ঢাকা: বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের চার রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১৭ মে)।
স্বভাবতই এখন সবার চোখ পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ওই রাজ্যগুলোর দিকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামে এবার বেশ জোরেসোরে বিজেপির নাম শোনা যাচ্ছে লোকমুখে। তবে কী সেখানে এবার মনমোহন সিংয়ের বাসভূমে প্রথমবার পদ্ম ফুটছে? কেরালা কী আবারও লালে লাল? আর তামিলনাড়ু? সেই গদিতেও কী সবার প্রিয় ‘আম্মা’ জয়ললিতাই বসছেন মসনদে?
তামিলনাড়ুতে এগিয়ে আছেন ‘আম্মা’:
দক্ষিণ ভারতের উল্লেখযোগ্য রাজ্য তামিলনাড়ু। বেশ কিছুদিন ধরে নানা ঘটনায় আলোচনায় ছিলো রাজ্যটি। তবে সমীক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন জয়জলিতা জয়রামের দল সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম (এডিএমকে)। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। যিনি রাজ্যের মানুষের কাছে আম্মা বলেই বেশি পরিচিত।
নাম শোনা যাচ্ছে ডিএমকে প্রধান করুণানিধিরও৷ তাহলে কী জোটবদ্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন তিনি? সে যাই হোক এবার তামিলনাড়ুতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে বলেই জানা গেছে বুথফেরত সমীক্ষাগুলোতে।
সমীক্ষা অনুসারে, আম্মার দল ১১০ ও ডিএমকে ১০৯টি আসন পাচ্ছে৷ টু’জি কেলেঙ্কারিতে এ রাজা, কানিমোঝির নাম জড়ানোর অস্বস্তিকে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র জয়ললিতাকে রোখার তাগিদেই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন করুণানিধি।
সেক্ষেত্রে ডিএমকে জোট জিতলে করুণানিধির রেকর্ড যেমন হবে, তেমনই কেন্দ্রের কোণঠাসা কংগ্রেস একটু উদ্দীপনা পাবে।
এছাড়া চেন্নাইয়ের বন্যা ও দুর্নীতি জয়ললিতার গলার কাঁটা। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় কর্নাটক হাইকোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। কিন্তু দুর্নীতির কালি ইভিএমে প্রভাব ফেলতে পারে- এমন শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, চেন্নাই ও এর আশপাশের বন্যায় জয়ললিতা যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছিলেন তাতে মধ্যবিত্তরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। যার প্রভাব পড়তে পারে ভোটে।
তবে তামিলদের গত পাঁচ বছরে অনেক দিয়েছেন আম্মা। কম দামে খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সামাজিক সুরক্ষা, আম্মা ক্যান্টিন, নারীদের জন্য একাধিক সুযোগ-সুবিধা। এর প্রভাবও পড়তে পারে ইভিএমে। এক্ষেত্রে বলাই যায় আম্মার জয় নিশ্চিত।
আর যদি তাই হয়, তবে কেন্দ্রে কংগ্রেস যেমন ধাক্কা খাবে, তেমনই আম্মা’র সান্নিধ্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি।
এভাবে মরিয়া হলেও বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, তামিলনাড়ুতে একটির বেশি আসন পাচ্ছে না বিজেপি। এক্ষেত্রে দাবার গুরুত্বপূর্ণ ঘোড়া চালাতে পারে আঞ্চলিক দলগুলো।
কেননা এতোদিন এসব আঞ্চলিক দল যার সঙ্গে জোট বাঁধতো তাদের পাল্লাটাও ভারি হতো। যা এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন।
স্থানীয় একজন বিশ্লেষক বলেন, তামিলনাড়ুর নির্বাচনে মদ নিষিদ্ধ করার দাবি অন্যতম প্রধান একটি ফ্যাক্টর। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় নারীদের মধ্যে এই দাবি ক্রমশ প্রবল হয়েছে, যার সমর্থন রয়েছে আঞ্চলিক দলগুলোরও।
প্রথমবার পদ্ম ফুটছে অাসামে:
বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামেও বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার।
হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত রাজ্যটির ১২৬ আসনে বিজেপি-কেই গড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিচ্ছে বুথফেরত সমীক্ষাগুলো৷
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, রাজ্যটির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে শরণার্থী সমস্যাকেই দেখছেন অনেকে। নাগরিকত্বের প্রশ্নে শরণার্থীদের ধর্মীয় মানদণ্ডে আড়াআড়ি বিভাজন করা হয়েছে৷ বিজেপি ও কংগ্রেস দু’দলই হিন্দু শরণার্থীদের আসামে জায়গা দেওয়ার পক্ষপাতি।
রাজ্যের শরণার্থীদের মধ্যে বশির ভাগই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। এমনকি নির্বাচনের আগে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সর্বানন্দ প্রশ্ন তুলেছেন, শরণার্থীদের বোঝা আসাম একা বইবে কেন? এ বিষয়ে একটা সমাধান দরকার।
তাই নির্বাচনে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে আছে এই আলোচিত ইস্যুটি।
এদিকে এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেক বিধায়ক যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।
সে ক্ষেত্রে তরুণের বিরুদ্ধে একটা মতো চোরাবালি ঘুরপাক খাচ্ছে যে, তা বোঝাই যাচ্ছে। তাই বিজেপিকেই ভরসা হিসেবে দেখছে আসামের মানুষ।
এদিকে নির্বাচন হওয়া অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস, বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি , কেরালায় ইউডিএফ, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুড়চেরিতে অল ইন্ডিয়া এন আর কংগ্রেসকে (এনআরসি) কোনো আশার কথা শোনাচ্ছে না বুথ ফেরত সমীক্ষা। তাদের জরিপ মতে, রাজ্যে সরকার গঠনের পথে নাকি হাঁটছে ডিএমকে জোট।
**জয়ললিতাকে ‘না’, আবারও করুণানিধি!
**কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসন হটিয়ে আসামেও আসছে বিজেপি!
**আবার মমতার হাতেই বাংলা!
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৬
এমএ/