ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

চার লাখ ছাড়ালো রোহিঙ্গা শরণার্থী, ৬০ শতাংশ শিশু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
চার লাখ ছাড়ালো রোহিঙ্গা শরণার্থী, ৬০ শতাংশ শিশু বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল, ছবি: দীপু মালাকার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড ন্যাশনস চিলড্রেনস ফান্ড (ইউনিসেফ)। গত ২৫ আগস্ট থেকে তাদের ঢল নামতে থাকে বাংলাদেশ সীমান্তে।

কক্সবাজার ও বান্দরবানের বেশ কিছু পয়েন্টে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। শরণার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।

এছাড়া সহিংসতায় দেশটিতে প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের।

বেসরকারি হিসেবে শরণার্থী সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও তাদের নিবন্ধনের কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি।

কক্সবাজারে ইতোমধ্যে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাকে ভরে বিশুদ্ধ পানি বিতরণসহ ভ্রাম্যমান টয়লেট সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক জরুরি তহবিলের (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেছেন, শরণার্থী শিবিরে তীব্র সংকট। বিশেষ করে খাদ্য এবং সুপেয় পানির।

তিনি বলেন, পানির যেকোনো সমস্যায় শিশুরা সবার আগে আক্রান্ত হয়। এখন পরিস্থিতি এমন যে বড় কোনো মহামারির শঙ্কা রয়েছে।

খাদ্য, পানির পাশাপাশি ইউনিসেফ ডিটাজেন্ট পাউডার, পানি খাওয়ার পাত্র, জগ, শিশুদের জন্য ফিডার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, গামছা, স্যান্ডেলও বিতরণ করছে। কিন্তু দিন দিন যে হারে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাড়ছে, এতে সবার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরইমধ্যে ৭.৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছে সংস্থাটি।

                রাখাইনের ১৭৬ রোহিঙ্গা-গ্রাম এখন জনশূন্য
               সু চিকে ফোন করে নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে বললেন ট্রুডো

জাতিসংঘ এই নির্যাতনের বিষয়কে ‘জাতিগত নিধন’ বলে ইতোমধ্যে আখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে। এটি মানবতার খাতিরে। তবে তাদের নাগরিকদের ফিরে যেতে হবে বলে বাংলাদেশ সরকার থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মিয়ানমার বলছে, অবিলম্বে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। আর যারা ফিরতে চান তাদের যাচাই-বাছাই করা হবে, এরপরই তারা অনুমতি পাবেন।

ইতোমধ্যে জানা গেছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিচ্ছেন না সু চি। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে বৈশ্বিকভাবে নানা সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি এই সভা বর্জন করলেন। তার পরিবর্তে থাকবেন দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভান থিও।

সবরকম সংঘাত বন্ধে রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ এক মাসের জন্য অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেদেশের সরকার সেটি মানেনি।

ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

‘মহাবিপর্যয়কর’ অবস্থায় রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ মহাসচিব

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।