ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘বাঙালি সন্ত্রাসী আক্রমণে’ মর্মাহত মিয়ানমার সেনাপ্রধান!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
‘বাঙালি সন্ত্রাসী আক্রমণে’ মর্মাহত মিয়ানমার সেনাপ্রধান! সিনিয়র জেনারেল মিন ও সু চি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ফের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

তিনি উল্লেখ করেছেন, সহিংসতার জন্য দায় ‘বাঙালি সন্ত্রাসীদের আক্রমণের’, এতে মর্মাহত তিনি!

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সেনাপ্রধান এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে বলেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে যেসব সাধারণ মানুষ পালিয়েছেন তাদের সেটি উচিত হয়নি। তবে নানা সীমাবদ্ধতার ফলে যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাটতি ছিল।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, যেকোনো সন্ত্রাস রুখে দিতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করবে। তবে তার বাহিনীর দ্বারা হাজারো মানুষ হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগ পুরোপুরি এড়িয়ে যান তিনি। কেবলই বলেন, ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’। বক্তব্যে একবারও রোহিঙ্গা কথাটি তিনি বলেননি।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি যেমন রোহিঙ্গা শব্দ এগিয়ে গিয়ে মূল সমস্যা থেকে দূরে সরে বক্তব্য দেন, ঠিক একই সুর সেনাপ্রধানের। এমনকি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে ভাষণে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও-ও যেমন ভাসা ভাসা বক্তব্য তুলে ধরেন, এমনই রূপক বক্তব্য পাওয়া যায় সেনাপ্রধানের ভাষায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা বিশ্বই যখন বলছে, এটা গণহত্যা এবং তা সংগঠিত হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দ্বারা তখন এমন সব বক্তব্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল! 

সিনিয়র জেনারেল মিন অং বলেন, যারা নিজ ভূমি ছেড়ে যাচ্ছেন তাদের যাওয়া উচিত নয়। সেনাবাহিনী তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেবে। ইউনিয়ন সরকার এবং রাজ্য সরকার একসঙ্গে কাজ করে গ্রাম পুনর্বাসনের বিষয়ে সমন্বয় করবে।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী দাউ কিউ কিউ হলা। এছাড়া ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল কিউ সুই, সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী লে. জেনারেল হ্যাঁ অং, বিমানবাহিনী প্রধান খিন আং মিন্টসহ অন্যরা।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) বলছে, সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেও।

ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।