ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা ফেরানো নিয়ে মিয়ানমারের অতি হাস্যকর দাবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
রোহিঙ্গা ফেরানো নিয়ে মিয়ানমারের অতি হাস্যকর দাবি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জ্বালিয়ে দেওয়া একটি রোহিঙ্গা জনপদ। ছবি: সংগৃহীত

সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ থেকে বিতাড়িত করতে তাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালানো মিয়ানমার এখন উল্টো অতি হাস্যকর অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। চেপে বসা রোহিঙ্গা বোঝা সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ বারংবার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমারের দাবি, আন্তর্জাতিক অনুদান-সহায়তা পেতে ঢাকা-ই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর (কার্যত সরকারপ্রধান) অং সান সু চি’র মুখপাত্র জও হতাই মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানী নাইপিদোতে সাংবাদিকদের কাছে এমন হাস্যকর দাবি করেন। তার এই বক্তব্য বুধবার (১ নভেম্বর) প্রকাশ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’-এর প্রথম পাতার শীর্ষ প্রতিবেদনে।

সেই প্রতিবেদন থেকে এখন এই খবর দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের রয়টার্সসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যম।

জও হতাই দাবি করেন, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া যেকোনো সময় শুরু করতে প্রস্তুত মিয়ানমার। কিন্তু অন্যপক্ষ (বাংলাদেশ) তা এখনও গ্রহণ করছে না। সেজন্য প্রক্রিয়াটা বিলম্বিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা ফেরানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বড় বড় শিবির স্থাপন ও তাদের ভরণ-পোষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তহবিল দিচ্ছে বলে বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে অভিযোগ তুলে সু চি’র কার্যালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, এখন তারা ৪০ কোটি ডলার পেয়েছে। তাদের এই বিপুল অংকের অর্থপ্রাপ্তিতে শরণার্থী প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের বিলম্ব হয় কি-না, তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা।

বিভিন্ন সময়ে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবলীলার প্রেক্ষিতে সেখান থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কারও কারও হিসাব মতে, এ সংখ্যা ১০ লাখেরও কাছাকাছি। গত ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ শুরু হওয়ার পর এই দুই মাসেই বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার খাবার, স্বাস্থ্যসেবাসহ যাবতীয় ভরণ-পোষণে হিমশিম খেতে থাকা বাংলাদেশ বরাবরই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য নাইপিদোকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ঢাকার আহ্বানের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

এর মধ্যেই এমন হাস্যকর দাবি তুলে সু চি’র কার্যালয় সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব জও হতাই বলেন, তারা (বাংলাদেশ) আন্তর্জাতিক অনুদান পাচ্ছে। সেজন্য তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে কি-না, তা নিয়েই আমরা ভাবছি।

বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রাখাইনে ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়েছে ২৮৪টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম। সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মুখে মুখে এখন কেবল সেনাবাহিনীর ভয়াবহ বর্বরতার কথা।

যদিও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় এই সংকট নিয়ে শুরু থেকেই বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা ব্রিটিশ শাসনেরও আগে থেকে তৎকালীন আরাকান তথা বর্তমান রাখাইনে বসবাস করে এলেও তারা বলে আসছে, এই গোষ্ঠী ব্রিটিশ শাসনকালের ‘বাঙালি অনুপ্রবেশকারী’। আর ২৫ আগস্ট থেকে অভিযান চালানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে’।

রোহিঙ্গাদের ফেরানোর জন্য সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নাইপিদো সফর করে এলেও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, নভেম্বরের শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমারে গেলে অগ্রগতি দেখা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।