বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পুতিনের সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রস্তাবের পরপরই পদত্যাগ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ ও সরকার। আট বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মেদভেদেভ।
মেদভেদেভের পদত্যাগের তিন ঘণ্টা পরই দেশটির কর পরিষেবা প্রধান মিখাইল মিশুস্তিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন পুতিন। সংসদের বার্ষিক অধিবেশনে পুতিন জানান, প্রস্তাবিত সব সংশোধনী একসঙ্গে ভোটের জন্য পাঠাতে চান তিনি।
প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোতে যা রয়েছে:
সংসদকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে যেন আইন প্রণেতারা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মনোনীত করতে পারেন। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট এ কাজ করেন।
নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় সে পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা, যেন রাশিয়ার সংসদের উচ্চকক্ষ ফেডারেল কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
স্টেট কাউন্সিল বহাল রাখা, যা প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে হলে রাশিয়ায় অন্তত ১০ বছর বসবাস করতে হবে, এমন বিধান রয়েছে। তা বাড়িয়ে ২৫ বছর করার প্রস্তাব করা হলো। এটি একটি বড় পরিবর্তন। এর ফলে দীর্ঘদিন প্রবাসে বসবাস করেছেন এমন কেউ নির্বাচনের আগের ১০ বছর রাশিয়ায় থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করতে পারবেন না।
সংবিধানে যে কোনো পরিবর্তন আনার পর প্রেসিডেন্ট সেটি সই করার আগে, রাশিয়ার সাংবিধানিক আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আইন ওই পরিবর্তন সমর্থন করে কি-না।
রাশিয়ার আইনের ওপর আন্তর্জাতিক আইনকে প্রধান্য দেওয়া প্রতিরোধ করা। সরকারি কর্মচারীদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। ন্যূনতম বেতন ও পেনশন দারিদ্র্যসীমার ওপর নির্ধারণ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার চতুর্থ মেয়াদের সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর তিনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এমন সময় পুতিনের এসব সিদ্ধান্ত রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপ বিষয়ের প্রফেসর মার্ক গ্যালিওটি বলেন, পুতিন যদি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে চাইতেন, তাহলে সময়সীমা পরিবর্তন করে ক্ষমতায় বহাল থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার আগে তিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনতে চাইছেন যেন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কিছুটা কমে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের ক্ষমতা কিছুটা বাড়ে। সেই সঙ্গে স্টেট কাউন্সিলের অংশ হয়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও রাশিয়ার ‘জাতির পিতা’র ভূমিকায় রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বহাল রাখতে পারেন পুতিন।
তিনি নিজেই বলেছেন, সংসদের ক্ষমতা এবং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা বাড়াতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা না বাড়ালেও রাজনীতিতে নিজের প্রভাব ধরে রাখার জন্য এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন পুতিন। কারণ এ পরিবর্তনগুলো রাশিয়ার সংসদ ব্যবস্থা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, আইন প্রণয়নসহ সবকিছুতেই বড়সড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যা দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন পুতিনকে প্রাসঙ্গিক করে রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
এফএম