রোববার (১ মার্চ) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মালয়েশিয়ার রাজপ্রাসাদে দেশটির অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ৭২ বছর বয়সী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, মাহাথিরের অবর্তমানে পিপলস জাস্টিস পার্টির আনোয়ার ইব্রাহীমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও শেষমেশ তেমনটি ঘটেনি।
খবরে জানানো হয়, ক্ষমতায় বসতে গিয়ে মুহিউদ্দিন প্রথমত মাহাথির ও তার সাবেক জোট 'অ্যালায়ান্স অব হোপ'র (পাকাতান হারাপান) মিত্রদের ত্যাগ করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে মুহিউদ্দিন যাতে নিজের সাবেক দল 'ইউনাইটেড ন্যাশন্যাল অর্গেনাইজেশন'র (ইউএমএনও) সঙ্গে হাত মেলাতে না পারেন, শক্ত হাতে তা রুখে দেন মাহাথির। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই ইউএমএনও-কেই ক্ষমতাচ্যুত করে মাহাথির-মুহিউদ্দিন জোট।
১৯৪৭ সালের ১৫ মে মালয়েশিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম মুহিউদ্দিনে ইয়াসিনের। তার বাবা মুহাম্মদ ইয়াসিন মুহাম্মদ ছিলেন দেশটির জোহর প্রদেশের স্বনামধন্য একজন ওলামা। মুহিউদ্দিন 'ইউনিভার্সিটি অব মালয়' থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে করপোরেট সেক্টরে যোগ দেন ও ধীরে ধীরে রাজনীতিতে জড়ান।
১৯৭২ সালে নুরানি আব্দুল রহমানকে বিয়ে করেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। এর আগের বছরই জোহর প্রদেশের ইউএমএনও দলের সদস্য হিসেবে নিজের নাম লেখান তিনি। মুহিউদ্দিন-নুরানি দম্পতির ৪ সন্তান ও ৬ নাতি-নাতনি রয়েছে। তাদের ৪ সন্তানের মধ্যে ২ জন কণ্ঠশিল্পী। তাদের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজও আছে।
১৯৮৬ সালে সিঙ্গাপুর সীমান্তলগ্ন জোহর প্রদেশের চিফ মিনিস্টার হন মুহিউদ্দিন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তাকে ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন মাহাথির। তার তত্ত্বাবধানেই ১৯৯৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক দেশ হয় মালয়েশিয়া।
কালে কালে নিজ দল ইউএমএনও ও সরকারের মধ্যে উত্থান ঘটতে থাকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের। ২০০৯ সালে তিনি দলের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেবারে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নাজিব রাজ্জাক। ওই একই বছর মালয়েশিয়ার ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন নাজিব। ইউএমএনও ছাড়াও আরেক রাজনৈতিক দল 'ন্যাশন্যাল ফ্রন্ট কোয়ালিশন'র ডেপুটি চেয়ার ও ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিউদ্দিন।
টানা ৮ বার জোহর প্রদেশের পাগোহ সংসদীয় এলাকা থেকে নিম্ন কক্ষের সদস্য নির্বাচিত হন এ নেতা।
এদিকে নাজিব রাজ্জাক প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মুহিউদ্দিন। এরপর নাজিবের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত 'ওয়ানএমডিবি' দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বিরোধীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তার সমালোচনা করতে দেখা যায় মুহিউদ্দিনকে। সে সময় মন্ত্রীসভায় রদবদল করে তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন নাজিব। ২০১৬ সালে নাজিবের বিরুদ্ধে আয়োজিত মাহাথির মোহাম্মদের এক সমাবেশে যোগ দেওয়ার কারণে ইউএমএনও থেকে বের করে দেওয়া হয় মুহিউদ্দিনকে।
এরপর ২০১৭ সালে মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে 'বেরাসতু' জোট গড়েন মুহিউদ্দিন। এই জোট পরবর্তী সময়ে সাবেক বিরোধীদলগুলোর আরেক জোট 'অ্যাল্যায়ান্স অব হোপ'র সঙ্গে যোগ দেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর এ জোটই 'ন্যাশন্যাল ফ্রন্ট'কে ধরাশায়ী করে ক্ষমতায় বসে। সরকার গঠনের পর মুহিউদ্দিনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের কিছুদিন পরই অগ্ন্যাশয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের টিউমার ধরা পড়ে মুহিউদ্দিনের। সে সময় তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি অনেকটাই সেরে উঠেছেন। তারপরও নিয়মিতই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাতায়াত করতে হয় তাকে।
এর আগে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ডোমেস্টিক ট্রেড ও কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স, কৃষি ও কৃষিখাত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প এবং শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২০
এইচজে