ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হিন্দি চাপিয়ে দিলে মানবো না, অমিত শাহকে রজনীকান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
হিন্দি চাপিয়ে দিলে মানবো না, অমিত শাহকে রজনীকান্ত

হিন্দি ভাষা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। অমিতের ওই মন্তব্য অ-হিন্দিভাষী রাজ্য বা অঞ্চলে এ ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিরোধিতাকারীরা। বিরোধীকণ্ঠের সেই মিছিলে এবার যোগ দিলেন মহাতারকা রজনীকান্ত। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, হিন্দি জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইলে কেউ (অ-হিন্দিভাষীরা) মানবে না।

জাতীয় হিন্দি দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার টুইটারে এক বার্তায় বলেন, হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। তাই জাতীয় ভাষা হোক হিন্দি।

চেন্নাইয়ে তামিল ভাষায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ‘সুপারস্টার’ রজনীকান্ত বলেন, ‘কোনো ভাষাই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এমন কোনো চিন্তা হলে তামিলনাড়ুতো নয়ই, দক্ষিণের কোনো রাজ্য তা মানবে না, এমনকি উত্তরাঞ্চলের অনেক রাজ্য-অঞ্চলও মেনে নেবে না। ’

ভক্তদের প্রিয় ‘থালাইবা’ বলেন, ‘একটি সাধারণ ভাষা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ভালো, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে সাধারণ ভাষা হিসেবে গণ্য করার ধারণা যথার্থ নয়। ’

ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভারত অনন্য। কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকলেও ভারতের দক্ষিণের অনেক অগ্রসর রাজ্য চলছে তাদের নিজস্ব ভাষায়ই। এমনকি উত্তর ও উত্তর-পূর্বের অনেক রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেখানকার নেতৃত্ব।

কিন্তু অমিত শাহের ওই মন্তব্যে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর নেতারা বলছেন, হিন্দিকে অ-হিন্দিভাষীদের ওপর চাপিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের চাল চলছে।

সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়। তিনি টুইট করে বলেন, ‘আমাদের দেশকে হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ করে তোলা সম্ভব বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটা একেবারেই অযৌক্তিক। ’

এর প্রতিবাদে সোচ্চার হন তামিলনাড়ুর আরেক অভিনেতা-রাজনীতিবিদ কমল হাসান। তিনি বলেন, ‘ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কেন্দ্রের। ’

এ ধরনের চিন্তায় ‘ভাষা-যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে হুঁশিয়ারি দিয়ে কমল হাসান বলেন, ‘ভারতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এখন কোনো শাহ, সুলতান বা সম্রাট সেই প্রতিশ্রতিকে ভাঙতে পারবেন না। ভাষার জন্য যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। ভারত বা তামিলনাডুর এমন যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সব ভাষাকেই সম্মান করি। কিন্তু মাতৃভাষা সব সময়ই তামিল থাকবে। ’

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজও কেন্দ্রের এ ধরনের চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে জনতাকে গর্জে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। নাগরিক সমাজের ৫০ জন প্রতিনিধি এক বার্তায় বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে এমনও দিন আসতে পারে, যেদিন আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে বিপন্ন হতে হবে। ’

প্রতিবাদীদের এই মিছিলে আছেন বাংলার কবি সুবোধ সরকার, কবি-গদ্যকার বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, আবৃত্তিকার ঊর্মিমালা বসু ও জগন্নাথ বসু, চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।