ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রুশ হ্যাকিংয়ে ট্রাম্প নিরাপদ তো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
রুশ হ্যাকিংয়ে ট্রাম্প নিরাপদ তো? ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন ও হিলারি ক্লিনটন

বারাক ওবামা হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন। উঠছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এ দু’টি খবর এখন প্রধান আলোচ্য হওয়ার কথা থাকলেও সবার মাথা ঘামছে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিং নিয়ে। অভিযোগের তীরে যেমন মস্কো, তেমনি নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। বলা হচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ডোবাতে হ্যাকিংয়ে তৎপর হয়েছিল মস্কো, আর এই তৎপরতা চলেছে স্বভাবতই ট্রাম্পের পক্ষে।

বিরোধী শিবির তো বটেই, খোদ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেই এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প আড়াল করতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার ক্রেমলিনকে।

হ্যাকিংয়ের অভিযোগ পাত্তা না দিয়ে তিনি বলছেন, “রাশিয়ার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব থাকা ভালো, এতে খারাপের কিছু নেই। শুধু ‘মূর্খ’ বা ‘বোকা লোকেরা’ এটাকে খারাপ মনে করছে। ”

সমালোচনা বা অভিযোগ হয়তো হোয়াইট হাউসের নয়া ‘রাজা’ ট্রাম্পের মসনদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। কিন্তু এই প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ যেসব খবর আসতে শুরু করেছে, তাতে খোদ ট্রাম্পকেই নড়েচড়ে বসতে হতে পারে।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামা ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে রাশিয়ার হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ‘শ্রেণীবদ্ধ নথি’ পেশ করেন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা, যেখানে ছিল ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর তথ্য হস্তগত করার বিষয়টিও।

অভিযোগ সারসংক্ষেপ করা হয়েছে দুই পৃষ্ঠায়। এই অভিযোগে যেমনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রাশিয়ান সূত্রের তথ্য আছে, তেমনি আছে একজন সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তার তথ্যও, ওই কর্মকর্তা এর আগে যে তথ্যগুলো দিয়েছিলেন সেগুলোকে সঠিক মনে করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সে কারণে এখন যে নথি তিনি দিয়েছেন তার সত্যতা যাচাইয়েও কাজ করছে কেন্দ্রীয় তদন্ত অধিদফতর এফবিআই। দুই পৃষ্ঠার এই সংক্ষিপ্তসার নথিতে এসেছে ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের গঠিত কমিশনের ৩৫ পৃষ্ঠার সমন্বিত মেমোর তথ্য।

ওবামা ও ট্রাম্পের সামনে স্পর্শকাতর এই তথ্যগুলো পেশ করেছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার, এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক জন ব্রেনান ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) পরিচালক অ্যাডমিরাল মাইক রজার্স।

তাদের সঙ্গে থাকা একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, নথিগুলো উপস্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাম্পকে জড়িয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা গোয়েন্দা সংস্থা, কংগ্রেস ও সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে তাকে সতর্ক করা।

উপস্থাপিত সংক্ষিপ্ত নথিতে গোয়েন্দারা বলেছেন, আসলে কেবল হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল বা কম্পিউটার সার্ভ‍ার অথবা তার প্রচারণা শিবিরের কম্পিউটার সার্ভারই ভাঙেনি রুশ হ্যাকাররা, মস্কোর লোকেরা সম্ভবত ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টিরই তথ্যও বাগিয়ে নিয়েছে। হিলারিকে ডোবানোর জন্য তার এবং ডেমোক্রেটদের তথ্য উইকিলিকস ও অন্যান্য নথি ফাঁসকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলেও ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের খবরাখবর যে একেবারে নিরাপদ থাকবে তা কোন ভিতের ওপর জোর দিয়ে বলা যাবে? 

এই সংক্ষিপ্ত নথি হয়তো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদন নয়, কিন্তু এতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মস্কো চেয়েছিল হিলারির প্রার্থিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে তিনি ছিটকে পড়ুন আর হোয়াইট হাউসে দখলে নিন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের দরবারে তথ্যগুলোর উপস্থাপক গোয়েন্দাদের ওই প্রতিনিধি দলে থাকা দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের প্রতিনিধি ও রাশিয়ার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে নিয়মিত তথ্য বিনিময় হয়েছে। সেসময় দু’পক্ষেরই অনেক তথ্য গেছে রুশ হ্যাকারদের কাছে।

এই যোগাযোগের বিষয়টি ভেতরে ভেতরে জানাজানি হয়েছিল বলে সেসময় সিনেটের ডেমোক্রেটিক নেতা হ্যারি রেইড এফবিআই পরিচালককে দেওয়া এক চিঠিতে বলেন, “ট্রাম্প, তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে রাশিয়ার সরকারের লোকদের যোগাযোগ থাকা নিয়ে যে বিস্ফোরিত তথ্য আপনারা পেয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে- এই বিদেশি ‘আগ্রহ’ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রকাশ্য ক্ষতিকর। ”

গোয়েন্দাদের এই তথ্য উপস্থাপন নিয়ে ট্রাম্প বা তার প্রচারণা শিবির অথবা নয়া প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা কথা না বললেও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কোর এই ‘আনুকূল্য’ পেতে ট্রাম্পের লোকেরা তার ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক যে তথ্য পাচার করেছে, তা শেষে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকেই ‘বৃত্তবন্দি’ করে ফেলবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? ব্যক্তিগত পছন্দ ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া তো সবসময় ক্ষমতা দেখানোর প্রতিযোগিতায়ই থেকেছে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।