দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের হাজার হাজার ধনকুবের করোনা ভাইরাসের ভয়ে উন্নত পরীক্ষা ও আগাম চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করছেন। ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে তারা গোপনে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করাচ্ছেন।
কেউ কেউ ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া করে ছুটছেন নির্জন শৈল-নিবাস বা বিনোদন কেন্দ্রে।
অনেকেই চিকিৎসক ও নার্সের বহর নিয়ে পরিবারসহ নিরাপদ দেশে সটকে পড়ছেন। যাদের পরিবারে বয়স্ক মানুষ আছেন, তাদের দৌড় আরও বেশি। কারণ বয়স্করাই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
লন্ডনের হার্লি স্ট্রিটের খ্যাতনামা এক ক্লিনিকের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ধনকুবেররা যেভাবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন, তা ব্রিটেনের বেঁধে দেওয়া নীতিমালার মধ্যে সম্ভব নয়। তাই তাদের উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য-ভোক্তাদের সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা ব্রিটেনের বাইরে অন্য কোনও দেশে করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথবা তাদের মেডিক্যাল স্যাম্পল অন্য দেশ থেকে পরীক্ষা করে আনা হচ্ছে।
আতঙ্কিত ধনকুবেররা কেবল পরীক্ষাই করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। অনেকেই কোভিড-১৯’এর টিকার জন্যও বায়না ধরেছেন। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস ঠেকাতে কার্যকর কোনও টিকা বের হয়নি।
হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকের প্রধান নির্বাহী ও মেডিক্যাল ডিরেক্টর মার্ক আলি জানিয়েছেন, ধুনকুবেরদের চাহিদার আর চাপের মুখে ফ্লু ঠেকানোর প্রচলিত টিকা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে জীবন যাত্রার পরিবর্তন নিয়ে বিশদ আলোচনা ও সুপারিশ করা হচ্ছে।
তবে ইউরোপ আমেরিকার টাকাওয়ালা লোকজন কিছুতেই খুশি হতে পারছেন না। তাদের আতঙ্ক থামছে না। আর এ কারণে কিছু ব্যয়বহুল ক্লিনিক প্রচুর টাকার বিনিময়ে তাদের কথিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চিকিৎসা দিচ্ছে।
ইংল্যান্ডের প্রাইভেট জেট বুকিং সার্ভিস ‘প্রাইভেটফ্লাই’ জানিয়েছে, করোনা ছড়িয়ে পড়ায় হঠাৎ করেই তাদের ব্যবসা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ধনকুবের ও তাদের পরিবারের লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে আমরা খুব ব্যস্ত। কারণ তারা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। করোনা সংক্রমণের ভয়ে তারা প্রাইভেট জেটই পছন্দ করছেন। তিনি জানান, ধনকুবেররা ব্রিটেনের বাইরে ইউরোপের যেসব দেশে এখনও করোনা পৌঁছেনি সেখানে চলে যাচ্ছেন। ব্রিটেনে করোনা ভাইরাস মহামারীতে রূপ নিতে পারে মনে করে তারা আতঙ্কগ্রস্ত।
ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ভিবোস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী রবার্ট ভিসিনো জানান, করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ার পর এ ধরণের কেন্দ্রের বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত খোঁজখবর নেয়ার বিষয়টিও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
ভিবোর কোনো কোনো বাংকার বা আশ্রয়কেন্দ্র মাটির নিচে ১৫তলা পর্যন্ত বিস্তৃত। আর তাতে পাঁচ হাজার মানুষ বাস করতে পারে। সেখানে ধনকুবেরদের বিনোদনের জন্য সুইমিংপুল, বার, খেলার জায়গা সবাই আছে।
আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশে শীতল যুদ্ধের সময় নির্মিত বাঙ্কারকে ৮০ ব্যক্তির বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। এ ছাড়া সাউথ ডাকোটাতে পরিত্যক্ত ৫৭৫টি বাঙ্কার বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এ সব বাঙ্কার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে অস্ত্রাগার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। ধনকুবেররা এসব বাঙ্কার ভাড়া নেওয়ার জন্য ছুটছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২০
এজে