মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোড়া, অগ্নিসংযোগ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবারও (১৪ ফেব্রুয়ারি) চাঁদবাগ এবং কারোয়াল নগর এলাকাতেও একই ছবি দেখা গেছে। এ দু’টি জায়গায় এদিন নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে ও বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেনা নামানোর জল্পনা খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাদের তরফে বলা হয়েছে, যথেষ্ঠ পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শান্তি রক্ষার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, গুজব ছড়ানো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনটাই জানা গিয়েছে। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লি পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন হাতে লাঠি নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায় ভজনপুরায়। অল্প সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
সংলগ্ন এলাকা চাঁদবাগেও পদক্ষেপ নিতে রাজি হননি সেখানে মোতায়েন থাকা অল্প সংখ্যক পুলিশ কর্মী। সেখানে পাথর ছোড়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক দোকান। সোমবার দিনগত রাতে বিল্ডিং থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। গোকুলপুরীতে টায়ারের বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাতে অস্ত্র এবং লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালানো হয়।
কোনো রকম প্ররোচণামূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বলা হয়েছে, যাতে কোনো অসামাজিক ব্যক্তি পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে না পারে তার জন্য উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানা ও দিল্লির সীমানার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
নতুন করে উত্তরপূর্ব দিল্লির কারোয়াল নগর, মৌজপুর, ভজনপুরা, বিজয় পার্ক এবং যমুনা বিহার থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। মৌজপুরের মতো সংলগ্ন এলাকায় পাথর ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। জরুরি ফোনের জন্য আরও ব্যবস্থা করেছে দমকল বাহিনী। সোমবার তিনজন দমকলকর্মী আহত হওয়ার পর, সেখানেও বেশ কয়েকবার ফোন ধরেননি কেউই। একদল ব্যক্তি, দমকলের একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আরেকটিতে পাথর ছোড়ে।
মৌজপুরে, মঙ্গলবার সকালে ই-রিকশায় যাচ্ছিলেন কয়েকজন, তাদের সামগ্রিক লুট করে নেওয়া হয়েছে। তাদের মারধরও করা হয়। গোকুলপুরিতে সোমবার রাতে একটি টায়ারের বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কথা তুলেছেন তিনি এবং যাতে পুলিশ কাজ করে, সেই মতো ব্যবস্থা নিতেও আর্জি জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, শীর্ষমহল থেকে নির্দেশ পাওয়ায়, কোনো কাজ করছেন না পুলিশ কর্মীরা। আমি অমিত শাহজীর সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরব। শীর্ষ মহল থেকে নির্দেশ না পেলে, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হবে নাকি, লাঠিচার্জ করা হবে।
দিল্লি পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে রয়েছেন ১ হাজার কর্মী। যাদের দিল্লির হিংসা কবলিত এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আন্তরাজ্য সীমানার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান আধিকারিকরা। অতিরিক্ত ৩৫ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
১০০ জন আহতের মধ্যে রয়েছেন ৪৮ জন পুলিশকর্মী। তাদের অনেকজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ হিংসার ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপন করার আর্জি জানিয়েছেন। হিংসার ঘটনা নিয়ে ট্যুইটারে সতর্কবার্তা দিয়েছে যোগেন্দ্র যাদব।
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, যেহেতু এই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে আসছেন, সেই সময় প্রচারের জন্য কেউ নিজেদের প্রচারের জন্য এই অশান্তি ‘সংগঠিত’ করেছে।
হিংসার কারণে, মঙ্গলবার, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিল্লি সরকারের তরফে। জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরি, জোহরি এনক্লেভ এবং শিববিহারে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
১৪৪ ধারায় উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) পড়ুয়াদের সংগঠনের তরফে বিক্ষোভ মিছিল করায় দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এমএইচ/এসআরএস