ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘ধূর্ত-হিংস্র’ শিয়াল রাশিয়ায় গৃহপালিত, কিন্তু কীভাবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
‘ধূর্ত-হিংস্র’ শিয়াল রাশিয়ায় গৃহপালিত, কিন্তু কীভাবে? গৃহপালিত শিয়াল, দেখতে অনেকটা কুকুরের মতোই, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মানবজাতির গোটা ইতিহাসে শিয়ালকে কেবলমাত্র ধূর্ত, হিংস্র আর খারাপ প্রাণী হিসেবেই দেখানো হয়েছে। রূপকথা, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্রজুড়ে আঁকা হয়েছে এর নেতিবাচক চরিত্র। কিন্তু সেই শিয়ালকেই কুকুর, বিড়ালের মতো লক্ষ্মী, আদুরে আর গৃহপালিত একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত করেছে রাশিয়া।

দেশটিতে অনেকেই এখন অন্য সব গৃহপালিত প্রাণীর জায়গায় শিয়ালকে বসিয়েছে। শিয়াল নিয়েই তাদের নাওয়া, খাওয়া, হাঁটা-চলা।

আর শিয়ালগুলোও হয়ে উঠেছে মানুষের নেওটা। কিন্তু কী করে রাশিয়া এমন সফলতা দেখালো?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রেডিও ফ্রি ইউরোপ জানাচ্ছে, এর জন্য ৬০ বছরব্যাপী কঠিন সাধনা করতে হয়েছে রাশিয়ার জেনেটিক বিজ্ঞানীদের। ধারাবাহিক গবেষণার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তারা বদলে ফেলেছেন শিয়ালের আগেকার জিনগত বৈশিষ্ট্য। আর এতে করেই আবির্ভাব ঘটেছে পোষ্য শিয়াল প্রজন্মের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ বছর আগে ১৯৫৯ সালে সাইবেরিয়া অঞ্চলের জীবকোষ ও জেনেটিক বিষয়ক ইনস্টিটিউট (আইসিজি) নভোসিবিরস্ককে জিনগত পরিবর্তন সাধনের মধ্য দিয়ে শিয়ালকে গৃহপালিত প্রাণীতে রূপান্তরের দায়িত্ব দেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। মূলত কুকুরের সঙ্গে জিনগত সাদৃশ্যের কারণেই শিয়ালকে বেছে নেওয়া হয়।

সেই যে শুরু, পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে শিয়ালের জিনগত পরিবর্তন। একপর্যায়ে আদিকালের বন্য আর চতুর বলে খ্যাত সেই প্রাণী বদলে যায় বন্ধুবৎসল, আদুরে, শান্ত শিয়ালে। এক টানা শ্রমের সফল পরিণতি হিসেবে এখন নভোসিবিরস্ক ইনস্টিটিউট নিয়মিতই পোষ্য শিয়াল সরবরাহ করছে।

এটিকে এক কথায় বিশাল এক সাফল্য হিসেবে দেখছেন নভোসিবিরস্ক ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা লুডমিলা ট্রুট। তিনি বলেন, আজকের কুকুরকে গৃহপালিত অবস্থায় পৌঁছাতে, কিংবা নেকড়েকে কুকুরের পর্যায়ে পৌঁছাতে হাজার হাজার বছর পাড়ি দিতে হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, গৃহপালিত কুকুরেরই বয়স ১২ থেকে ১৩ হাজার বছর। কিন্তু আমরা হাজার বছরে নয়, মাত্র কয়েক দশকে শিয়ালের মতো বাঘা এক প্রাণীকে গৃহপালিত বানিয়ে ফেলেছি।

সমস্ত রাশিয়াজুড়ে এখন অনলাইনে জমে উঠেছে গৃহপালিত শিয়ালের কেনা-বেচা। শুধু তা-ই নয়, এরই মাঝে এ জাতীয় বেশ কিছু শিয়াল যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও রপ্তানি করা হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এদের চাহিদা।

‘ইনারি’ নামে এরকমই এক শিয়ালের মালিক রুশ নারী ইউলিয়া সেখ্‌তমান। একে নিয়ে তার আহ্লাদের শেষ নেই। গৃহপালিত শিয়াল, ছবি: সংগৃহীত

ইনারিকে নিয়ে হাঁটতে বেরোনো ইউলিয়ার কাছে শিয়াল পোষার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, এটি খুব চমৎকার এক প্রাণী। এখন সারা বাড়িজুড়ে কুকুরের মতোই ও ঘুরে বেড়ায়। এ শিয়ালগুলোকে খুব সহজেই প্রশিক্ষিত করা যায়। সবচেয়ে দারুণ হলো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি কুকুরের চেয়েও ভালো। তবে পোষা শিয়ালের সঙ্গ উপভোগ করতে চাইলে এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। আপনার যদি প্রচুর সময় থাকে, তাহলে আপনি এরকম পোষ্য নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

‘ইনারিকে আমাদের সঙ্গে হাঁটার অভ্যাস করাতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু এখন ওকে একা বাড়িতে রেখে গেলেও কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। ’

এদিকে, কুকুর পালনে সংশ্লিষ্টরা পোষ্যপ্রাণী হিসেবে শিয়ালের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, এটি ‘ভালো’ ব্যাপার নয়।

আনা শিলিনা নামে নভোসিবিরস্ক শহরের কুকুরপ্রেমী এক নারী বলেন, শিয়াল আদিকাল থেকেই বন্যপ্রাণী। এরা নিশাচর হওয়ায় শুধু দিনে নয়, রাতেও জেগে থাকে আর শব্দ করে। কেউ যদি একে কোনো অ্যাপার্টমেন্টে লালনপালন করে, সেক্ষেত্রে শব্দের কারণে প্রতিবেশীদের ভুগতে হয়। তাহলে আপনাকে এর জন্য শব্দনিরোধী জায়গা বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া এগুলো সবসময়ই কিছু না কিছু করতে ব্যস্ত থাকে। সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে জাবর কাটতে থাকে।

তবে সমালোচনা যতোই হোক, দিন দিন মানুষের মাঝে এ জাতীয় শিয়ালের ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে। যদিও সবার কাছে বন্ধু হয়ে উঠতে আরও কিছু সময় লাগবে, কিন্তু কে না চায় ‘চতুর’ সেই শিয়ালকে ‘বোকা’ আর নেওটা বানিয়ে নিজের কোলের কাছে বসিয়ে রাখতে!

গৃহপালিত শিয়াল সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করতে পারেন

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এইচজে/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।