনি।

গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা তানানি একজন প্রশিক্ষত ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু কাজ করতে হয় শিশু দাতব্য সংস্থায়। বেতন অনিয়মিত। ফলে ব্যাংক ঋণ পান না তিনি।

তানানি জানিয়েছেন, তার আত্মীয়-স্বজনরাও একইভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

একদিকে, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, অন্যদিকে এসব মোকাবেলা করে সামনে বাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, তারওপর প্রায়ই ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হানা ও কট্টরপন্থি হামাসের নিপীড়ন- সব মিলিয়ে এক দুঃস্বপ্নের ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।