ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির প্রথম সপ্তাহেই টালমাটাল যুক্তরাষ্ট্র

সজিব তৌহিদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির প্রথম সপ্তাহেই টালমাটাল যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম সপ্তাহ পূর্ণ হলো ২৭ জানুয়ারি (শনিবার)। গত ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবন হিসেবে খ্যাত ক্যাপিটল হিলে শপথগ্রহণের মাধ্যমে বারাক ওবামার পদে দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন ট্রাম্প।

ক্ষমতাগ্রহণের পরপর থেকেই ট্রাম্পের নানা কর্মকাণ্ড এবং তৎপরতা ইতোমধ্যেই নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। বিতকির্ত বেশকিছু বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

নির্বাচনের আগে ট্রাম্প যা-যা করার কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সেসব বিষয়ই বাস্তবায়ন করার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ফলে অনেকের কাছে উপহাসের পাত্র বনে গেছেন তিনি। এ নিয়ে খবর প্রক‍াশ করেও বেশ ব্যস্ত বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলো।

ক্ষমতা স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের ক্যাবিনেটে (মন্ত্রিপরিষদ) যারা থাকছেন, তাদের মননোয়নে নিয়োগপত্রে কলম দিয়ে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন। দায়িত্বগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘ওবামা কেয়ার’ বদলে ফেলতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে খোদ আমেরিকানদের মধ্যেই।

বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ টিপিপি (ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চুক্তিভুক্ত ১২টি দেশ নাখোশ হয়েছে। টিটিপি চুক্তিভুক্ত মেক্সিকো, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ব্রুনাই দারুস সালাম, চিলি, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলো, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

চুক্তিতে সই করা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা, ছবি: সংগৃহীতএতে চুক্তিভুক্ত দেশগুলো বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ট্রাম্প নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমেরিকানদের বৃহৎ স্বার্থে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনেই টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করবেন। অবশ্য প্রথম দিনে না হলেও তার কথা মতো প্রথম সপ্তাহেই চুক্তিটি বাতিল করেছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৫ সালে পারস্পরিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধা কাজে লাগাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ টিপিপি বাণিজ্য চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো।

এরপর গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) তিনি মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করবো। ’

আমেরিকান জনগণ বা বিশেষজ্ঞদের কোনো ধরনের মতামত না নিয়ে স্রেফ নিজস্ব সিন্ধান্তে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে নির্বাহী আদেশে সই করেন।

একই সঙ্গে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অভিবাসী, শরণার্থী ও ভিসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার একমুখী সিন্ধান্ত বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দেন। এতে আমেরিকা থেকে অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যা নিয়ে জনমনে ট্রাম্পের প্রতি সাধারণ মানুষের ও ট্রাম্পবিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেশি দানা বেঁধেছে।

সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, অপরাধীদের শাস্তির বিশেষ ব্যবস্থা বিতর্কিত ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ ফিরিয়ে আনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন ট্রাম্প।

‘ওয়াটারবোর্ডিং’ হচ্ছে অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাস্তির বিশেষ প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে অপরাধীর নাকে-মুখে পানি ঢেলে মৃত্যুর ভয়াবহ বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় গোপান তথ্য বের করে আনা হয়।

এ প্রক্রিয়াটি তুমুল বিতর্কের মুখে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর নিষিদ্ধ করা হয়। ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ চালু হয়েছিলো বুশের শাসনামলে।

মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ট্রাম্প, ছবি: সংগৃহীতচলতি সপ্তাহের শুরুতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানরা এই শাস্তির বিশষে কায়দা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প। তবে দেশটির কিছু সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘যতদূর সম্ভব আমি অনুধাবন করেছি, আগুনের সঙ্গে আগুন দিয়েই আমাদের লড়াই করতে হবে। ’

এর মাধ্যমে তিনি কলঙ্কিত ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ সিস্টেম চালু করার প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সবমিলিয়ে ট্রাম্প যুগ সূচনার প্রথম সপ্তাহেই টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের উপর্যুপরি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অনেকে তাকে ‘আনপ্রিডিক্ট্যাবল (unpredictable) প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

‘আনপ্রিডিক্ট্যাবল’ বলতে বুঝায়- ‘যার সম্পর্কে আগে থেকে বলা যায় না অথবা ভবিষ্যৎবাণী করা যায় না। ’ একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে অবশ্য ট্রাম্পের মধ্যে ‘আনপ্রিডিক্ট্যাবিলিটি’ (unpredictability) এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প যা-যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাই-তাই করতে শুরু করেছেন মাত্র। সে অর্থে ডোনাল্ড ট্রাম্প যথেষ্ট ‘প্রিডিক্ট্যাবল’ই (predictable) বটে।

সবকিছু জেনে শুনে যেহেতু হিলারিকে বাদ দিয়ে আমেরিকানরা ট্রাম্পকেই নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং ট্রাম্পের এমন টালমাটালি বা হঠকারী সিদ্ধান্তের ধকল আগামী চারবছর সহ্য করা ছাড়া আর উপায় কী..?  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।