<< আগের অংশ
রিপাবলিকানদের জন্য এবারের নির্বাচনে মূল ভিত দক্ষিণাঞ্চলীয় ও উত্তরাঞ্চলীয় শেতাঙ্গ শ্রমজীবী শ্রেণি, যেগুলো একসময় ডেমোক্র্যাটদের প্রধান শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হতো।
এই দল সমর্থনে পুনর্বিণ্যাসের সুর ধরে নীতির পুনর্বিণ্যাস শুরু হয়- যার অন্যতম হচ্ছে উত্তরাধিকারে পাওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর সঙ্গে এই সময়ের ভোটারদের আগ্রহ ও মূল্যবোধের মধ্যে যে ফারাক তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ।
রিপাবলিকান দলে গুরুত্ব দেওয়া হয় মুক্ত বাণিজ্য ও বড় মাত্রার অভিবাসনে আর খাড়া নামে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো কর্মসূচিগুলোতে।
ডনাল্ড ট্রাম্প কনজারভেটিভ পপুলিজমকেই তার নীতি হিসেবে দেখছেন যা এরই মধ্যে প্রকাশ্য। একই ধরনের পপুলিস্ট চিন্তাধারা উচ্চারিত হয়েছে মাইক হাকাবি, রিক স্যান্টোরম ও প্যাট্রিক বুচানানের কণ্ঠে। ধর্মীয় অধিকারের শক্তি দিয়ে অভিজাত রিপাবলিকানরা ধনীদের জন্য তাদের বাণিজ্য কর কমিয়ে তার বিনিময়ে সমকামিদের মধ্যে বিয়ে ও গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন আদায় করে। কিন্তু ধর্মীয় রক্ষণশীলতার মাত্রা যখন কমতে থাকে তখন ইউরোপীয় ধারার একটি জাতীয় পপুলিজম জাগ্রত হয়, যাতে প্রতিহতকরণ আর অভিবাসন বিরোধীতাই হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় ইস্যু।
ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালে এবারের ভোট যুদ্ধে নামার ঘোষণা দেওয়ার অনেক আগেই, দাতা শ্রেণি, রিপাবলিকান থিংক ট্যাংক ও মাগাজিনগুলোর অর্থনৈতিক উদারপস্থি প্রতিনিধিরা পপুলিস্টদের কাছে হেরে যাচ্ছিলেন। ১৯৯০ সালে অবৈধ অভিবাসনের বিরোধীতা কেবল প্যাট্রিক বুচানানেই সীমাবদ্ধ ছিলো, কিন্তু পরে তা রিপাবলিকানদের কেন্দ্রীয় ইস্যুতেই কেবল পরিণত হয় না, বরং তা হয়ে ওঠে রিপাবলিকান পরিচয়েরই নির্ণয়ক।
‘সত্যিকারের রক্ষণশীল নাকি নামকাওয়াস্তে রিপাবলিকান’, অবৈধ অভিবাসনের পক্ষ-বিপক্ষের অবস্থান দিয়েই তার যাচাই। ২০০৭ সালে ও পরে ২০১৩ সালে অভিবাসন সংস্কার বিলে পপুলিস্ট রিপাবলিকানদের বিরোধীতাই তার প্রমাণ।
একইভাবে একই বিরোধীতায় সামাজিক নিরাপত্তার আংশিক বিরাষ্ট্রিকরণে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রস্তাবও নাকচ হয়ে যায়।
ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থীতার লড়াইয়ে যা কিছুই হোক না কেনো তিনি কিন্তু প্রথাপন্থি রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা কি দিচ্ছে আর আজকের কর্তৃত্ব পরায়ন রিপাবলিকানরা কি চাইছে তার মধ্যে ফারাকটি সামনে এনেছেন। এরা চাইছে মধ্যবিত্তের উন্নয়ন করো, অবৈধ অভিবাসনের ওপর চড়াও হও, মুসলমান বিরোধী হও, বৈদেশিক বাণিজ্যে শত্রুদের বিরুদ্ধে লাগো আর বন্ধুত্বের নামে যারা সুবিধা নিচ্ছে তাদের হটাও।
অন্য প্রার্থীরা ট্রাম্পের মতো এতটা কঠোর নন আর তারাই রিপাবলিকান মূল কর্তৃত্বের কাছে একটু বেশি গ্রহণযোগ্য। টেড ক্রুজের কথা ধরা যাক। রিপাবলিকান নীতি আর ভোটারদের অগ্রাধিকার উভয়কেই তিনি সমন্বয় করতে চান। ফলে তিনি মধ্যবিত্তের উন্নয়নের যেমন পক্ষে, তেমনি অভিবাসন ও বাণিজ্যের বিষয়কেও সহনশীলতার সঙ্গে দেখতে চান।
একই ধরনের একটি নীতি পুনর্বিণ্যাসের বিষয় রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের মাঝেও। তবে তা বার্নি স্যান্ডার্সের প্রতি তরুণ ভোটারদের অতি-আগ্রহের কারণে নয়। আর মূল টেনশন স্যান্ডার্স বনাম হিলারি ক্লিনটনেও নয়, এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হিলারি ক্লিনটন ও বিল ক্লিনটনের কাছ থেকে উত্তরাধিকারে পাওয়া নীতি প্রসঙ্গও।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে যেমনটা সবাই দেখেছে, সংখ্যালঘু, সিঙ্গল উইম্যান, প্রগতিশীল আর শেতাঙ্গ কর্মজীবীদের কাছে টানাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় চেষ্টা। পেছনে ফিরলে দেখা যাবে শেতাঙ্গদের ভোট টানতে ব্যাপক ধর-পাকড়ও চালায় ক্লিনটন প্রশাসন। যে জন্য এখনো অনেক প্রগতিশীল তাকে দোষারোপ করে চলেছে। এছাড়াও ক্লিনটনের সমকামি বিয়ে বিরোধী অবস্থান আর সামরিক বাহিনীতে ‘প্রশ্ন নয়, কথা নয়’ নামের বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণেরও রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
এখন আমেরিকা ও ডেমোক্রেটিক পার্টি উভয়ই সমকামিতার অধিকারের প্রতি অনেক বেশি উদার। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সমকামিদের বিয়েকে আইনসিদ্ধ করেছে। যা মোটে এক দশক আগেও মেনে নেওয়া হচ্ছিলো না।
২০০৪ সালের নির্বাচনটি বাদ দিয়ে ১৯৯২ থেকে এ পর্যন্ত যত নির্বাচনেই ডেমোক্র্যাটরা জিতেছে তার সবগুলোতেই তারা এটা ভালো করেই জানতো জয়ের জন্য তাদের সামাজিকভাবে রক্ষণশীল, অর্থনৈতিকভাবে লিবারেল রিগ্যান বা ওয়ালেস ডেমোক্র্যাটদের ভোটের প্রয়োজন নেই। অনেক ডেমোক্র্যাটেরই প্রত্যাশা ওবামা কোয়ালিশনের দীর্ঘমেয়াদী যে ফল পাওয়া যাবে তার অন্যতম কারণ ইলেক্টরেটের তালিকায় ল্যাটিনোদের ভাগ বেড়ে যাওয়া। এতে নির্বাহী শাখায় এবং হতে পারে প্রাকারন্তরে মোটের ওপর সরকারেই ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হবে। আর সুবিধাবাদী শেতাঙ্গ শ্রমজীবী ভোটারদের টানতে ব্যবসাপন্থি, অর্থবান্ধব অর্থনীতির সঙ্গে সামাজিক ও বর্ণভিত্তিক উদারপন্থার যে ক্লিনটনীয় সমন্বয় তাতেও জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
পরের অংশ>> স্বামীর প্রশাসনের নীতি থেকেও দূরে হিলারি