ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘উইচ্যাটে’ সতর্ক করা সেই চীনা চিকিৎসক মারা গেছেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
‘উইচ্যাটে’ সতর্ক করা সেই চীনা চিকিৎসক মারা গেছেন ‘উইচ্যাটে’ সতর্ক করা সেই চীনা চিকিৎসক মারা গেছেন

এই তো খুব বেশি দিন না। গত ৩০ ডিসেম্বরের কথা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে কর্মরত এক চিকিৎসক চীনা ম্যাসেজিং অ্যাপ ‘উইচ্যাটে’ তার মেডিক্যাল স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের গ্রুপে নতুন করোনা ভাইরাস বিষয়ে সতর্ক করেন। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে লি ওয়েনলিয়াং নামে ওই চিকিৎসককে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয়। অথচ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াকে কেন্দ্র করে চীনা সরকারের রোষানলে পড়া সেই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার(০৭ ফেব্রুয়ারি) উহানেই মারা গেছেন তিনি। ওয়েনলিয়াংকে উহানের একটি হাসপাতালে ১২ জানুয়ারি ভর্তি করা হয়।

তবে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস তার শরীরে বাসা বাধে ১ ফেব্রুয়ারি। করোনা ভাইরাস লির দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

লি একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। কর্মরত ছিলেন উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। ডিসেম্বরে সাত ব্যক্তির শরীরে তিনি নতুন এই ভাইরাসটি শনাক্ত করেন এবং ভেবেছিলেন এটা সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে, যেটা ২০০৩ সালে দেখা গিয়েছিল।

তখন ধারণা করা হয়েছিল, এ ভাইরাসটির উৎপত্তি উহানের হুনান শহরের একটি সামুদ্রিক বাজার থেকে এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত ওই সাত রোগীকে তার হাসপাতালের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।

এতে বলা হয়, উইচ্যাটে সতর্ক করে লি ওয়েনলিয়াং জানান, উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ‘সার্সের মতো’ রোগে আক্রান্ত হয়ে সাত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের পৃথক স্থানে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

লি বলেন, আমি একটা টেস্ট দেখে বুঝতে পারি এটি এক ধরনের করোনা ভাইরাস। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সতর্ক করতে আমি ওই মেসেজ লিখেছিলাম।

তারপর ওই মেসেজটি স্ক্রিনশট আকারে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেখানে তার নামটিও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল। এতে বিপদে পড়েন ৩৪ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনে উহান পুলিশ।

ওই দিনই উহান মিউনিসিপাল হেলথ কমিশন থেকে এক জরুরি বার্তায় জানানো হয়, সি-ফুড মার্কেট থেকে আগত ওই সাত রোগীর ‘অজ্ঞাত নিউমোনিয়া’ ছিল। একই সঙ্গে সতর্ক করে জানানো হয়, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি চিকিৎসার তথ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে পারবেন না।

পরে ৩১ ডিসেম্বর উহানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জরুরি সভা হয়। সভার পর নতুন করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সবাইকে জানায় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়। কিন্তু তারপরও লি রেহাই পাননি।

৩ জানুয়ারি ‘অনলাইনে গুজব ছড়ানো ও সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত করার’ অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ তাকে থানায় তলব করে। ‘বেআইনি’ কাজের কথা স্বীকার করে এবং আর কোনো আইনবিরোধী কাজ না করার অঙ্গীকার করে এক ঘণ্টা পর থানা থেকে বের হন লি।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিনগুলোতে যেসব চিকিৎসক এ নিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন, তাদের অনেকেই পুলিশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন। লি তাদেরই একজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এমআইএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।