ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প বনাম ট্রাম্প!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
ট্রাম্প বনাম ট্রাম্প! ডোনাল্ড ট্রাম্প (সংগৃহীত)

ঢাকা: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভবন হোয়াইট হাউসে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতৃত্বের এই আসনে বসতে নানা আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক সইতে হয়েছে এই ধনকুবেরকে। এরইমধ্যে শুরু করেছেন কর্মতৎপরতা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে তার উদ্ভট আচরণ আর বিভক্তির সুর তোলা বক্তৃতা।

ট্রাম্প নানা সময়েই নানা সমালোচিত-বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। কখনো কখনো নিজে আগে যা বলেছেন, পরে তার ঠিক উল্টোটা বলেছেন।

তার এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে একটি ভিডিও প্রচার করেছে ‘অকুপাই ডেমোক্রেট’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। ভিডিওর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রাম্প বনাম ট্রাম্প’।

এই ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রাম্প তার আয়করের নথি প্রকাশের বিষয়ে ২০১৪ সালে এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার জন্মসনদ প্রকাশ করলে তিনিও নিজের আয়কর নথি প্রকাশ করবেন। কিন্তু ওবামার সনদ প্রকাশের পরও ট্রাম্প তা করেননি।

এরপর নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে নামার আগে বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসে ওঠার লড়াইয়ে নামলে আয়কর নথি প্রকাশ করবেন। আবার যখন ক্যাম্পেইনে নামলেন, তখন আয়কর নথি প্রকাশের ব্যাপারে বলেন, এটা প্রকাশের বিষয় নয়, ভোটারদের এটা জানার দরকার নেই। বরং নির্বাচনী বাধ্যবাধকতায় আয়করের একটি নথিতে স্বাক্ষরের ছবি টুইটারে প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ট্যাক্স রিটার্নে স্বাক্ষর, এটা কি হাস্যকর নয়। ’

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আমাদের ইরাকে অভিযানে যাওয়া উচিত হয়নি। পরে আরেকটি অনুষ্ঠানেই বলেন, আমি এই অভিযানের পক্ষে। এটা একদমই ঠিক ছিল।

গর্ভপাত বিষয়েও স্ববিরোধী অবস্থান প্রকাশ পায় ট্রাম্পের। তিনি একবার গর্ভপাতের পক্ষে বলেন, আরেকবার বলেন বিরুদ্ধে। একবার বলেন, আমি জীবন বাঁচানোর পক্ষে। যারা গর্ভপাত করে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আরেকটি অনুষ্ঠানে নিজেকে উদার উল্লেখ করে বলেন, আমি এটা পছন্দের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিষয়েও দ্বিমুখী অবস্থান দেখান ট্রাম্প। ক্যাম্পেইন চলাকালে একটি সভায় বলেন, হিলারির প্রকৃতিপ্রদত্ত কোনো প্রতিভা নেই। তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। আমি সেটা ভাবতেও পারি না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে অযোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে থাকবেন। আরেকটি সভায়ই বলেন, হিলারি অনেক পরিশ্রমী। তাকে আমি খুব পছন্দ করি। তার স্বামী বিল ক্লিনটনকেও আমি পছন্দ করি।

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পাস করা স্বাস্থ্যবিলের বিষয়েও ট্রাম্পের মুখ থেকে নানা সময়ে এসেছে নানা মন্তব্য এসেছে। একবার তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যের যত্নে সরকারের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। আবার আরেকটি অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পেলে সবার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবো।

ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতেই বেশি আলোচিত ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে ট্রাম্প একবার বলেন, আমরা আমেরিকানরাই এ দেশকে আবার মহান করে গড়ে তুলবো। অভিবাসীদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। আরেকটি অনুষ্ঠানে ঠিক এর উল্টোটি বলেন, সবাইকে তো ফেলে দিতে পারি না। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র হুমকিতে জাপানের নিরাপত্তা বিষয়েও স্ববিরোধী কথা বলতে দেখা যায় ট্রাম্পকে। একবার তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু আছে, এটা যদি জাপানের সমস্যা হয়, তাহলে তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য যা করার তা করুক, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রও বানাক। কিন্তু পরে আরেকটি সভায় বলেন, তারা (বিরোধীরা) বলে আমি নাকি বলেছি জাপান পরমাণু অস্ত্র বানাক। এটা কেন আমি উৎসাহিত করবো?

লিবিয়ার পতিত নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফির বিষয়ে তিনি একবার বলেন, গাদ্দাফি ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকা সেখানে এতো ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। অথচ তার আগে এক ভিডিওবার্তায় গাদ্দাফির পতন কামনা করে ট্রাম্প বলেন, তিনি সেখানে হাজারো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছেন।

ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে উঠলেও তিনি আসলে কোন দলের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, সেটাও স্পষ্ট প্রকাশ পায়নি কখনো। একবার ডেমোক্রেটদের দিকে মজেছেন তো, আরেকবার মজেছেন রিপাবলিকানদের প্রতি। এখন তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলে পরিচিত হলেও এ দলেরই সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশকে এক বক্তৃতায় তুলোধুনো করেছিলেন ট্রাম্প।

স্ববিরোধী এই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ওঠার পর এখন কী ‘নজির’ দেখান তা-ই দেখতে উন্মুখ বিশ্ববাসী।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।